ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জাতীয় উত্তরণে করণীয়

জাকারিয়া মাহমুদ
জাতীয় উত্তরণে করণীয়

পৃথিবীর বাতাসে কান পাতলে শোনা যায়, সম্ভ্রমহারা মুসলিম বোনের গগণফাটা চিৎকার। ইজ্জত নিলামে ওঠা মায়ের বুকফাটা আর্তনাদ। নাকে আসে শুধু রক্তের গন্ধ। আকাশের দিকে দৃষ্টি মেলে মেঘের চাঁদোয়ায় দেখা যায় কুণ্ডুলি পাকিয়ে আছে ধোঁয়া। এ ধোঁয়া অন্য কিছুর নয়, আমাদেরই মতো কোনো আদম সন্তানের অগ্নিদগ্ধ সত্তা বা পুড়ে ভস্ম হওয়া তিলে তিলে গড়ে তোলা বাসস্থানের। পৃথিবীর যেদিকে তাকানো হয়, শুধু দেখা যায় নির্যাতন ও নিপীড়নে পিষ্ট মুসলিম। সেের্বাত তারা নিষ্পেষিত পদে পদে লাঞ্ছিত অপমানিত। ফিলিস্তিনের সঙ্গে আছে মুসলমানের রক্তের সম্পর্ক। কারণ, এ ভূমিতে রয়েছে অসংখ্য নবী-রাসুলের পদচিহ্ন। আছে প্রথম কেবলা বাইতুল মাকদিস। এ বরকতময় ভূমির মানুষগুলো সুখ-শান্তি ও বরকতের দরিয়ায় থাকত প্লাবিত। কিন্তু এক দশক ধরে তারা নির্যাতিত নিষ্পেষিত। আজাদির লড়াইয়ে তারা আজ সর্বহারা। দখলদার অভিশপ্ত ইহুদিদের হাতে মার খাচ্ছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম রক্ত ঝরছে। লাশের পাহাড় আকাশ ছুঁয়েছে। এ মৃত্যুর মিছিলের যেন ইতি নেই। এমতাবস্থায় মুসলিম উম্মাহর মুক্তির পথ, উত্তরণের উপায় এবং আত্মসমালোচনা দ্বারা গৌরবোদীপ্ত চেতনা ধারণ করা জরুরি।

আত্মমর্যাদা বোধের বিসর্জন : আত্মমর্যাদাবোধ অত্যাবশ্যকীয় গুণ। এ গুণের বলে বিড়াল বাঘের ভূমিকা পালন করতে পারে। আর যদি বাঘ হয়, তাহলে এ গুণের অনুপস্থিতিতে বাঘ দিয়ে ইঁদুর শিকারের কাজটাও সারে না। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ আজকের নির্যাতিত মুসলিম উম্মাহ।

ঐক্যের বন্ধন ছিন্নকরণ : উম্মাহর প্রাবল্যতা, জয়, ও আপসহীনতার পেছনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে ঐক্য। এ এক অনস্বীকার্য শক্তি। কিন্তু মুসলিমদের মাঝে একদম অনুপস্থিত। পরস্পরে বিচ্ছিন্ন। অথচ আল্লাহতায়ালা বিচ্ছিন্ন হতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। (সুরা আলে ইমরান : ১০৩)। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর সাহায্য দলবদ্ধ জামাতের ওপর।’

ইসলামের প্রতি বিমুখতা প্রদর্শন : বান্দা যখন ইসলাম থেকে বিমুখ হয় বা দূরে সরে যায়, তখন আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সাহায্যের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনরা! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা সুদৃঢ় করে দেবেন।’ (সুরা মুহাম্মদ : ৭)। বস্তুত আল্লাহর সাহায্য মানে তার দ্বীনের সাহায্য করা বা দিন পালন করা।

দুনিয়ার মুহাব্বত ও মৃত্যুর ভয় : রাসুল (সা.) বলেন, ‘এমন একটা সময় আসবে, যখন মুসলমানরা কাফেরদের মোকাবিলায় খড়-কুটোর ন্যায় ভেসে যাবে।’ সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ‘তখন কি তারা সংখ্যায় কম হবে?’ নবীজি (সা.) উত্তরে বললেন, ‘না। তারা সংখ্যায় অনেক বেশি হবে। কিন্তু তাদের অন্তরে দুনিয়ার মহব্বত ও মৃত্যুর ভয় ঢুকে যাবে।’

ভাতৃত্ববোধ ও ভ্রাতৃপ্রেমের অভাব : আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের ভাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে দিয়েছেন। (সুরা হুজুরাত : ১০)। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ততক্ষণ মোমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ নিজের জন্য যা পছন্দ করো, অপর ভাইয়ের জন্য তা পছন্দ করবে।’ (বোখারি : ১৩০, মুসলিম : ৭৭)।

পরস্পরের দ্বন্দ্ব-সংঘাত : ভ্রাতৃত্বপ্রেম না থাকার চূড়ান্ত রূপ হচ্ছে এ দ্বন্দ্ব-সংঘাত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য কর। পরস্পরে ঝগড়া করো না। তাহলে তোমরা সাহসহারা হয়ে যাবে।’ (সুরা আনফাল : ৪৬)।

বিলাসিতায় লিপ্ত থাকা : আল্লাহতায়ালা দুনিয়ার উদাহরণ পানি দ্বারা দিয়েছেন। (সুরা কাহফ : ৪৫)। সুতরাং পানি যেমন অপরিমিত হলে অনোপকারী। পরিমিত হলে উপকারী। পানি যেমন অপরিমিত হলে ধ্বংস হবে। তদ্রূপ প্রয়োজনের বাইরে দুনিয়ায় মুছে যাওয়া ধ্বংসের দ্বার উন্মোচনকারী।

অধিকার আদায়ে লড়াই বর্জন : মুসলমানদের জিহাদ ছেড়ে দিয়ে শান্তির পথ বেছে নেয়ার সুযোগ নেই। (সুরা তওবা : ৩৯)।

যোগ্য ও আদর্শবান নেতৃত্বের অভাব : আল্লাহতায়ালার নিয়ম হলো, মোনাফেক ও ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীদের হাতে উম্মাহর বিজয় দেন না। (সুরা ইউনুস : ৮১)।

শত্রুর সঙ্গে বন্ধুত্ব : অমুসলিমরা যতই হামদর্দি ভাব দেখায়, তারা কখনোই কল্যাণকামী ও বন্ধু হতে পারে না। আর আল্লাহতায়ালা কোরআনে ?তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। (সুরা মায়িদা : ৫১)। সুতরাং গাফলতের সুখনিদ্রায় বিভোরে থাকার সময় শেষ। সময় এসেছে কোরআন-সুন্নাহর শাশ্বত পথপন্থা আঁকড়ে ধরে জেগে ওঠার; বিশ্ব মুসলিমদের করুণ পরিণতির প্রতিকার বিধান বাস্তবায়ন করার এবং ইসলামের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত