সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পেছনে রয়েছে বিদ্রোহীদের শক্তিশালী একটি জোট। এ জোটের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও বাশার সরকারের বিরুদ্ধে তারা এককাট্টা। ফলে ইরানের সহায়তা বা রাশিয়ার সমর্থন নিয়েও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট তার পতন ঠেকাতে পারেননি। এ অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছে ইসলামপন্থি সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি। এইচটিএস এক বিবৃতিতে সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের ঘোষণা দেয়। বিবৃতিতে বলা হয়, জালেম শাসক বাশার আল-আসাদ দেশ থেকে পালিয়েছেন। সিরিয়া এখন মুক্ত। এর মধ্য দিয়ে একটি অন্ধকার যুগের সমাপ্তি হলো। সূচনা হলো একটি নতুন যুগের। এইচটিএস ছাড়াও এ বিদ্রোহী জোটে রয়েছে সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (এসএনএ), ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট, আহরার আল-শাম, ফ্রি সিরিয়ান আর্মি, সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের (এসডিএফ) মতো অনেকগুলো গ্রুপ।
বিদ্রোহী জোটের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হলো এইচটিএস। এ গোষ্ঠী অর্গানাইজেশন ফর দ্য লিবারেশন অব দ্য লেভান্ট সংগঠন নামেও পরিচিত। জোলানি ২০১৭ সালে এইচটিএস প্রতিষ্ঠা করেন। আল-কায়েদা ও আইএস থেকে জোলানি তার সংগঠনকে আলাদা রাখলেও পশ্চিমারা ২০১৮ সালে একে সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা দেয়। জোলানিকে গ্রেপ্তারে পুরস্কারও ঘোষণা করে। বাশার সরকারের বিরুদ্ধে এইচটিএস ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ যে গোষ্ঠী বিদ্রোহে অংশ নিয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (এসএনএ)। গোষ্ঠীটির বেশ কিছু শাখা রয়েছে। এ শাখার আবার আদর্শ ভিন্ন ভিন্ন। এসব গ্রুপ তুরস্কের সমর্থন পেয়ে থাকে। এ ছাড়া সেখান থেকে অর্থায়ন ও অস্ত্রও পেয়ে থাকে।
এর বাইরে বিদ্রোহীদের এ জোটে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট নামের একটি গোষ্ঠী রয়েছে। এ গোষ্ঠীর সঙ্গে রয়েছে আরো বেশ কয়েকটি উপগোষ্ঠী; যার মধ্যে আহরার আল-শাম উল্লেখযোগ্য। এ গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, তাদের লক্ষ্য বাশার সরকারের পতন। তারা শরিয়া আইনভিত্তিক ইসলামি রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যের কথাও বলে আসছে। সিরিয়ার যুদ্ধের জটিল কিছু দিকও রয়েছে। এ বিদ্রোহী জোটের কিছু সদস্য আবার কুর্দি ফোর্সের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। সিরিয়ায় বাশার সরকারের বিরোধী এ কুর্দি ফোর্স। এ জোটের সঙ্গে রয়েছে তুরস্কের মদদপুষ্ট আরেকটি বিদ্রোহীগোষ্ঠী ফ্রি সিরিয়ান আর্মি। গত সপ্তাহে এ গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা আলেপ্পোর উত্তরে বিভিন্ন শহর ও গ্রাম নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এর মধ্যে তাল রিফাত অন্যতম। এসব অঞ্চল আগে বাশার সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
সিরিয়ার বিদ্রোহী জোটে আরেকটি গোষ্ঠী ছিল সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)। তারাও বাশার সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছিল। এ গোষ্ঠীর সদস্যদের অধিকাংশই কুর্দি যোদ্ধা। এর আগে পিপলস প্রটেকশন ইউনিটস (ওয়াইপিজি) নামের একটি গোষ্ঠীতে ছিল এ গ্রুপের সদস্য। তুরস্ক এ গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী বলে বিবেচনা করে থাকে। বাশার সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে সিরিয়ার তরুণ প্রজন্ম, যোদ্ধা ও সংখ্যালঘু দ্রুজ সম্প্রদায়ের লোকজন যোগ দেন।