মুসলিম বিশ্ব পরিচিতি : সিরিয়া
প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
যুগের পর যুগ রোমান ও মোঙ্গলদের থেকে শুরু করে ধর্মযোদ্ধা ও তুর্কিদের আক্রমণ এবং দখলের শিকার বিধ্বস্ত একটি দেশ সিরিয়া। মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে বিভিন্ন ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। কুর্দি, আর্মেনীয়, অ্যাসিরীয়, খ্রিষ্টান, দ্রুজ, আলাউইট শিয়া ও আরব সুন্নিসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মানুষের আবাসস্থল দেশটিতে। তবে শিয়া ও সুন্নি গোত্রের মুসলমান এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ। আধুনিক সিরিয়া ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীন হয় ১৯৪৬ সালে। কিন্তু বিভিন্ন গোত্রের বিবাদে অস্থিতিশীল রাজনীতির কারণে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত দেশটি।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
রাষ্ট্রীয় নাম : দ্য সিরিয়ান আরব রিপাবলিক
রাজধানী : দামেস্ক
আয়তন : ১ লাখ ৮৫ হাজার ১৮০ বর্গকিলোমিটার
জনসংখ্যা : ২ কোটি ১১ লাখ
ভাষা : প্রধান ভাষা আরবি
ধর্ম : সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম ও খ্রিষ্টান
আয়ু : পুরুষ ৭৪, নারী ৭৮ বছর
মুদ্রা : সিরীয় পাউন্ড
নেতৃত্ব : দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। পিতা হাফেজ আল আসাদের পর ২০০০ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন তিনি। ব্যাপক বিক্ষোভের মুখেও শক্ত হাতে ক্ষমতা ধরে রেখেছেন তিনি। এ বিক্ষোভ পরবর্তীতে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয় দেশটিতে। প্রেসিডেন্টের পরিবার আলাউইট শিয়া গোত্রের। আরব বসন্তের সময় ২০১১ সাল থেকেই দেশটিতে বিক্ষোভের শুরু। তবে চলমান গৃহযুদ্ধে ২০১৭ সালের পর থেকে ইরান ও রাশিয়ার সরকারের সহায়তায় শক্ত অবস্থানে এখনও প্রেসিডেন্ট বাশার।
সংবাদমাধ্যম : সিরিয়ার সংবাদমাধ্যম কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে বেশ জটিল অবস্থায় পৌঁছেছে। দেশটির গণমাধ্যমের কিছু অংশ সরকারপন্থী, কিছু সশস্ত্র বাহিনী এবং বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে। ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার’ নামক ফ্রান্সভিত্তিক একটি সংস্থার তথ্যমতে, বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে দেশটিতে প্রায় ২ শতাধিক সংবাদকর্মী নিহত হয়েছেন। দেশটির সরকার, বিরোধী দল ও জিহাদি দলগুলো নিজেদের মত প্রকাশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে আসছে।
সিরিয়ার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা
১৯১৮ সালের অক্টোবর : ৪০০ বছরের অটোমান সাম্রাজ্যের ইতি টেনে দামেস্ক দখল নেয় আরব সেনারা।
১৯২০ : সান রেমো সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নবনির্মিত আরব সাম্রাজ্যের সিরিয়া-লেবানন অংশ ফ্রান্সের অধীনে চলে যায়। অঞ্চলটির ফিলিস্তিন অংশে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৪৬ : স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে সিরিয়া।
১৯৬৭ : ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ৬ দিনের যুদ্ধে পরাজয়ের স্বাদ নিতে হয় মিসর, জর্ডান ও সিরিয়াকে। ফলে গোলান মালভূমি চলে যায় ইসরায়েলের দখলে।
১৯৭০ : অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন সাবেক প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল আসাদ।
১৯৭৬ : লেবাননের গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে সিরিয়া। পরবর্তীতে ৩ দশক লেবাননে সিরিয়ার সামরিক উপস্থিতি ছিল। এ সময় লেবাননের রাজনীতিতে প্রভাবিত করে সিরিয়া।
১৯৮২ : হামাসে মুসলিম ব্রাদারহুড মাথা চাড়া দেয়; যা মাসব্যাপী সামরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে দমন করা হয়। এ সময় দেশটির হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ নিহত হন।
২০০০ : প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল আসাদ মারা যান এবং তার ছেলে বাশার ক্ষমতায় আসেন।
২০০৫ : লেবাননের প্রধানমন্ত্রী রফিক আল হারিরি আততায়ীর হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এরপরই আন্তর্জাতিক চাপে লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় সিরীয় সরকার।
২০১১ : আরব বসন্ত শুরু হওয়ার কারণে আরো অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে সিরিয়া। গৃহযুদ্ধে রূপ নেয় সরকার ও বিরোধিদলের মধ্যকার সংঘাত।