ইসরায়েলের অত্যাচারে দিন দিন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে পশ্চিম তীরের বাসিন্দাদের জীবন। বেড়েছে সেনাদের দখলদারিত্ব। গড়ে উঠেছে চেকপয়েন্ট আর লোহার গেট। ফলে নিজ গ্রামে ঢুকতেও বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন রামাল্লার বাসিন্দারা। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রামাল্লার গ্রামগুলোতে কমপক্ষে ১১৯টি লোহার গেট স্থাপন করেছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের নির্দেশেই খোলা রাখা হয় গেটগুলো।
ঘরে ফিরতে দেরি হলেই বন্ধ করে দেয়া হয় সেই প্রবেশপথগুলো। ফলে মাঝেমধ্যে তীব্র ঠান্ডায় রাস্তায় দিন কাটাতে হয় বাসিন্দাদের। আতারা গ্রামে বসবাসকারী বারঘৌতি বলেন, ‘প্রতিটি গ্রামে এখন একটি গেট আছে। খোঁয়াড়ে যেমন ভেড়া আটকে রাখা হয়, ঠিক সেভাবেই তারা আমাদের আটকে রাখে। এক কথায়, পশ্চিম তীরের রামাল্লা এখন ইসরায়েলের খোয়াড়।’
ইসরায়েল-হামাসের যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রামাল্লায় নতুন চেকপয়েন্ট এবং গেট তৈরি করছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এগুলো গ্রাম এবং শহরে প্রবেশাধিকার কঠিন করে তুলেছে। প্রধান পরিবহণ রুট থেকে পুরো সম্প্রদায়কে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। পিএ জানিয়েছে, পশ্চিম তীরে এখন প্রায় ৯০০টি বাধা রয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, এসব বাধা শুধু চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে না; বরং কৃষি, সামাজিক ও জীবিকার সুযোগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলে। ইসরায়েলি সেনাদের নির্দেশে রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত গেট বন্ধ রাখা হয়। বাকি সময় খুলে রাখা হয়। কেউ রাত ৯টা পার করলেই আর ফিরতে পারেন না নিজ ঘরে। রামাল্লার রেস্তোরাঁয় কাজ করা বাসিন্দারা তাদের গ্রাম আতারায় ফিরতে দেরি হলে ঠান্ডায় বাইরেই রাত কাটাতে হয়।
৬৮ বছর বয়সী রামজিয়া দাহাব্রেহ বলেন, ‘আমাকে চিকিৎসার জন্য প্রায়ই রামাল্লায় যেতে হয়; কিন্তু চেকপয়েন্টের কারণে যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়েছে।’ এদিকে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর আসন্ন হুমকি মোকাবিলা করার জন্য পশ্চিম তীরে তাদের আক্রমণাত্মক অভিযান এবং সেখানে অবাধ চলাচলের নতুন বাধাগুলো তৈরি করা প্রয়োজন। চেকপয়েন্টগুলোর মাধ্যমে গ্রেপ্তার, অস্ত্র জব্দ এবং আক্রমণ প্রতিরোধ করা হয়।
গত শুক্রবার অনলাইনে পোস্ট করা একটি ফুটেজে দেখা গেছে, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি গ্রাম তুরমুসায়ার কাছে একটি নতুন অবৈধ ফাঁড়ি স্থাপন শুরু করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে পশ্চিম তীরে অবৈধ দখলের পাশাপাশি সহিংসতাও বেড়েছে। পশ্চিম তীরেও সামরিক বাহিনী বৃহৎ পরিসরে হামলা চালিয়ে শত শত মানুষকে হত্যা করেছে। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতাও বাড়ছে। গত মাসে প্রায় ৫০ জন ইসরায়েলির একটি দল উত্তর-পশ্চিম তীরের দুমা গ্রামের বাড়িঘরে হামলা চালায়। তাদের সম্পত্তি পুড়িয়ে দেয়।