যুদ্ধবিরতিতে ইসমাইল হত্যার প্রভাব

প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

সশস্ত্র ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়েকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, তার উত্তর খোঁজা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্ত ইঙ্গিত করছে, তেহরানের যে বাড়িতে তিনি ও তার দেহরক্ষী অবস্থান করছিলেন, সেখানে একটি রকেট আঘাত হানে। এখন সমস্ত সন্দেহের তীর ইসরায়েলের দিকে। কারণ, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলা চালানোর পর ইসরায়েল সব হামাস নেতাকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়ার শপথ নিয়েছিল। হামাসের ওই হামলায় প্রায় ১২০০ ইসরায়েলি ও বিদেশি নিহত হন। মনে করা হয়, ইসরায়েল ইরানের আকাশসীমার বাইরে থেকে লক্ষ্যবস্তুগুলোর দিকে রকেট ছুঁড়েছিল। এ হামলার বিবরণ ধীরে ধীরে প্রকাশিত হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রভাবও ক্রমশই আলোচিত হচ্ছে।

এ হত্যাকাণ্ডের প্রভাব গিয়ে পড়বে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে চলমান আলোচনার ওপরও। ইসমাইল হানিয়ে হয়তো গাজার প্রতিদিনের ঘটনাগুলোতে ভূমিকা পালন করতে পারেননি। কিন্তু হামাসের নির্বাসিত নেতা হিসেবে তিনি কাতার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মিশরের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। গাজার প্রতিদিনের ঘটনাবলি পরিচালনার দায়িত্ব ছিল হামাসের সামরিক শাখার কমান্ডার ইয়াহইয়া সানওয়ারের ওপর। মার্কিন কর্মকার্তারা সম্প্রতি বলেছিলেন, যুদ্ধবিরতির আলোচনা শীঘ্রই শেষ হতে পারে। যদিও গত সপ্তাহের শেষে রোমে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এর কোনো অগ্রগতি হয়নি। ইসমাইল হানিয়ের হত্যার পর এ আলোচনার কোনো অগ্রগতি হবে, এটি কল্পনা করা খুব কঠিন। এসব ইস্যুর কারণে কিছু প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। যেমন- সকলের ধারণা অনুযায়ী, এটা যদি ইসরায়েলি আক্রমণ হয়, তবে এখন কেন এ হামলা চালানো হলো? হামাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত কারো বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছার বাইরে ইসরায়েলের লক্ষ্য আর কী ছিল?

তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ অঞ্চলের অনেক গোষ্ঠী এবং দেশের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া একত্র করেছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, আবারও এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের শান্তি অর্জনের কোনো ইচ্ছা নেই। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সদর দপ্তর রামাল্লাতে ইসমাইল হানিয়ে হত্যার খবর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতাসীন ফাতাহ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল সাবরি সায়েদাম গণমাধ্যমকে বলেন, এ ঘটনাটি নরকের দরজা খুলে দেবে। মি. সায়েদাম বলেন, তিনি একই সঙ্গে বিস্মিত হচ্ছেন এবং ক্রোধ অনুভব করছেন। ইসরায়েল শুধু ইসমাইল হানিয়ের জীবনকেই নিশানা করেনি, তারা ইরানের বিভিন্ন চুক্তিকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে। তিনি আরো বলেন, শত্রুতার শেষ দেখার জন্য ইসরায়েল সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষাকেও হত্যা করেছে।

ফাতাস ও হামাস দীর্ঘকাল ধরে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু হামাস নেতার মৃত্যুতে ফাতাহর উপকৃত হওয়ার বক্তব্যকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন মি. সায়েদাম। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের রাজনীতিতে কখনও এমন বিশ্বাস ছিল না, নেতৃত্বকে নির্মূল করা হলো অগ্রগতির একমাত্র মাধ্যম। এর যদি কোনো প্রভাব থাকেই, তবে তা কেবল আরও বেশি উত্তেজনা ও অসন্তোষ। এদিকে রামাল্লা ও পশ্চিম তীরে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সেখানে দোকানপাট সব বন্ধ এবং প্রতিবাদ মিছিল চলছে। রামাল্লায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের জন্য এটি কঠিন সময় হতে পারে। সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, ইসমাইল হানিয়ে মাহমুদ আব্বাসের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছিলেন। হানিয়েকে যে সময়ে হত্যা করা হয়েছে, তা নির্দেশ করে, এটি বৃহত্তর ইসরায়েলি প্রতিশোধের অংশ। কারণ, শনিবার হেজবুল্লাহর রকেট হামলার জন্য ইসরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমিতে ১২ জন শিশু ও কিশোর নিহত হয়েছে। এরপর মঙ্গলবার বৈরুতে হেজবুল্লাহর একজন সিনিয়র কমান্ডারকে হত্যা করা হয়েছে। সে সময়ই ইসরায়েল সতর্ক করেছিল, তারা ওই হামলার কড়া জবাব দেবে।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ক্রমাগত বলছেন, ইরান হলো মধ্যপ্রাচ্যের তথাকথিত অ্যাক্সিস অব রেসিসট্যান্সের সংযোগস্থল। এ তথাকথিত অক্ষশক্তির অংশগুলো হলো লেবাননের হেজবুল্লাহ, গাজা ও পশ্চিম তীরের হামাস এবং ইয়েমেনের হুথিরা। বৈরুতে হেজবুল্লাহকে আঘাত করার পর (এবং সম্প্রতি হোদেইদাতে হুথিদের ওপর হামলার পর) ইরানে হামাস প্রধানের এ হত্যাকাণ্ড সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ও ইরানি সমর্থকদের জন্য শক্তিশালী বার্তা। যা অনেকটা এ রকম, তুমি যেখানেই থাক, ইসরায়েল পারে এবং তোমার কাছে আসবে।