ঢাকা ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুফিবাদের তীর্থস্থান আজমির শরিফের ইতিহাস

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ
সুফিবাদের তীর্থস্থান আজমির শরিফের ইতিহাস

ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সুফিবাদের তীর্থস্থান ভারতের রাজস্থানের আজমির শরিফ। ধর্ম, সম্প্রদায় ও ভৌগলিক সীমানার চৌকাঠ পেরিয়ে বিশ্বদরবারে এটি এমন এক স্থান, যা পরিদর্শনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন। শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বীই নন, হিন্দু দর্শনার্থীরাও আজমিরের এ দরগাহে উপস্থিত হন। এখানে নারীরাও প্রবেশ করতে পারেন। বহু হিন্দু নারীই মানত করতে এ দরগাহে আসেন। অথচ বর্তমানে আজমিরের দরগাহ খবরের শিরোনামে। শিব মন্দিরের ওপর এ দরগাহ বানানো হয়েছিল বলে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন হিন্দু সেনা সংগঠনের সভাপতি ভিষ্ণু গুপ্তা। তার দাবির স্বপক্ষে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক হরবিলাস সারদারের বইয়ের তথ্যসহ তিনটি কারণ উল্লেখ করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। সেখানে হিন্দুদের পূজা করার অনুমতির জন্যও আবেদন জানিয়েছেন। ভিষ্ণু গুপ্তার দাবি, মন্দিরের অস্তিত্বের ঐতিহাসিক প্রমাণ রয়েছে। অন্যদিকে আজমির দরগাহের প্রধান উত্তরাধিকারী ও খাজা মইনুদ্দিন চিশতির বংশধর সৈয়দ নাসিরুদ্দিন চিশতি এ দাবিকে সস্তা প্রচার পাওয়ার দাবি বলে আখ্যা দিয়েছেন। আগামী ২০ ডিসেম্বর দরগাহ সংক্রান্ত মামলার শুনানি রয়েছে। অন্যদিকে জানুয়ারি মাসের ৮ তারিখ খাজা মইনুদ্দিন চিশতির ওরস। সে উপলক্ষে প্রতিবছর দুই সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানে শামিল হন কয়েক লাখ মানুষ। বেশ আগ থেকেই উৎসবের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দরগাহ ঘিরে যে দাবি ও পাল্টা দাবির ঝড় উঠেছে, সে কারণে আজমিরের পরিস্থিতি অন্যবারের তুলনায় বেশ আলাদা।

খাজা গরিবে নেওয়াজ : আজমিরের খাজা মইনুদ্দিন চিশতির দরগাহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত দরগাহগুলোর অন্যতম। ভারত ছাড়াও পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে শুরু করে সুদূর আমেরিকা, ফ্রান্স ও জার্মানি থেকে মানুষ এ দরগাহ পরিদর্শনে আসেন। দেশ-বিদেশের বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব এবং রাজনীতিবিদরা এখানে চাদর দেন। ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ রাজস্থানের এ দরগাহ যার নামে তৈরি, তিনি হলেন রহস্যবাদী দার্শনিক ও সুফি সাধক মইনুদ্দিন চিশতি। সাধারণ মানুষের কাছে তিনি ‘গরিবে নেওয়াজ’ নামে পরিচিত। ঐতিহাসিকদের মতে, ধর্মীয় এবং সাম্প্রদায়িক সঙ্কীর্ণতার পরিপন্থী এ দরগাহ সম্প্রীতি ও উদারতার বার্তা দেয়। এর নেপথ্যে রয়েছেন স্বয়ং মইনুদ্দিন চিশতি। রাহুল সাংকৃত্যায়ন তার গ্রন্থ ‘আকবর’-এ যেসব মুসলিম সাধককে ‘মুসলিম সাম্যবাদী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, সুফি সাধক ও দার্শনিক খাজা মইনুদ্দিন চিশতি তাদের প্রথম। তিনি ১১৪২ সালে ইরানের সানজার (সিস্তান) শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার খ্যাতি ভারতীয় উপমহাদেশের সীমানা অতিক্রম করার পাশাপাশি ধর্মের গণ্ডিকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বিখ্যাত রহস্যবাদী সাধক খাজা ওসমান হারুনির শিষ্য ছিলেন তিনি। মইনুদ্দিন চিশতি ১১৯২ সালে প্রথমে লাহোর, তারপর দিল্লি এবং পরে আজমির পৌঁছান। এর আগে বাগদাদ ও হেরাত হয়ে বেশ কয়েকটি বড় শহর সফরের সময় সেখানকার প্রসিদ্ধ রহস্যবাদী দার্শনিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তরাইনের যুদ্ধের পর এমন এক সময়ে তিনি আজমিরে আসেন, যখন ভারতে মুসলিম শাসন শুরু হচ্ছিল। কুতুবুদ্দিন আইবেক, ইলতুৎমিশ, আরাম শাহ, রুকনুদ্দিন ফিরোজ ও রাজিয়া সুলতানার শাসনকাল চলছিল। কথিত আছে, মোহময়ী সাধক ও অতীন্দ্রিয়বাদী ছিলেন মইনুদ্দিন চিশতি। জীবনাদর্শ এবং তার বার্তা বিখ্যাত করে তুলেছিল তাকে। তার খ্যাতির বিষয়ে জানতে পেরে ইলতুৎমিশ নিজে একবার তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন বলেও শোনা যায়। কথিত আছে, রাজিয়া সুলতানাও বহুবার আজমিরে গেছেন।

দরগাহ তৈরির ইতিহাস : খাজা মইনুদ্দিন চিশতির মৃত্যুর পর তার সমাধিতে এ দরগাহ নির্মিত হয়; যা ত্রয়োদশ শতাব্দীতে দিল্লির সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। মা-ুর সুলতান মাহমুদ খিলজি ও তার পরে গিয়াসুদ্দিন সেখানে সমাধিসৌধ এবং সুন্দর একটি গম্বুজ নির্মাণ করেন। মুহাম্মদ বিন তুঘলক সম্ভবত প্রথম স¤্রাট ছিলেন, যিনি ১৩২৫ সালে এ দরগাহ পরিদর্শন করেন। আর তুঘলক শাসক জাফর খান দরগাহ পরিদর্শন করেছিলেন ১৩৯৫ খ্রিষ্টাব্দে। সফরকালে দরগাহের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বহু উপহার দিয়েছিলেন তিনি। মা-ুর খিলজি ১৪৫৫ সালে আজমিরের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেন। সেই সময় এ দরগাহ তার ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। তার শাসনকালে দরগাহের প্রাঙ্গণে বিশাল ফটক, উঁচু দরজা ও মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এর আগপর্যন্ত তেমন পোক্ত নির্মাণ ছিল না। ঐতিহাসিকদের মতে, আদি দরগাহ ছিল কাঠের তৈরি। পরে এর ওপর একটা পাথরের ছাউনি নির্মাণ করা হয়। ইতিহাসবিদ রানা সাফাভির মতে, দরগাহ পরিসরে নির্মাণের প্রথম মজবুত প্রমাণ হলো তার গম্বুজ, যা ১৫৩২ সালে অলঙ্কৃত করা হয়েছিল। এটা সমাধির উত্তর দেয়ালে স্বর্ণাক্ষরে লেখা শিলালিপি থেকে স্পষ্ট। ইন্দোইসলামিক স্থাপত্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গম্বুজকে পদ্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে। রামপুরের নবাব হায়দার আলী খানের দেয়া একটা সোনার মুকুটের ওপর তা স্থাপন করা হয়েছে।

আকবরের সঙ্গে দরগাহের সম্পর্ক : আকবর যখন প্রথমবার এ দরগাহ পরিদর্শনে এসেছিলেন, ততদিনে খাজা মইনুদ্দিন চিশতির খ্যাতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। রাহুল সাংকৃত্যায়ন আকবর গ্রন্থে লিখেছেন, এক রাতে আকবর আগ্রার নিকটবর্তী একটা গ্রাম থেকে শিকারের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। সেখানে কিছু মানুষের মুখে আজমিরের খাজার প্রশংসা শুনে তার অন্তরে ভক্তি জেগে ওঠে। ১৫৬২ সালের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে তিনি কিছু লোককে সঙ্গে নিয়ে আজমির যাত্রা শুরু করেন। আবুল ফজল লিখেছেন, এক রাতে তিনি (আকবর) শিকারের জন্য ফতেহপুর গিয়েছিলেন। সে সময় আগ্রা থেকে ফতেপুর যাওয়ার পথে গ্রামের কিছু লোক খাজা মইনুদ্দিনের গৌরব ও গুণাবলি সম্পর্কে একটি সুন্দর গান গাইছিল। সেখান থেকে এ দরগাহের বিষয়ে জানতে পারেন তিনি। দরগাহের প্রতি মুঘল সম্রাট আকবরের গভীর শ্রদ্ধা ছিল। রাহুল সাংকৃত্যায়ন তার ‘আকবর’ নামক গ্রন্থে লিখেছেন, ১৫৭২ সালের এপ্রিল মাসে সন্তান লাভের মানত করে আকবর পায়ে হেঁটে জিয়ারতের উদ্দেশে রওনা হন। প্রতিদিন ১৪ মাইল গতিতে ১৬ মঞ্জিল অতিক্রম করে আজমির পৌঁছান। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, তিনি সন্তান লাভের আশায় ফতেপুর সিক্রি থেকে খালি পায়ে দরগাহে গিয়েছিলেন। প্রতি বছর দরগাহ পরিদর্শনের জন্য আগ্রা থেকে আজমির পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতেন। আকবর দরগাহে একটা মসজিদও নির্মাণ করেছিলেন। যাকে আকবরি মসজিদ বলা হয়। ঐতিহাসিক আবুল ফজল লিখেছেন, আকবর প্রথম মুঘল শাসক, যিনি ১৫৬২ সালে প্রথমবার দরগাহ পরিদর্শন করেছিলেন। দরগাহের সঙ্গে যুক্ত লোকদের উপহার ও অনুদান দিয়েছিলেন। তার মতে, ১৫৬৮ খ্রিষ্টাব্দে আকবর তার প্রথমবারের মানত পূরণের জন্য পায়ে হেঁটে দরগাহে এসেছিলেন। আকবর দেখেছিলেন, হাজার হাজার দরিদ্র ও তীর্থযাত্রীদের জন্য লঙ্গরের আয়োজন করা হয়েছিল। তাই তিনি আজমির, চিতোর এবং রণথম্ভোরের ১৮টা গ্রাম দিয়ে দেন। আকবর ১৫৬৯ সালে আজমিরে একটা মসজিদ ও খানকা নির্মাণের নির্দেশ দেন। সে আদেশ অনুযায়ী তৈরি হয় লাল বেলেপাথরের আকবরি মসজিদ। শাহজাহান ১৬৩৭ সালে একটা সুন্দর মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। যা দরগাহের পশ্চিমে শাহজাহানি দরজার সঙ্গে অবস্থিত। দরগাহে আগত মানুষদের জন্য আকবর এবং জাহাঙ্গীর অনেক ব্যবস্থা করেছিলেন। যার উল্লেখ হরবিলাস সারদারের বইয়ে পাওয়া যায়। সম্ভর হ্রদ থেকে দরগাহ ২৫ শতাংশ নুন পেত, যার পরিবর্তে সেই সময় মিলত ৭ টাকা। দরগাহের লঙ্গরের জন্য মোট পাঁচ হাজার সাত টাকা দেয়া হতো। বৈরাম খাঁর শাসনের অবসানের পরপরই ১৫৬০ সালের একটা সনদের কথা জানা যায়, যেখানে দরগাহের এক সেবককে ২০ বিঘা জমি দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

মুঘল সম্রাটদের সঙ্গে দরগাহের যোগ : আকবরের প্রথমবার আজমির সফর (১৫৬২ খ্রিষ্টাব্দ)-এর আগেই দরগাহের সংস্কারের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল। এ কাজ মুঘলরা ক্ষমতায় থাকাকালীন তো বটেই, এমনকি তারপরও এ সংস্কার অব্যাহত ছিল। দরগাহের বিষয়ে আকবরের আগ্রহ শুরু হয় তার শাসকবর্গের মধ্যে ভারতীয় উপাদান অন্তর্ভুক্ত করার নীতি থেকে। কিছু ঐতিহাসিক বিশ্বাস করেন, মুঘলরা ঐতিহ্যগতভাবে সুফিবাদের নকশবন্দি সম্প্রদায়ের অনুগামী ছিল। আকবর শুধু খাজা মইনুদ্দিন চিশতির দরগাহেই নয়, দিল্লির অন্যান্য চিশতি সুফিদের সমাধিতেও যেতেন। ঐতিহাসিকদের মতে, দরগাহকে গুরুত্ব দেয়ার কারণ শুধু আকবরের আধ্যাত্মিক চিন্তাই ছিল না, এটা ভারতে মুঘল শাসনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতেও সাহায্য করেছিল। ব্রিটিশ শাসনামলেও এ দরগাহ আধ্যাত্মিক গুরুত্বের কেন্দ্র ছিল। তবে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন আসে।

অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস : আজমিরের এ দরগাহ পরিদর্শনে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষেরা আসেন। এ পরম্পরা শত শত বছর ধরেই চলে আসছে। বার্ষিক ওরস-উৎসবের সময় লাখ লাখ মানুষ উপস্থিত হন। এ রীতি এখনও চলে আসছে। হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও এ দরগাহ দর্শনের জন্য আসেন। কেউ বা নিজের মনোকামনা পূরণের জন্য মানত করেন। শুরু থেকেই সমাজের ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির মানুষরা এ দরগাহে আসতেন। সেই রীতি এখনও রয়েছে। ওরস ও মিলাদুন নবীর অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম হয় দরগাহে। ঐতিহাসিকদের মতে, খাজা মইনুদ্দিন চিশতি এমন এক স্থানকে আধ্যাত্মিকতার জন্য বেছে নিয়েছিলেন, যা হিন্দুদের জন্য এরই মধ্যে পবিত্র ছিল। সেখানে ব্রহ্মার মন্দির রয়েছে। আর খাজা মইনুদ্দিন চিশতির হাত ধরে আজমির দুই সম্প্রদায়ের মানুষেরই তীর্থের কেন্দ্র হয়ে ওঠে।

সাম্প্রতিক দাবি ও পাল্টা দাবি : প্রায় ৮০০ বছরের ইতিহাসে দিল্লির সুলতান, মুঘল সম্রাট, রাজপুত, মারাঠা, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এবং স্বাধীন ভারতের বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী থেকেছে খাজা মইনুদ্দিন চিশতির দরগাহ। তবে এর আগে তার অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে কেউ আদালতের দ্বারস্থ হননি, যেমনটা এখন হয়েছে। হিন্দুসেনার জাতীয় সভাপতি বিষ্ণু গুপ্তার দাবি, দরগাহের নিচে হিন্দু মন্দির রয়েছে। হরবিলাস সারদার বইয়ের তথ্যকেই তার মামলার অন্যতম ভিত্তি করেছেন তিনি। গুপ্তার কথায়, ব্রিটিশ শাসনামলে আজমির মিউনিসিপ্যালিটির কমিশনার ছিলেন হরবিলাস সারদা। ১৯১১ সালে লেখা তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন যে, দরগাহ মন্দিরের ওপর নির্মিত হয়েছিল। আমরা তার ওপর ভিত্তি করে আবেদন তৈরি করেছি।

আমরা নিজেদের পর্যায়ে গবেষণা করেছি। বইয়ে দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দরগাহ পরিদর্শন করেছি। একটা হিন্দু মন্দির ভেঙে দরগাহের কাঠামো তৈরি করা হয়েছিল। দরগাহের দেয়াল ও দরজায় খোদাই করা ছবি হিন্দু মন্দিরের কথা মনে করিয়ে দেয়। তার দাবির তৃতীয় ভিত্তি সম্পর্কে বিষ্ণু গুপ্তা বলেন, আজমিরের প্রত্যেক মানুষ জানেন এবং তাদের পূর্বপুরুষরাও বলছেন, এখানে একটা শিবলিঙ্গ ছিল। তাই এটা আজমির দরগাহ নয়, এটা সঙ্কটমোচন মহাদেব মন্দির। দরগাহ ওপরে রয়েছে, নিচে ভগবান শিবের মন্দির ছিল। ১৯১১ সালে হারবিলাস সারদারের লেখা বই ‘আজমির : হিস্টোরিকাল অ্যান্ড ডেসক্রিপটিভ’-এ একাধিক বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। বইয়ে দরগাহ খাজা মইনুদ্দিন চিশতিরও একটা অধ্যায় রয়েছে। ৯৭ নম্বর পৃষ্ঠার প্রথম অনুচ্ছেদে দরগাহে মহাদেব মন্দিরের উল্লেখ রয়েছে। ইংরেজিতে লেখা ওই বইয়ের বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, ‘ঐতিহ্য অনুসারে বলা হয়, বেসমেন্টের ভেতরে একটা মন্দিরে মহাদেবের মূর্তি রয়েছে। যার ওপর একটা ব্রাহ্মণ পরিবার প্রতিদিন চন্দন কাঠ রাখত।’ এর ভিত্তিতে বিষ্ণু গুপ্তা আদালতে আবেদন জানিয়েছেন।

আজমির শরিফের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা আঞ্জুমান কমিটি মি. গুপ্তার দাবি খারিজ করে দিয়েছে। আঞ্জুমান কমিটির সেক্রেটারি সৈয়দ সরোয়ার চিশতি বলেন, আমরা বংশানুক্রমিক খাদেম। যারা গত ৮০০ বছর ধরে দরগাহের সঙ্গে সম্পর্কিত ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনার কাজ করছি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে (মামলায়) আমাদের কোনো পক্ষ করা হয়নি। তিনি বলেন, আঞ্জুমান কমিটি খাদেমদের প্রতিনিধিত্ব করে, আর দরগাহ কমিটি শুধু তদারকির কাজ করে। এটা একধরনের ষড়যন্ত্র, যা আমরা হতে দেব না। আমরা আমাদের আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করছি। আমরা আদালতে যাব। হরবিলাস সারদারের বই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তার কথায়, সারদার আর্য সমাজের সভাপতি ছিলেন। তিনি হিন্দু মহাসভার সদস্য ছিলেন। ব্রিটিশ সরকারের আমলে তাকে রায় উপাধি দেয়া হয়। তিনি হিন্দু সুপিরিয়রিটির মতো একটি বই লিখেছেন, যা তার মতাদর্শের কথা বলে। সৈয়দ সরোয়ার চিশতি বলেন, হরবিলাস সারদারের ওই বইয়ের কথা সর্বত্র উদ্ধৃত হচ্ছে। তবে ১৯১৫ সালে তার দেয়া একটা সিদ্ধান্তের কথা কোথাও বলা হচ্ছে না। তিনি বলেন, ১৯১৫ সালে প্রদত্ত সিদ্ধান্তে সারদার লিখেছিলেন, দরগাহের খাদেম বংশানুক্রমিক। তাদের উত্তরাধিকার রয়েছে এবং দরগাহের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। একটা বই লেখা এবং রায় দান দুটো ভিন্ন জিনিস। তার বিচারে তিনি কোথাও লেখেননি যে, দরগাহে মন্দির ছিল এবং কয়েকজন ব্রাহ্মণ সেখানে উপাসনা করতেন।

লেখক : আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষক ও গণমাধ্যমকর্মী

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত