ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরীক্ষীদের হত্যা

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরীক্ষীদের হত্যা

আফ্রিকার ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো বা ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কর্মরত ১৩ জন বিদেশি হত্যাকাণ্ডে শিকার হয়েছেন। বিদ্রোহী এমণ্ড২৩ গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষে তারা নিহত হন। দক্ষিণ আফ্রিকার সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, এর মধ্যে তাদের ৯ জন সৈনিক রয়েছে। তারা ডিআর কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলীয় গোমা শহরের দিকে বিদ্রোহীদের অগ্রসর হওয়া ঠেকানোর চেষ্টা করছিল। নিহতদের মধ্যে অন্য দুজন মালাউইয়ের, আর উরুগুয়ের একজন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, তিনি ডিআর কঙ্গো ও রুয়ান্ডার নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিশ্ব নেতারাও এর মধ্যে সহিংসতার অবসানের আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘ গোমায় থাকা তাদের জরুরি নয়, এমন সব কর্মকর্তাকে সরিয়ে আসছে। শহরটিতে প্রায় দশ লাখ লোকের বাস। তবে সেখানে লড়াই জোরদার হচ্ছে।

ভয়াবহ সংঘর্ষ এবং সংঘাত আরও বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সোমবারের সভাটি রোববার পুনঃনির্ধারণ করা হয়। এমণ্ড২৩ গোষ্ঠীটি রক্তপাত এড়াতে গোমায় থাকা কঙ্গোর সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছে। প্রতিবেশী রুয়ান্ডার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও ডিআর কঙ্গো বিদ্রোহের জন্য রুয়ান্ডাকেই দায়ী করে আসছে। এর আগে বৃহস্পতিবার ফ্রন্টলাইন পরিদর্শনের সময় কঙ্গোর মিলিটারি গভর্নরকে হত্যা করে এমণ্ড২৩ যোদ্ধারা। গত জানুয়ারিতে এ সশস্ত্র গোষ্ঠীটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বাঞ্চলীয় শহর মিনোভা ও মাসিসি দখল করে নিয়েছিল। ওদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট কঙ্গো ও রুয়ান্ডার নেতাদের সঙ্গে আলাপের সময় লড়াই বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন বলে তার কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈদেশিক নীতি বিষয়ক প্রধান কাজা কাল্লাস আর অগ্রসর না হওয়ার জন্য এম ২৩-এর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি এ গোষ্ঠীকে রুয়ান্ডার সমর্থন দেয়ার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

একই ধরনের নিন্দা জানিয়েছে অ্যাঙ্গোলার প্রেসিডেন্ট জোয়াও লরেন্সো। তিনি রুয়ান্ডা ও ডিআর কঙ্গোর মধ্যে আফ্রিকান ইউনিয়নের পক্ষ থেকে মধ্যস্থতাকারীর কাজ করছেন। তিনি এমণ্ড২৩ ও তার সমর্থকদের দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের তীব্র সমালোচনা করেছেন। একই সঙ্গে অবিলম্বে লড়াই বন্ধ করে বেসামরিক নাগরিকদের জীবন রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন বলে এএফপি জানিয়েছে। এমণ্ড২৩ ও ডিআর কঙ্গোর সামরিক বাহিনীর মধ্যে লড়াই জোরদার হয়েছিল চলতি বছরের শুরু থেকে। বিদ্রোহীরা দেশের বেশ কিছু নতুন করে দখল করেছে।

জাতিসংঘের হিসেবে এ সংঘাতের কারণে প্রায় চার লাখেরও বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।

স্থানীয় নেতারা জানিয়েছে, দুশোর বেশি বেসামরিক নাগরিক এমণ্ড২৩ অধিকৃত এলাকায় নিহত হয়েছে। এ ছাড়া গোমার হাসপাতালে শত শত মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছে। গোমার অ্যাংলিকান বিশপ মার্টিন গর্ডন বলেন, দেশটিতে লড়াই চলছে অনেক দিন ধরে। মানুষ শান্তির জন্য যে কোনো কিছু করতে প্রস্তুত। গত কয়েকদিনে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের গোমা ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বেসামরিক নাগরিকদের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছে। এ মানবাধিকার সংস্থাটি বিবাদমান দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, চলমান এ সংঘাত ওই অঞ্চলে মানবিক সংকটের জন্ম দেবে।

এমণ্ড২৩ ডিআর কঙ্গোর খনিজ সমৃদ্ধ বিশাল এলাকায় ২০২১ সাল থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছে। জাতিসংঘ ও ডিআর কঙ্গো বলছে, এম ২৩-কে সমর্থন যোগাচ্ছে রুয়ান্ডা। রুয়ান্ডা কর্তৃপক্ষ এটি স্বীকার বা প্রত্যাখ্যান করেনি। এর আগে রুয়ান্ডা বলেছিল, ডিআর কঙ্গো কর্তৃপক্ষ ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত কিছু ব্যক্তির সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। ২০১২ সালে বিদ্রোহী গ্রুপ এমণ্ড২৩ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তারা তখন তুতসি জনগোষ্ঠীর মানুষকে সুরক্ষা দেয়ার কথা বলেছিল। অন্যদিকে রুয়ান্ডার সমালোচকরা বলছে, ডিআর কঙ্গোর পূর্বাঞ্চল থেকে সোনাসহ বিভিন্ন মূল্যবান খনিজ সম্পদ লুটপাটের জন্য রুয়ান্ডা এম ২৩-কে ব্যবহার করছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত