ঢাকা ১০ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

যোগ্যতা, কর্মনিষ্ঠা ও সততার অনন্য উচ্চতায় ডিএমপির পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান

যোগ্যতা, কর্মনিষ্ঠা ও সততার অনন্য উচ্চতায় ডিএমপির পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৩৬তম পুলিশ কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)। জনবান্ধব, আধুনিক ও পজিটিভ পুলিশিংয়ের রোল মডেল হিসেবে যার প্রশংসা সর্বস্তরে। ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রধানের পদ থেকে ব্যস্ততম ও জনবহুল ঢাকা মহানগরীর পুলিশ কমিশনার হিসেবে তার আবির্ভাবকে কেন্দ্র করে ডিএমপির বাসিন্দাদের মাঝে স্বস্তির আনন্দ মিলেছে। হাবিবুর রহমান এমনি একজন পুলিশ কর্মকর্তা- যিনি তার মেধা, প্রজ্ঞা, যোগ্যতা, কর্মনিষ্ঠা ও সততার গুণে পৌঁছে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। পুলিশ বিভাগে ধারাবাহিক সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পর্যন্ত তিনি তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও দুইবার রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছেন। এছাড়া তিনি দুইবার সাফল্যের সহিত বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন কর্মঠ ও নিবেদিত উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার বাইরে তিনি একজন সফল ক্রীড়া সংগঠক, লেখক, গবেষক, সমাজ সংস্কারক, সমাজসেবক এবং বাংলাদেশ পুলিশ প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা ‘ডিটেকটিভ’ এর সম্পাদকও। তার চেয়েও বড় কথা বহুমাত্রিক প্রতিভাসম্পন্ন হাবিবুর রহমানের বড় গুণ তিনি একজন আদর্শ ও মানবিক ব্যক্তিত্ব যা তাকে সবকিছু থেকে এগিয়ে রেখেছে। ১৯৬৭ সালের ১ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ জেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের আব্দুল আলী মোল্লা এবং মোসাম্মৎ রাবেয়া বেগম দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন হাবিবুর রহমান। শৈশব থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি খেলাধুলা, শিল্প-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তিনি নিবেদিতপ্রাণ। এসএম মডেল হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক শেষ করে গোপালগঞ্জের সরকারি বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৭তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। চাকরি জীবনে যে কর্মস্থলেই দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানেই রেখে এসেছেন তার সৃষ্টিশীল চিন্তাচেতনা আর ব্যতিক্রমী কর্মস্পৃহার স্বাক্ষর। ছাত্রজীবনে পড়াশুনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা করতেন, কিন্তু সেটা নিজের জন্য নয় সেটি ছিল সমাজের উন্নয়নের জন্য। তার ছোট ছোট প্রতিবেদনে স্থান পেতো সমাজের বিভিন্ন জরাজীর্ণতা ও সাধারণ মানুষের কষ্টগুলো। সাংবদিকতার পেশা থেকে তিনি কোনো দিন কোনো সুবিধা নেননি। বলা যায়, এই সাংবাদিকতা পেশা থেকেই হাবিবুর রহমানের লেখালেখির হাতেখড়ি এবং এই অনন্য গুণটি পেশাগত জীবনে তাকে দিন দিন উচ্চতর স্থানে প্রতিষ্ঠিত করছে। নিজের নেতৃত্ব ও সৃজনশীলতা দিয়ে প্রশিক্ষণ স্যুভেনির ‘আমার হলো শুরু’র সম্পাদক নির্বাচিত হন যেখানে নিজের গবেষণালব্দ লেখনিতে স্থান পায় বাংলাদেশ পুলিশের শেকড়সন্ধানী ইতিহাস, ঐতিহ্য ও করণীয় নির্ধারণ সম্পর্কিত নানা দিক। সাংবাদিকতার পর পুলিশ হিসেবে সেই যে লেখালেখি শুরু করলেন এরপর আর কখনো পিছু হটেননি। পুলিশে ঐহিত্যবাহী মাসিক ম্যাগাজিন ‘ডিটেকটিভ’ এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক পরে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে এটির গুণগত, ভাষাগত ও প্রকাশনাগত আমূল পরিবর্তন এনে ডিটেকটিভকে পুরো পুলিশ বাহিনীর জন্য একটি সমৃদ্ধ মুখপাত্র হিসেবে পাঠকের সামনে হাজির করেছেন তিনি। ২০০৯ সালে ডিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর দপ্তর) পদে থাকাকালীন তিনি ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি গ্রন্থ সম্পাদনা করেন যার মাধ্যমে সর্বপ্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশের অগ্রণী ভূমিকা প্রকাশ্যে আসে বেশ বড় পরিসরে। একই সময়ে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা করেন ‘পুলিশ ব্ল্যাড ব্যাংক’ যা দেশের যে কোনো আধুনিক প্রাইভেট ব্ল্যাড ব্যাংকের মতোই উন্নত সেবাদানে সক্ষম। পুলিশ ব্ল্যাড ব্যাংক’ বর্তমান শুধু পুলিশ সদস্যদেরই রক্ত সরবরাহ করে না, যে কোনো প্রয়োজনে অসহায় ও মুমূর্ষু রোগীর পাশে দাঁড়াচ্ছে। পুলিশ ব্ল্যাড ব্যাংকের পথযাত্রা ছিল হাবিবুর রহমানের অনন্য অবদান।

২০১২ সালে হাবিবুর রহমান ঐতিহ্যবাহী ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি ঢাকা জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে অভিনব সব কলা-কৌশল অবলম্বন করে ব্যপক প্রশংসিত হন। এ সময় মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ইতিহাস ঐতিহ্যকে সমগ্র জাতির সম্মুখে চিরস্মরণীয় কর রাখতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে অবস্থিত টেলিকম ভবনের পাশে ‘বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার থাকাকালীন তিনি সাভারে বসবাসরত ২০ হাজারেরও বেশি বেদে জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বেদে জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ১০৫ জন বেদে নারীকে সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে পোড়াবাড়িতে কর্মসংস্থানের জন্য মিনি গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। সাপ খেলা দেখানোর পেশা থেকে ফিরিয়ে এনে ৩৫ জন বেদে যুবককে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রত্যেকের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করা, কোচিং সেন্টার ও কম্পিউটার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে বেদে ছেলে-মেয়েদের পড়া লেখার অতিরিক্ত সুযোগ তৈরি করা, সরকারি সহযোগিতায় ১৮টি জরাজীর্ণ রাস্তা মেরামত করা, একটি মসজিদ নির্মাণ করা এবং স্থানীয় বেদে জনসাধারণের জন্য একটি পাকা ইদগাহ নির্মাণ করাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করেন। তিনি উত্তরণ ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন যার মাধ্যমে সাভারের বেদে পল্লির বাসিন্দাদের জন্য প্রায় ৩০০টি ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সাভারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মুন্সীগঞ্জের বেদে শিশুদের জন্যও গড়ে তোলা হয়েছে স্কুল ও কম্পিউটার সেন্টার। তিনি বেদে জনগোষ্ঠীর মধ্যে থেকে পরিচিত কয়েকজনকে ডেকে জানতে পারলেন যে এটি বেদে জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা যার নাম ‘ঠার’। তিনি ভাষাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেষ্টা করেন এবং বেশকিছু শব্দ ও বাক্য নিজের নোট বুকে লিখে রাখেন। এরপর খোঁজ করতে থাকেন এই ভাষাটি আসলে কীভাবে এলো, কারা ব্যবহার করছে এবং বাংলাদেশের কোন কোন প্রান্তে এই ভাষাটি ব্যবহৃত হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি এটি নিয়ে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। তিনি উপলব্দি করলেন যে ‘ঠার’ ভাষাটি বাংলাদেশের বিলুপ্তপ্রায় ভাষাগুলোর মধ্যে একটি এবং এই ভাষাটি সংগ্রহ বা সংরক্ষণে তেমন কোন কাজও হয়নি। ভাষা বিজ্ঞানের উপর দক্ষতা না থাকায় প্রথমে তাকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রফেসরের নিকট কিছুদিন প্রাইভেটও পড়েছেন যার ফলে ভাষা বিজ্ঞানের খুঁটিনাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রপ্ত করতে সক্ষম হন তিনি। বিলুপ্তপ্রায় ঠার ভাষাটির আদ্যপান্ত উদ্ধার করে এটির পূর্ণ গঠন, পঠন ও ব্যবহারিক রূপ দিতে প্রায় আট বছর সময় লেগে যায়। বর্তমান পদে আসীন হবার আগে ২০১৯ সালের ১৬ মে থেকে তিনি ঢাকার রেঞ্জ ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন হাবিবুর রহমান। তিনি ক্রীড়াঙ্গনে থিতিয়ে যাওয়া জাতীয় খেলা কাবাডিকে মূলধারায় তুলে এনেছেন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সুনাম কুড়িয়ে চলেছেন। ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে এখন তিনি বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক, এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশনের সহ-সভাপতি এবং আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশনের সহ-সভাপতির দায়িত্বও সামলাচ্ছেন কার্যকরভাবে। গোপালগঞ্জের পবিত্র ও উর্বর মাঠি ফুড়ে জন্ম নেওযা হাবিবুর রহমান এই দেশের ১৮ কোটি মানুষের অতি ক্ষুদ্রাংশের বৃহত্তর সমস্যাগুলো নিয়ে নিরন্তর লড়ে যাচ্ছেন - যে সমস্যাগুলোও ঠিক মানুষের তৈরি। হাবিবুর রহমান এই ধরিত্রীর একজন আলোকিত মানবিক বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশের মনুষ্যসৃষ্ট চলমান বৈষম্যগুলো দূর করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় সফল হবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা। মানবতা, উদারতা ও আন্তরিকতা মিলে হাবিবুর রহমান তারুণ্যের এক স্বপ্নীল মানুষ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত