কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বাংলাদেশে সহিংসতা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২২ জন সেনেটর ও কংগ্রেসম্যান। চিঠিতে তারা বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ছাত্রদের বিক্ষোভ দমনে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করেছে। সহিংসতা ও সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। চিঠিতে মার্কিন আইনপ্রণেতারা বাংলাদেশে গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে গত জানুয়ারিতে একটি ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন করেছে। এতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বয়কট করেছিল। এর আগে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিরোধী দলের বিক্ষোভের পর ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার অব্যাহত রাখে সরকার।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে ছাত্র বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জোরালো সহিংসতা করেছে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরে পুলিশ, বিক্ষোভকারী, বিরোধী কর্মী ও সরকারপন্থি সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত হয়েছে। এতে ১৭০ জন নিহত ও কয়েক হাজার আহত হয়েছে। ছাত্র বিক্ষোভের জবাব দিতে গিয়ে বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে নিষেধাজ্ঞায় থাকা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে ব্যবহার করেছে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করেছে দাঙ্গা পুলিশ। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কঠোর কারফিউ ও দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। বিক্ষোভ দমনের জন্য ইন্টারনেটও বন্ধ করা হয়েছে।
এসব ঘটনার কথা উল্লেখ করে তারা চিঠিতে লিখেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই সব সহিংসতার নিন্দা করতে হবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মতো কর্মসূচি পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের বিক্ষোভ দমনে যেসব সরকারি কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন, তাদেরও জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে চিঠিতে। বাংলাদেশের এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে অংশীদার হতে হবে। যারা বাংলাদেশি জনগণের একটি প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক সরকারের অধিকারের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে।
বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি উল্লেখ করে মার্কিন সিনেটর ও কংগ্রেসম্যানরা বলেছেন, আটককৃতদের মধ্যে কেউ কেউ মুক্ত হলেও এখনও অনেকেই কারাগারে রয়েছেন। এ ছাড়া গণমাধ্যমকর্মী এবং সরকারবিরোধী সমালোচকদের অনলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গুরুতরভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে হয়রানি, নজরদারি কিংবা শারীরিক আক্রমণ চালানোর পাশাপাশি কঠোর ডিজিটাল সেন্সরশিপ অব্যাহত রয়েছে বলেও জানানো হয় চিঠিতে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশে শ্রম আইন ব্যবস্থার উন্নতি করতে ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে ২০২১ সালে বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান বা র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিও তুলে ধরা হয় চিঠিতে। চিঠিতে যেসব মার্কিন সিনেটর স্বাক্ষর করেছেন, তারা হলেন- অ্যাডওয়ার্ড জে. মার্কি, ক্রিস ভ্যান হোলান, টাম্মি বাল্ডিন, জেফরি এ মার্কলি, ক্রিস্টোফার এস মারফি, টিম কাইন, রিচার্ড জে ডারবিন। এ ছাড়া মেম্বার অব কনগ্রেসম্যানদের মধ্যে এ চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন- জেমস পি. ম্যাক গভার্ন, উইলিয়াম আর কিয়েটিং, গ্রেস মেঞ্জ, সেথ মল্টান, লরি ট্রাহান, জো উইলসন, জেমস সি. মোলান, ডিনা টিটাস, জিরাল্ড ই কনলি, গাবে আমো, আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ, ইলহান ওমর, নাইডিয়া ভেলাজকুয়েজ, ডেনিয়েল টি কিলডি ও বারবারা লি।