ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তাইওয়ানে ইসলাম প্রচার

তাইওয়ানে ইসলাম প্রচার

পূর্ব এশিয়ার দ্বীপ ভূমি তাইওয়ানে মুসলিমরা ধর্মীয় সংখ্যালঘু। তাইওয়ানে স্থানীয় মুসলমানের সংখ্যা ৬০ হাজার; যা জনসংখ্যার মাত্র ০.৩ শতাংশ। স্থানীয় মুসলিমদের বেশিরভাগ হুই জাতিগোষ্ঠীর সদস্য। তবে দেশটিতে আড়াই লাখের মতো অভিবাসী মুসলিম রয়েছে; যারা ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছে। ২০১৮ সালের তথ্য অনুসারে তাইওয়ানে ১১টি মসজিদ রয়েছে। এর মধ্যে ‘তাইপে জামে মসজিদ’ সবচেয়ে প্রাচীন ও বড়। তাইওয়ানিজ মুসলিমদের বেশির ভাগ সুন্নি ও হানাফি মাজহাবের অনুসারী।

পঞ্চদশ শতাব্দীতে নৌ-অধিনায়ক জেং হের মাধ্যমে তাইওয়ানে সর্বপ্রথম ইসলামের আগমন ঘটে। তবে ইসলামের বিস্তার ঘটে সপ্তদশ শতাব্দীতে; ১৬৬১ সালে যখন চীনের উপকূলীয় প্রদেশ ফুজিয়ানের সেনারা ডাচদের বিতাড়িত করতে তাইওয়ানে অভিযান চালায় এবং তুংনিং রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। আগত সেনাদের অনেকেই মুসলিম ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তারা তাদের পরিবার নিয়ে আসে এবং লুকাং ও তুমসির মতো একাধিক বসতি গড়ে তোলে।

তারা তাইওয়ানে স্থানীয় রীতি অনুসারে মসজিদ নির্মাণ করে। যেসব মসজিদের ধ্বংসাবশেষ এখনও রয়েছে। তবে প্রথম পর্যায়ে যেসব মুসলিম তাইওয়ানে এসেছিল, তাদের পরবর্তী প্রজন্ম ধর্মীয় পরিচয় ধরে রাখতে পারেনি। স্থানীয় সমাজে তারা বিলীন হয়ে যায়।

তাইওয়ানে মুসলিম অভিবাসীদের তরঙ্গ : তাইওয়ানে জাপানি ঔপনিবেশিক শাসনের (১৮৯৫-১৯৪৫ খ্রি.) সময় প্রথম পর্যায়ে আসা মুসলমানদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে। জাপান সরকার তাইওয়ানে সব বিদেশি ধর্মের চর্চা নিষিদ্ধ করে। অবশ্য তখন স্থানীয় মুসলিমরা গোপনে ধর্ম পালন করত বলে ধারণা করা হয়। মূল চীনা ভূখণ্ড থেকে তাইওয়ানে ইমাম পাঠানোর যে প্রথা ছিল, তা ১৯২২ সালে বন্ধ হয়ে যায়। অক্টোবর ১৯৪৫ সালে জাপান চীনের কাছে তাইওয়ান দ্বীপ হস্তান্তর করে এবং ১৯৪৮ সালে আবার চীনা ভূখণ্ড থেকে তাইওয়ানে ইমাম পাঠানো শুরু হয়। চাইনিজ মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন (সিএমএ)-এর মতে প্রথম পর্যায়ে তাইওয়ানে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। যদিও তারা প্রাত্যহিক জীবনে ইসলামের অনুশীলন করে না। তাইওয়ানে মুসলিম অভিবাসীদের দ্বিতীয় তরঙ্গ সৃষ্টি হয় চীনা গৃহযুদ্ধের সময়। ১৯৪৯ সালে জাতীয়তাবাদী সরকারের সঙ্গে মূল চীনা ভূখণ্ড থেকে ২০ হাজার মুসলিম তাইওয়ানে পালিয়ে আসে। তাদের মধ্যে বহুসংখ্যক সৈনিক ও সরকারি কর্মকর্তা ছিল। তারা প্রধানত চীনের দক্ষিণ ও পশ্চিম অঞ্চলের মুসলিম অধ্যুষিত প্রদেশগুলো থেকে এসেছিল। যেমন- ইউনান, উইঘুর, নিংঝিয়া, আনহুই ও গানসু। দ্বিতীয় ধাপে তাইওয়ানে আসা মুসলিমরা ১৯৪৭ সালে তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেতে ‘তাইপে জামে মসজিদ’ নির্মাণ করে। এটাই ছিল তাইওয়ানের প্রথম মসজিদ। এ ছাড়া তারা ১৯৪৯ সালে কাওশিউং মসজিদ, ১৯৫০ সালে তাইপে সাংস্কৃতিক মসজিদ এবং ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে তাইচুং মসজিদ নির্মাণ করে।

শিল্প খাতে বিদেশি শ্রমিকদের অনুমতির সুযোগ : ১৯৫৩ সালে তাইপে, ইয়াগুন ও ব্যাংককের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির অধীনে তাইওয়ানে অনিয়মিত বাহিনীর পাঁচ হাজার ৫৮৩ জন সেনা ও তাদের ওপর নির্ভরশীলদের মধ্যে ১ হাজার ৪০ জনকে নিয়ে আসা হয়। এ বাহিনীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম ছিল। তারা ১৯৬৪ সালে ঝংলিতে লংগাং মসজিদ নির্মাণ করে। এ সময়ে বেশ কয়েকজন মুসলিম নেতা তাইওয়ানের জাতীয় পরিষদের সদস্য মনোনীত হন এবং সেনাবাহিনী ও প্রশাসনেও উচ্চ পদস্থ মুসলিম কর্মকর্তা ছিলেন। তৃতীয় ধাপে ১৯৮০ সালে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকে কয়েক হাজার মুসলিম উন্নত জীবনের আশায় তাইওয়ানে পাড়ি জমায়। এরা মূলত জাতীয়তাবাদী সৈনিক ছিল। যারা ইউনান থেকে কমিউনিস্টদের ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। ১৯৮৯ সালে তাইওয়ান সরকার শিল্প খাতে বিদেশি শ্রমিকদের কাজের অনুমতি দিলে চতুর্থ ধাপে তাইওয়ানে অভিবাসন ঘটে। এ সময় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশ থেকে লক্ষাধিক মুসলিম শ্রমিক তাইওয়ানে যায়। তাদের কেউ কেউ সেখানে থিতু হওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ানদের সংখ্যাই বেশি। তারা তাইওয়ানে একাধিক মসজিদও প্রতিষ্ঠা করেছে। তাইওয়ানে মুসলিমরা ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করে এবং বেশ কয়েকটি মুসলিম সংগঠন মুসলমানের স্বার্থে কাজ করে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত