ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হুথিদের তিন ডজন স্থাপনায় যৌথ হামলা

হুথিদের তিন ডজন স্থাপনায় যৌথ হামলা

যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে হুথিদের ওপর তৃতীয় দফার যৌথ হামলা চালিয়েছে। লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় এ হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলায় সমর্থন দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডা, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ড। একটি যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ইয়েমেনের ১৩ টি লোকেশনের ৩৬টি টার্গেটে এ হামলা চালানো হয়। এর লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ‘অস্ত্র মজুত কেন্দ্র, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং লঞ্চার, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও রাডার’ এ হামলা চালানো হয়েছে। হুথিবিরোধী জোটের মতে, তারা উপকূলীয় ড্রোন কন্ট্রোল কেন্দ্রও এতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা সেক্রেটারি গ্রান্ট শ্যাপস বলেছেন, নতুন এ হামলা ‘তীব্রতা বৃদ্ধি নয়’ এবং হুথিদের ক্ষমতাকে আরো অবনমিত করার বিদ্যমান মিশনেরই একটা অংশ।

গত রোববার ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া গ্রুপের জর্ডানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক ছাউনিতে ভয়াবহ ড্রোন হামলার প্রতিক্রিয়ায় সিরিয়া ও ইরাকের বিভিন্ন টার্গেটে যুক্তরাষ্ট্র হামলা করছে। একদিন পর শনিবার রাতে ইয়েমেনে হুথি স্থাপনায় এ হামলা হলো। যুক্তরাষ্ট্রের ইস্টার্ন অ্যাফেয়ার্সবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডেভিড শ্যাঙ্কার ইয়েমেনে হুথিদের ওপর হামলার বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ অঞ্চলের বর্তমান ল্যান্ডস্কেপের কথা উল্লেখ করে শ্যাঙ্কার বলেছেন, সুয়েজ খালে জাহাজের ট্রাফিক ৫০ শতাংশ কমে গেছে। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, হুথিদের বিষয়ে অবশ্যই কিছু করতে হবে। এটা শুরুমাত্র। কিন্তু ইরানকে উল্লেখ করে শ্যাঙ্কার আরো বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু প্রক্সির পেছনে যেতে পারে না এবং এমনকি পৃষ্ঠপোষকদের পেছনেও যেতে পারে না। এখন পর্যন্ত সিরিয়া, ইরাক এবং ইয়েমেনে মিলিশিয়া ও এর সহযোগী গ্রুপগুলোর ওপর হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ইরানের কোনো এলাকায় হামলা চালানো হয়নি। এর আগে শুক্রবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমাদের পাল্টা জবাব আজ শুরু হয়েছে। এটা সময় ও স্থান পছন্দের ভিত্তিতে চলমান থাকবে। যদিও এর আগে ইরান মার্কিন ঘাঁটিতে হামলায় যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করেছে এবং বলেছে তারা রেজিস্ট্যান্স গ্রুপগুলোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত নয়। এর আগে ২৮ জানুয়ারি সিরিয়ায় জর্ডান সীমান্তের কাছে এক মার্কিন ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিনজন সেনা নিহত হয়। আহত হয় অন্তত ১২ জন। সে সময়ই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, ইরান সমর্থিত কট্টর জঙ্গিগোষ্ঠী এ হামলা চালিয়েছে এবং এর জবাব দেওয়া হবে। সিরিয়া সীমান্তের কাছে উত্তর-পূর্ব জর্ডানের রুকবানে এ ড্রোন হামলা হয়েছে। পরে এ বেইজের নামকরণ টাওয়ার ২২ করে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। প্রতিক্রিয়ায় ৩ ফেব্রুয়ারি সিরিয়া এবং ইরাকের ৮৫টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি জর্ডানে তাদের এক সামরিক স্থাপনায় ড্রোন হামলার প্রতিশোধ হিসেবেই এ পাল্টা হামলা চালিয়েছে। কন্টেইনার ঘাঁটিতে মনুষ্যবিহীন এ ড্রোন হামলায় ৪০ জনের বেশি সামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। হামলার সময় ‘টাওয়ার ২২’-তে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলো বন্ধ রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। যখন একটি মার্কিন ড্রোন সেনাঘাঁটির দিকে ফিরে আসছিল, তখনই হামলাকারী ড্রোনটিও আঘাত হানে। তারা আরও জানিয়েছেন, কোনো সতর্কতা ছাড়াই যখন ড্রোন হামলা হয়, সৈনিকেরা তখন তাদের বিমান ছাউনিতে ঘুমানোর কোয়ার্টারে ছিল। এ হামলায় সন্দেহভাজন গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইরান।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি জানিয়েছেন, প্রতিরোধ দলগুলো কীভাবে ফিলিস্তিনিদের বা নিজেদের ভূখণ্ডকে রক্ষা করবে, সে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঙ্গে তারা যুক্ত নয়। ইরাকের ইসলামি রেজিস্ট্যান্স এ হামলা ঘটিয়েছে বলে দাবি করেছে। ২০২৩ সালে ইরাকভিত্তিক এ সশস্ত্র আমব্রেলা গ্রুপের আবির্ভাব ঘটে। যার সঙ্গে ইরানি মিলিশিয়াদের সম্পৃক্ততা আছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর ওপর সাম্প্রতিক হামলাগুলোর দায় তারা স্বীকার করেছে। এক বিবৃতিতে এ গ্রুপ জানিয়েছে, তারা সিরিয়াতে শাদ্দাদি, তানফ এবং রুকবানে যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি ঘাঁটি টার্গেট করেছিল। যদিও রুকবান সিরিয়ার পার্শ্ববর্তী জর্ডান সীমান্তে পড়েছে। এ গ্রুপটি আরো বলেছে, তারা ভূমধ্যসাগরে একটি ইসরায়েলি তেলের স্থাপনাকেও টার্গেট করেছিল।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর ওই অঞ্চলে এই প্রথম কোনো মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর মতে, এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে আরও হামলা হয়েছে, কিন্তু রোববারের আগে কোনো প্রাণহানি হয়নি। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৭ অক্টোবর থেকে ইরাক এবং সিরিয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সাইটগুলোতে ১৬৫ বার হামলা হয়েছে। গত মাসে উত্তর ইরাকের একটি ঘাঁটিতে তাদের তিন সেনা নিহত ও একজন গুরুতর আহত হওয়ার পর ইরান সমর্থিত এ দলগুলোর বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। জানুয়ারির শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় বাগদাদে এক মিলিশিয়া নেতা নিহত হন। যিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত