ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হামাসের দুঃসাহসিক অভিযান

হামাস-ইসরায়েলের সংঘাত যে পথে

অধ্যাপক শাব্বির আহমদ
হামাস-ইসরায়েলের সংঘাত যে পথে

দিন যত গড়াচ্ছে, ফিলিস্তিনে সামরিক ও বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর মিছিল এবং ধ্বংসযজ্ঞের পরিধি ততই বিস্তৃত হচ্ছে। এরই মধ্যে ইসরায়েলের নির্বিচারে বিমান হামলায় গাজা মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে।

বাদ যাচ্ছে না নিরাপদ আশ্রয়ের ভরসাস্থল হাসপাতালও। ইসরায়েলি পদাতিক বাহিনী অবরোধ করে রেখেছে ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত ৩৬৫ বর্গমাইল আয়তনের গাজা উপত্যকাকে। খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ, ওষুধসহ যাবতীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দখলদার ইসরায়েল। গাজায় স্থল অভিযান শুরুর অংশ হিসেবে গত ১২ অক্টোবর ইসরায়েল গাজার উত্তর ও মধ্য অঞ্চলের বাসিন্দাদের তাদের বাড়িঘর খালি করার জন্য একটি সামরিক আদেশ জারি করেছে।

আতঙ্কিত অনেক ফিলিস্তিনি গাজার দক্ষিণ দিকে আশ্রয় নিতে বাধ্য হলেও হামাসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেকেই বাড়িঘর ত্যাগ করেনি। এ আদেশ ইসরায়েলের উত্তর গাজা দখলের পরিকল্পনা মনে করছেন ফিলিস্তিনিরা। ইসরায়েলের জোরপূর্বক এ বাস্তুচ্যুত পদক্ষেপকে দুঃসহ বলে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ। পাশাপাশি এর বিপর্যয়কর পরিণতি সম্পর্কেও সতর্ক করেছে। এদিকে হামাসও বসে নেই। ইসরায়েলের স্থল অভিযান মোকাবেলার সর্বাত্মক প্রস্তুতির পাশাপাশি প্রতিদিন ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে রকেট ছুঁড়ে ইসরায়েলি বর্বরতার জবাব দিচ্ছে।

সর্বশেষ তথ্যানুয়ায়ী ইসরায়েলি হামলায় তিন হাজার ফিলিস্তিনি নিহত, পাঁচ হাজার আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ৮০০ শিশুসহ অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। অন্যদিকে দেড়হাজার ইসরায়েলি নিহত এবং তিন হাজার আহত হয়। নিহতের মধ্যে তিন শতাধিক সেনাসদস্য। জিম্মি করা হয় সেনা ও বেসামরিক মিলে ৩০০ ইহুদি নাগরিককে। অভিযানের প্রথম দিনে ১২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়।

তার মধ্যে সেনা সদস্যের সংখ্যা প্রায় ২৫৬ জন। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর গত ৭৫ বছরে এমন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হয়নি দখলদার ইসরায়েলকে। ইসরায়েলি দৈনিক দ্য হারৎজে জানিয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জার্মানির হিটলারের হলোকাস্টের পর একদিনে এত সংখ্যক ইহুদি জনগোষ্ঠী আর কখনও হত্যার শিকার হয়নি।

উন্মোচিত হয়েছে মানবাধিকারের আসল চরিত্র : হামাসের দুঃসাহসিক অভিযানের পর ইসরায়েলকে সুরক্ষা দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্রুততর ভূমধ্যসাগরের ইসরায়েল উপকূলে বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করে আবারও প্রমাণ করল ‘ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে মূলত একটি মার্কিন কলোনি’ এ বহুল আলোচিত কথাটির সত্যতা। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকরা ইসরায়েল সফর করে দখলদার ইসরায়েলের প্রতি নগ্ন সমর্থন দিয়ে ক্ষান্ত থাকেনি; যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব ও অবরুদ্ধ গাজায় জরুরি ত্রাণ সহায়তা পাঠাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও স্থায়ী পরিষদে আনীত একাধিক প্রস্তাবে ভেটো প্রদান শান্তিপ্রিয় বিশ্ববাসীকে বিস্ময়াপন্ন করে তুলেছে। উন্মোচিত হয়েছে মানবাধিকারের কথিত প্রবক্তাদের আসল চরিত্র। গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় ফুঁসে উঠেছে মুসলিম বিশ্ব।

এমতাবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ও আঞ্চলিক শক্তির এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা দিনদিন বেড়েই চলছে। বিশেষ করে, ইরান হামাসের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন ও সর্বাত্মক সহযোগিতার ঘোষণা দিয়ে আটঘাট বেঁধে নেমে পড়েছে। ইরান সমর্থিত লেবাননের হিজবুল্লাহ মিলিশিয়ারা গাজার হামলার প্রতিবাদে থেমে থেমে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে রকেট ও মর্টার শেল নিক্ষেপ করছে। ইসরায়েলও পাল্টা হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যে কোনো সময় হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা দিনদিন প্রবল হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, হামাসের চেয়ে দশগুণ শক্তিশালী হিজবুল্লাহ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের চিত্র পাল্টে যেতে পারে। ইরানের প্রধান ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি, প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রাইসি বারবার ইসরায়েলের অস্তিত্ব মুছে ফেলার হুমকি দেয়ার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদুল্লাহিয়ান লেবাননের সশস্ত্র মিলিশিয়া গ্রুপের প্রধান হাসান নাসরুল্লাহসহ সৌদি আরব, কাতার, তুরস্ক, সিরিয়া, জর্দান সফর করে ইসরায়েলের নৃশংসতার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

কিডন্যাপ ও গুপ্তহত্যায় বিশ্বে অদ্বিতীয় সংস্থা : অনেক কূটকৌশল আর আন্তর্জাতিক রাজনীতির সমীকরণের ওপর ভিত্তি করে ব্রিটিশ-আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদদে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ওপর ১৯৪৮ সালের ১৪ মে জন্ম নেয় মধ্যপ্রাচ্যের ক্যান্সার কিংবা বিষফোঁড়া নামে খ্যাত রহস্যঘেরা ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল। ২১ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের ক্ষুদ্র দেশটির জনসংখ্যা এক কোটি; যার মধ্যে ৮০ লাখ ইহুদি। বাকি ২০ লাখ আরব মুসলিম; যার ক্ষুদ্র একটি অংশ খ্রিষ্টান। এই ২০ লাখ জনগোষ্ঠীকে জায়নবাদী ইসরায়েল দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানিয়ে রেখেছে বছরের পর বছর। ইসরায়েলের ভাষা হিব্রু আর আরবি। পরমাণু শক্তিধর চারদিকে শত্রুঘেরা ছোট্ট এ দেশটির পুরো সীমানা এন্টি প্লাস্টিক মিসাইল আয়রন ডোম দিয়ে সুরক্ষিত বলে গর্বের সঙ্গে দাবি করে ইসরায়েলিরা। তাদের দাবি, শত্রুর যে কোনো মিসাইল আকাশেই ধ্বংস করতে সক্ষম তাদের আয়রন ডোম। ইসরাইলের প্রতিটি নারী-পুরুষের সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। ছেলেদের তিন, আর মেয়েদের দুই বছর লাগে। সর্বমোট ছয় লক্ষ নিয়মিত ও রিজার্ভ সৈন্য ছাড়াও শিশু ও বয়স্কদের বাদ দিয়ে মোট জনগোষ্ঠীর ৬০ শতাংশকে সৈনিক হিসেবে গণ্য করা হয়। বর্তমান বিশ্বে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে সবচেয়ে বেশি সুপ্রশিক্ষিত, সাহসী ও দুর্র্ধর্ষ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ইসরায়েলের রয়েছে মোসাদ নামে দুর্দণ্ড প্রতাপশালী গোয়েন্দা সংস্থা। এর সদস্যদের ক্ষিপ্রতা ও দুঃসাহিকতা শত্রু-মিত্র উভয়ের কাছেই রূপকথার মতো। ভয়ানক যত সব কর্মকাণ্ডের জন্ম দিয়ে সব থেকে ভয়াবহ ও দুর্র্ধষ গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে দুনিয়াব্যাপী সংস্থাটি বহুল আলোচিত-সমালোচিত। মোসাদের অতীতের ভয়ংকর কিছু অভিযান কল্পকাহিনীকেও হার মানায়।

কিডন্যাপ ও গুপ্তহত্যায় এ সংস্থা বিশ্বে অদ্বিতীয়। নিজেদের নাগরিকদের রক্ষায় এবং শক্রকে নিজেদের কব্জায় নিতে পৃথিবীর যে কোনো দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে অপারেশন চালাতেও তারা পিছপা হয়নি অতীতে। মোসাদের নারী সদস্যরা দেশের স্বার্থে যে কোনো কাজকে শুধু বৈধ মনে করে না, অহংকারও মনে করে। মোসাদের অনিন্দ্য সুন্দরী সদস্যরা প্রেমের ছলনায় আরব বিশ্বসহ বিভিন্ন দেশের রাজনীতিকদের কতই না সর্বনাশ ঘটিয়েছে! শুধু সামরিক নয়, ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক দিয়েও পৃথিবীর অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তি ইসরায়েল। আইটি প্রযুক্তিতে আমেরিকার সিলিকন সিটির পর তেল আবিবের স্থান। গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজন, ওইগ, মাইক্রোসফ্টের মতো বড় বড় কোম্পানির কার্যালয় তেল আবিবে।

স্মরণকালের ভয়াবহ হামলার শিকার যারা : ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, শিন বেত এবং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর নিরাপত্তা ফোর্স আইডিএফ-এর সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে ফাঁকি দিয়ে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামাসের সফল অভিযান দেখে তাবৎ বিশ্বের সামরিক, গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বিস্ময়াপন্ন। ইসরায়েলের কথিত ‘নিরাপত্তা ব্যবস্থার সক্ষমতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ ইসরায়েলিদের মাঝে। স্মরণকালের ভয়াবহ হামলার শিকার দখলদার ইহুদিবাদি ইসরায়েলকে ১৯৪৮ সালের পর এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি আর কখনও। এর আগে ইসরায়েল ও হামাসের মাঝে হামলা-পাল্টা হামলা চলেছে এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ৭ অক্টোবর ২০২৩ হামাসের হামলার ধরন ও ব্যাপকতা দেখে ফিলিস্তিনের এ প্রতিরোধ আন্দোলনটি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। মিসর, জর্দান, সিরিয়া, ইরাক ও লেবানন মিলে সম্মিলিত আরব শক্তি যে কাজটি করতে পারেনি, হামাস একাই তা করে দেখিয়েছে। ফলে কৌতূহল ও আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে সংগঠনটি।

হামাস প্রাথমিকভাবে দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত : ‘হারাকাত আল মুকাওয়ামাআল ইসলামিয়া’ (ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন)-এর সংক্ষিপ্ত রূপ ‘হামাস’। হামাসের ‘ইজ্জেদিন আল কাসসাম’ ব্রিগেড নামে একটি সামরিক শাখা আছে। ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজা থেকে ইসরায়েলি দখলদারির অবসানের দাবিতে ‘ইন্তিফাদা’ বা ফিলিস্তিনি গণজাগরণ শুরুর পর ১৯৮৭ সালে হামাস গঠিত হয়। সংগঠনটি ইসরায়েলকে ধ্বংস করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। তাদের চাওয়া হলো, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হবে বর্তমান ইসরায়েল, গাজা ও পশ্চিম তীর নিয়ে গঠিত একক ইসলামি রাষ্ট্র। হামাস প্রাথমিকভাবে দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয়। প্রথমত এর সামরিক শাখা ইজ্জেদিন আল কাসসাম ব্রিগেডসের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। দ্বিতীয়ত ফিলিস্তিনে বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচি পরিচালনা করা। আধ্যাত্মিক নেতা শেখ আহমদ ইয়াসিনের নেতৃত্বে আবদুল আজিজ আল রান্তিসি ও মাহমুদ জহর হামাস প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৪ সালের মার্চে গাজায় ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হন আহমদ ইয়াসিন। পরের মাসেই নিহত হন আজিজ আল রান্তিসি। সংগঠনটির বর্তমান প্রধান খালেদ মিশাল। ইসরায়েলবিরোধী কট্টর অবস্থান, ইসরায়েলে রকেট হামলা চালানোর দীর্ঘ ইতিহাস ও এ অবস্থান থেকে সরে না আসার দৃঢ় ঘোষণার কারণে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে মনে করে কোনো কোনো দেশ। এ তালিকায় রয়েছে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান এবং ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

২০০৫ সালে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হওয়ার পরের বছরই ফিলিস্তিনি আইন পরিষদ প্যালেস্টিনিয়ান লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের (পিএলসি) নির্বাচনে জয়ী হয় হামাস। এরপর ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফাতাহর সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ২০০৭ সালের জুনে গাজায় হামাস ও ফাতাহর মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই বেধে যায়। এ সময় ফাতাহকে হটিয়ে হামাস গাজায় সরকার গঠন করে। চুক্তির মাধ্যমে ফাতাহ ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দেয় এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ২৪২ নম্বর প্রস্তাবনার পক্ষে সম্মতি জানায়। এতে ক্ষুব্ধ হয় হামাস। এখনও গাজার শাসন ক্ষমতায় হামাস। অন্যদিকে পশ্চিম তীরের শাসন ক্ষমতা ফাতাহর হাতে। চতুর্দিকে ইসরায়েল; রাফাহ করিডোর দিয়ে সংক্ষিপ্ত একটি প্রবেশ পথ রয়েছে গাজা উপত্যকার। এক সময় মিসর হামাসকে সমর্থন দিলেও মুসলিম ব্রাদারহুডের পতনের পর প্রায় নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে এ সংগঠনটি। পরে ইরানই হয়ে ওঠে একমাত্র সামরিক সহায়তাকারী। তবে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদবিরোধী সুন্নি বিদ্রোহীদের সমর্থন করায় হামাসের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় ইরান। তখন কাতার আর তুরস্কই হয়ে ওঠে হামাসের ভরসা। পরে আবার ইরানের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে সংগঠনটির। ইরানের সহায়তায় হামাস নিজেরাই রকেট-ক্ষেপণাস্ত্রসহ সব ধরনের অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম। কাতার-তুরস্ক থেকে এখনও অর্থ সহায়তা পায় বলে মনে করা হয়।

হামাস এখনও মূল অস্ত্রের ব্যবহার করেনি : হামাস-ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি কোনদিকে মোড় নেয়, আগাম মন্তব্য করা বেশ কঠিন। এ যুদ্ধ ইসরায়েল এবং হামাস উভয়ের জন্য অস্তিত্বের প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে। ভয় আর আতঙ্কে অনেক ইসরায়েলি এরই মধ্যে দেশ ছেড়ে অন্যত্রে পালিয়ে গেছে।

ইসরায়েলের দুর্ভেধ্য নিরাপত্তা বেষ্টনি আয়রন ডোমের শতভাগ কার্যকারিতা, আর বিশ্বের সেরা সুপ্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর অহংকার ধুলোয় মিশে গেছে। প্রথমে হামাস, তারপর লেবাননের হিজবুল্লাহকে নিশ্চিহ্ন করতে না পারলে রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের টিকে থাকা কঠিন হবে। তখন ইসরায়েলে বিশ্বের বাঘা বাঘা কোম্পানির বিনিয়োগ তো দূরের কথা, বসবাস করাও নিরাপদ মনে করবে না। কিন্তু হামাস আর হিজবুল্লাহকে নিশ্চিহ্ন করা কি এত সহজ! ইসরায়েলের দেয়া তথ্যমতে হামাসের সশস্ত্র মিলিশিয়ার সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ হাজার। আর হিজবুল্লাহর মিলিশিয়া সংখ্যা ৫০ থেকে ৬০ হাজার। হামাস বারবার বলে আসছে, তারা এখনও মূল অস্ত্রের ব্যবহারই করেনি। হিজবুল্লাহ এরই মধ্যে হাইপাসনিক গাইডেড মিসাইলের পরীক্ষা চালিয়ে ইসরায়েলের হৃদয়ে কম্পন ধরিয়ে দিয়েছে। সুতরাং আগাম মন্তব্য না করে দেখা যাক, কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে গড়ায়!

লেখক : কলামিস্ট ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত