ঢাকা বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঈদের অনুগল্প

সার্কাস জীবন

সার্কাস জীবন

বাঁশ নামিয়ে শিশু বাচ্চাটাকে গ্লুকোন ডি খাওয়াচ্ছিল সুরজামাল। চোঁ চোঁ করে পুরোটা গিলে খাচ্ছিল মেয়েটা। ভর রৌদ্দুরে অতোক্ষণ সরু একটা বাঁশের মাথায় ওভাবে সেঁটে থাকা চাট্টিখানি কথা? সার্কাস দেখা শেষ হলে আস্তে আস্তে লোকজনের ভিড় পাতলা হচ্ছিল। খেলোয়াড়ের কাছাকাছি গিয়ে আমি বললাম, এইটুকুন বাচ্চাকে বাঁশের ওপরে তুলে খেলা দেখাও! ভয় করে না? নির্বিকারভাবে আমার দিকে তাকিয়ে হাত বাড়াল লোকটা। নাম জানতে চাইলে সে জানাল, তাঁর নাম সুরজামাল আর মেয়ের নাম সূর্যবান। ওয়ালেট থেকে আমি একটা ১০০ টাকার চকচকে নতুন নোট বাড়িয়ে দিলাম সূর্যবানের হাতে!

মেয়ের হাতে টাকা দেখে তেঁতো হেসে সুরজামাল বলল, দেখলেন তো এই হইল বড়লোকদের দয়ার দান! অন্তরের তুষ্টি। এইটা আমার নির্দোষ মাইয়াডায়ও চিন্নে গেছে। আমি জানি এইটা খারাপ। খুব খারাপ। বাপ হয়ে নিজেরে দোষ দিই সবসুমায়। মাইয়ার জীবনবাজি রাইখা বাঁশের উপর তুলতে চাই না। কিন্তু খিদা পেটে কানতে কানতে (কাঁদতে) ও-ই বলে, বাবা চলো, খেলা দেখাই! আমারে বাঁশের উপরে উডাইলে তো, দুই বেলাই ভাত-রুটি খাইতে পারমু...!

আপনে কইবেন, কাজ করিস না ক্যান! নিজ মাইয়ার জীবনের দামে কোন বাপ খাইতে চায়? কিন্তু আমারে কেউ কামে নেয় না। তাই ভুখণ্ডএর কাছে বাপ হওয়ারে বিক্রি করি রোইজ! ওর কথার কোনো উত্তর খুঁজে না পেয়ে চলে আসছিলাম। পিছু ডাকলো সুরজামাল, ‘দাদা, আপনি ১০০ টাকা না দিয়ে ৫০ টাকা দিলেও পারতেন। সবাই তো ২০-৩০-এর বেশি দেয়ও না। আপনারে ভালো মানুষ মনে হইছে, আপনি তারচেয়ে ৫০ টাকা কোনও এতিমখানায় দিয়ে আল্লাহর কাছে কৃপা চাইবেন, আমার মাইয়াটার জন্য! কী জানি, আপনার দোয়া হয়তো লাইগে যেতে পারে। এইটুকু করেন হে’র (সূর্যবান) ভালোর জন্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত