ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাক্ষরিত একটি নির্বাহী আদেশের ওপর ভিত্তি করে মুসলিমপ্রধান বা আরব দেশগুলোর ভ্রমণকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার গোষ্ঠীগুলো এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছেন ট্রাম্প। দায়িত্ব গ্রহণের দিনই তিনি অনেকগুলো নির্বাহী আদেশে সই করেন। আরব বংশোদ্ভুতদের প্রতি বৈষম্যবিরোধী সংগঠন আমেরিকান-আরব অ্যান্টি-ডিসক্রিমিনেশন কমিটি (এডিসি) বলেছে, ২০১৭ সালে ট্রাম্প ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। সেটিকে ন্যায্যতা দিতে যে আইন ও বিধি অনুসরণ করা হয়েছিল, সেগুলোর ওপর নির্ভর করে নতুন আদেশটি দেয়া হয়েছে। নতুন আদেশটির আওতায় ভিসা-সংক্রান্ত অনুরোধ প্রত্যাখ্যান ও এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী ব্যক্তিদের অপসারণের সুযোগ আরো বিস্তৃত হবে।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহযোগিতার জন্য একটি নতুন ২৪ ঘণ্টার হটলাইন চালু করেছে এডিসি। দ্য ন্যাশনাল ইরানিয়ান আমেরিকান কাউন্সিল (এনআইএসি) বলেছে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে বিদেশি সন্ত্রাসী, অন্য জাতীয় নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তা হুমকি থেকে সুরক্ষিত রাখা-সংক্রান্ত যে নির্বাহী আদেশটি দিয়েছেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের পরিবারগুলোকে প্রিয়জন থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ভর্তির হার কমে যাবে। ট্রাম্প উল্লিখিত নির্বাহী আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার, গোয়েন্দা ও স্বরাষ্ট্রবিষয়ক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের ৬০ দিনের সময়সীমা দেয়া হয়েছে। যেসব দেশের যাচাই-বাছাই ও তল্লাশি করার প্রক্রিয়া ‘ত্রুটিপূর্ণ’, সেসব দেশ এ সময়ের মধ্যে চিহ্নিত করতে হবে। সেসব দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর আংশিক বা সম্পূর্ণ স্থগিতাদেশ জারি করার জন্য এ প্রক্রিয়া চালানো হবে।

২০১৭ সালে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর ৭টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের ভ্রমণকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। নতুন আদেশটি আরও বিস্তৃত। নতুন আদেশে বলা হয়েছে, যেসব মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, সংস্কৃতি, সরকার, প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠাকালীন নীতির প্রতি শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব পোষণ করবে, তাদের ভিসা বা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দেয়া হবে। তাছাড়া এ আদেশ এমন একটি প্রক্রিয়ার সূত্রপাত করেছে, যা ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে দেয়া ভিসাগুলো বাতিলের পথ করে দিতে পারে। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের ব্যাপারে রয়টার্সের পক্ষ থেকে হোয়াইট হাউসকে বারবার প্রশ্ন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা ও ভিসা কর্মকর্তা জোসেফ বারটন এনআইএসি আয়োজিত এক কনফারেন্স কলে বলেন, নতুন আদেশটির আওতায় সরকার শিক্ষার্থী, কর্মী ও শিক্ষা আদান-প্রদান কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিসা প্রত্যাখ্যানের সুযোগ পাবে।

ট্রাম্পের স্বাক্ষরিত ওই আদেশটির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া বা না নেয়ার বিষয়ে আসন্ন দিনগুলোয় সিদ্ধান্ত নেবে এডিসি। সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক আবেদ আইয়ুব গণমাধ্যমকে এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক নজির স্থাপন করেছে। আবেদ আইয়ুবের আশঙ্কা, ভবিষ্যতে ডেমোক্রেটিক প্রশাসন ক্ষমতায় এলে তখন ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধেও এ পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে। আবেদ আইয়ুবের আশঙ্কা, এ আদেশের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ব্যক্তিরা কী বললেন বা কী মত প্রকাশ করলেন, তার ওপর ভিত্তি করে তাদের বহিষ্কার করা যাবে। যদি তারা এমন কোনো প্রতিবাদে যোগ দেন, যাকে প্রশাসন বৈরী বলে মনে করতে পারে, তাহলে তাদের ভিসা বাতিল হতে পারে।

এমনকি তাদের ফেরতও পাঠানো হতে পারে। ট্রাম্প বারবারই বলে আসছেন, নির্দিষ্ট দেশ ও নির্দিষ্ট মতাদর্শের মানুষের ওপর তিনি ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করবেন। এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা চলার সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা, লিবিয়া, সোমালিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বিবেচিত দেশের মানুষের ওপর ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন তিনি। ট্রাম্প আরও বলেছেন, সাম্যবাদী, মার্ক্সবাদী ও সমাজতান্ত্রিকেরা যেন যুক্তরাষ্ট্রে না ঢুকতে পারে, তা নিশ্চিত করতে তিনি উদ্যোগ নেবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত