নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলায় মানুষের হৃদয়ে সৃষ্টিকর্মে বেঁচে আছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী মাস্টার। স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণে রয়েছে সাহসী ভূমিকা ও অনবদ্য অবদান। শিক্ষাদানে রয়েছেন পথিকৃত হয়ে। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৯ মাসে নরসিংদী জেলার বিভিন্ন থানায় শতাধিক যুদ্ধ, খণ্ডযুদ্ধ ও অসংখ্য অপারেশন হয়। এসব যুদ্ধ ও পাকিস্তানি বাহিনীর নিপীড়ন-নির্মমতার শিকার হয়ে শহীদ হন নরসিংদীর ১১৬ বীর সন্তান। সশস্ত্র যুদ্ধে জেলার বিভিন্ন স্থানে শত শত নারী-পুরুষকে নির্বিচারে হত্যা করে গণকবর দিয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী। সেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা মনে হলে এখনো শিউরে ওঠে এলাকাবাসী। মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন। মুক্তিসেনার রক্তে রঞ্জিত এক সুদীর্ঘ সংগ্রামের ফসল বাংলাদেশ- বিশ্বের মানচিত্রে এক স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। এক সাগর রক্ত ও ৩০ লাখ প্রাণ ও প্রায় ৩ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এ স্বাধীনতা। রাজনৈতিকভাবে অগ্রসরমান নরসিংদী জেলায় মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল এক অদম্য শক্তি নিয়ে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতার প্রতিশোধ নিতে একদল তরুণ ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক অটুট মনোবল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। মারণাস্ত্রের চেয়ে মনোবলই যে অধিকতর শক্তিশালী, পুরো যুদ্ধকালে তার প্রমাণ রেখেছেন। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাসে নরসিংদী জেলার বিভিন্ন স্থানে শতাধিক খণ্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের কথা মনে করে এখনও ভয়ে আঁতকে ওঠে নরসিংদীবাসী। পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতার সাক্ষী আছে নরসিংদী জেলাজুড়ে অনেক গণকবর। এগুলোর মধ্যে নরসিংদী শহরের টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিস, শ্মশানঘাট, খাটেহারা সেতু, শীলমান্দি, রায়পুরা উপজেলার পরিষদ ভবন, মেথিকান্দা রেলওয়ে স্টেশন, রামনগর, বেলাব বড়িবাড়ী, পলাশের জিনারদী রেলওয়ে স্টেশন ও শিবপুরের ঘাসিরদিয়া, পুটিয়া উল্লেখযোগ্য।
স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরু থেকেই নরসিংদী জেলায় প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়গাঁথা স্মৃতিতে আজও বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী মাস্টারের অবদান উঠে আসে সহজেই। মনোহরদী উপজেলার পীরপুর গ্রামে এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৩৮ সালের ৯ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন জাতির এ বীর সন্তান। জীবদ্দশায় ধারণ করেছেন দেশ ও মানুষের প্রতিচ্ছবি। নিজ গ্রামের মানুষদের কল্যাণে নিবেদিত ছিলেন। আত্মমর্যাদা, সুশিক্ষা ও সৃজনশীলতায় ছিলেন অন্যরকম দৃষ্টান্ত। শত বাস্তবায়তার মধ্যে পরিচয় দিয়েছেন সততা ও সাধুতার। যত দিন বেঁচে ছিলেন শিক্ষার আলো ছড়িয়েছেন গ্রামান্তরে। ১৯৯৯ সালের ২২ নভেম্বর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী মাস্টার। কিংবদন্তি তারুণ্যের এই প্রিয় মানুষটিকে ধারণ করতে এরইমধ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী মাস্টার স্মৃতি গণপাঠাগার। শওকত আলী কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে পাঠাগারটি শুরুতে ছোট্ট পরিসরে যাত্রা করলেও বর্তমানে বিশাল হলরুম, বই পড়ার জায়গা, সেমিনার রুম ও দৃষ্টিনন্দন লাইব্রেরিতে রূপ নিয়েছে।