ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মানকালির ধাপ মসজিদ

ড. খোন্দকার আলমগীর
মানকালির ধাপ মসজিদ

পনেরো গুম্বুজের ধ্বংসপ্রায় মসজিদটি বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থানগড়ে করতোয়া নদীর পাড়ে অবস্থিত। এটি মানকালির কুণ্ড নামে পুকুরের পশ্চিম পাড়ে একটি পুরোনো ঢিবির ওপর অবস্থিত। ঢিবির অভ্যন্তরে পূর্ববর্তী কোনো স্থাপনা থাকতে পারে। এ স্থানে একটি অসমাপ্ত জৈন মূর্তি পাওয়া যায়। মূর্তিটি বর্তমানে রাজশাহী বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে রক্ষিত আছে। কানিংহাম এখানে প্রাচীন নাগরী লিপিতে উৎকীর্ণ একটি শিলালিপি পেয়েছিলেন। মসজিদটির উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে পরিখা রয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খননের ফলে ১৯৬৫-৬৬ সালে মসজিদটি উন্মোচিত হয়। মসজিদটির পরিমাপ ২৬.২১ মি. ী ২৪.৪৯ মি.। মসজিদের অভ্যন্তরে মুক্তভাবে দণ্ডায়মান আটটি স্তম্ভ রয়েছে। আদিতে পনেরোটি গুম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত থাকলেও বর্তমানে এটির ওপর কোনো গুম্বুজ নেই। মসজিদটির পুব দিকে পাঁচটি প্রবেশ-পথ এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে তিনটি করে প্রবেশ-পথ আছে। পুব দিকের প্রবেশ-পথের সোজাসুজি কিবলা দেওয়ালে পাঁচটি মিহরাব আছে। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি বাইরের দিকে উদ্গত। কেন্দ্রীয় মিহরাবের পার্শ্বে একটি মিম্বর (শুক্রবারে ইমামের খুৎবা দেওয়ার স্থান) আছে। উত্তর-পশ্চিম কোনায় একটি জেনানা গ্যালারি (মহিলাদের নামাজ পড়ার স্থান) ছিল বলেও অনুমান করা হয়।

এ মসজিদের চার কোনায় কোনো বুরুজ নেই। উল্লেখ্য যে, সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর মসজিদ ও বরগুনা জেলার বিবি চিনি মসজিদের চার কোনায়ও কোনো বুরুজ সংযুক্ত নেই। এ মসজিদের মেঝেতে আয়তাকার কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম (দিক্কাতুল মুবাল্লিগ) আছে। এ বৈশিষ্ট্য মসজিদটি একটি মাদ্রাসা হিসেবে ব্যবহৃত হওয়াও নির্দেশ করে। বাংলার আরও কয়েকটি মসজিদে এবং বাংলার বাইরেও এরূপ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। হজরত পা-ুয়ার আদিনা মসজিদ ও কুতুব শাহি মসজিদ, বাগেরহাটের ষাইট গুম্বুজ মসজিদ, ঝিনেদা জেলার বারবাজারের সাতগাছিয়া, মনোহর ও পিরপুকুর মসজিদেও এরূপ প্ল্যাটফর্ম দেথা যায়। ছয় গুম্বুজের দুটি মসজিদের নকশা পাশাপাশি রেখে যদি তিনটি চৌচালা দ্বরা সংযুক্ত করা যায়, তবে একটি পনেরো গুম্বুজ মসজিদের নকশা পাওয়া যায়। এ মসজিদটি ১৩০০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে নির্মিত হয়। তাই এটি বাংলার প্রাচীনতম মসজিদগুলোর একটি। সেদিক থেকে এটি পশ্চিম বাংলার হুগলি জেলার ত্রিবেণীতে অবস্থিত জাফর খান গাজীর মসজিদের (১২৯৬-৯৭ খ্রিষ্টাব্দ) সমসাময়িক।

বাংলার অন্যান্য পনেরো গুম্বুজের মসজিদগুলো হলো : ঝিনেদা জেলার বারবাজারের পিরপুকুর মসজিদ; চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গৌড়ের দুধপুকুর ঢিবি মসজিদ; সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর মসজিদ ও নবগ্রাম মসজিদ এবং নওগাঁ জেলার মাহি সন্তোষ মসজিদ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গৌড়ে পনেরো গুম্বুজ মসজিদের কয়েকটি ধ্বংসাবশেষ আছে। চাঁপইনবাবগঞ্জ জেলার ছোট সোনামসজিদটিকে পনেরো গুম্বুজের মসজিদ বলা হলেও যেহেতু মধ্যবর্তী অংশে গুম্বুজের পরিবর্তে তিনটি চৌচালা ব্যবহৃত হয়েছে, তাই এটিকে পুরাপুরি পনেরো গুম্বুজের মসজিদ বলা যায় না।

লেখক : প্রত্নতত্ত্ববিদ, আর্ট হিস্টোরিয়ান ও গবেষক

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত