পাঠাগার সমাজ উন্নয়নের বাহন। একটি জাতির মেধা, মনন, ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারণ ও লালনপালনকারী হিসেবে গ্রন্থাগার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সর্বসাধারণের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রন্থাগারের সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রয়েছে। সুন্দর কথাগুলো বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী মাস্টার স্মৃতি গণপাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. ইকবাল হোসাইন। তিনি বলেন, মানুষের বই পড়ার আগ্রহ থেকেই পাঠাগারের উৎপত্তি। পাঠাগার একটি জাতির বিকাশ ও উন্নতির মানদ-। পাঠাগার মানুষের বয়স, রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী বই সরবরাহ করে থাকে। গ্রন্থাগারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে সংহতি, যা দেশ গড়া কিংবা রক্ষার কাজে অমূল্য অবদান। ছাত্রজীবন ভবিষ্যৎ জীবনের বীজ বপনের সময়। আজকের ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি। এ গুরু দায়িত্ব পালন করতে হলে ছাত্রদের মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে এবং তাদের বুদ্ধিবৃত্তিকেও শাণিত করতে হবে; কিন্তু পাঠ্যপুস্তকের বিদ্যায় কখনই জ্ঞানার্জন পূর্ণ হয় না। নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার পীরপুর গ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী মাস্টার স্মৃতি গণপাঠাগার প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন সমাজের সবস্তরে। অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে এই পাঠাগারটি পরিচালিত হয়ে আসছে। সবুজে ঘেরা প্রকৃতির মধ্যে দৃষ্টিনন্দন এই পাঠাগারটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার লাইব্রেরি প্রবন্ধে পাঠাগার সম্পর্কে লিখেছেন, ‘কত নদী সমুদ্র পর্বত উল্লঙ্ঘন করিয়া মানবের কণ্ঠ এখানে আসিয়া পৌঁছিয়াছে- কত শত বৎসরের প্রান্ত হইতে এই স্বর আসিতেছে।’ অর্থাৎ লাইব্রেরিতেই মানব হৃদয়ের উত্থান-পতনের শব্দ শোনা যায়। এ জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রবন্ধটিতে লাইব্রেরিকে মহাসমুদ্রের কল্লোল ধ্বনির সঙ্গে তুলনা করেছেন। ছাত্রদের রয়েছে সমাজের প্রতি, রাষ্ট্রের প্রতি নানা দায়িত্ব। এ জন্য নিজেকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে সে আদর্শ মান+ুষ হয়ে উঠতে পারে। কারণ আদর্শ মানুষই দেশের প্রকৃত সম্পদ। নিজেকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে বই পড়া। বই পড়াই আনন্দের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম। বই হতে পারে নিঃসঙ্গতা কাটানোর বিশেষ মাধ্যম। পাঠাগারে থাকে নানা বিষয়ের নানা মতের বই। পাঠাগারের বই-পুস্তক ও পত্র-পত্রিকা একজন শিক্ষার্থীকে স্বশিক্ষিত মানুষ তৈরিতে সহায়তা করে। বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী মাস্টার স্মৃতি গণপাঠাগারের পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুর রহমান মাসুম বলেন, পাঠাগার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতের সেতুবন্ধন রচনার অনন্য মাধ্যম। মানুষের চিন্তাভাবনা, বাস্তবতা ও কল্পনা বইয়ের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়। তাই ছাত্রজীবনে পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। মানুষের পছন্দের কথা বিবেচনায় রেখে যেখানে গ্রন্থ নির্বাচন করা হয় তা সর্বজনীন লাইব্রেরি। স্কুল-কলেজের লাইব্রেরিতে পাঠ্যবিষয় ও পাঠসহায়ক বিষয়ের পাশাপাশি সাহিত্য, বিজ্ঞান, ইতিহাস, খেলাধুলা প্রভৃতি বিষয়ের ওপর লেখা বই এবং বিভিন্ন পত্রিকা ও সাময়িকী রাখা হয়। সাহিত্য চর্চার জন্য কল্পনাশক্তির পাশাপাশি প্রয়োজন বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং ব্যাপক অধ্যয়ন ও অনুশীলন। প্রমথ চৌধুরী তার ‘বই পড়া’ প্রবন্ধে বলেন, সাহিত্যচর্চা শিক্ষার প্রধান অঙ্গ এবং সাহিত্যচর্চার জন্য লাইব্রেরি অপরিহার্য। প্রমথ চৌধুরী লাইব্রেরিকে স্কুল-কলেজের ওপর স্থান দিয়েছেন। নিজের অস্তিত্ব ও স্বজাতির বিশেষত্ব তথা ইতিহাস-ঐতিহ্য অনুসন্ধান করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনুসন্ধান এবং দেশীয় সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় এবং এসবের বিকাশ সাধনে লাইব্রেরির ভূমিকা অপরিহার্য। গ্রন্থাগার শুধু সমাজ সংস্কারের কাজই করে না, তা সমাজের সামগ্রিক বিকাশের স্থায়ী উপকরণ হিসেবেও ভূমিকা পালন করে।