বাংলার সুলতানি স্থাপত্যের অলঙ্করণ বিষয়ে ঢাকায় বিশেষ সেমিনার অনুষ্ঠিত
মস্য়ূদ মান্নান এনডিসি
প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
গত ২৭ ডিসেম্বর এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশের অডিটোরিয়ামে (৫, ওল্ড সেক্রেটারিয়েট রোড, নিমতলী, ঢাকা) ইসলামিক আর্টস অর্গানাইজেশন বাংলাদেশের উদ্যোগে বাংলার সুলতানি স্থাপত্যের অলঙ্করণ বিষয়ে একটি বিশেষ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ‘বাংলার সুলতানি স্থাপত্যে শিকল-ঘণ্টার অলঙ্করণ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন জাতীয় বিশ্বদ্যিালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক প্রত্নতত্ত্ববিদ, আর্ট হিস্টোরিয়ান ও গবেষক ড. খোন্দকার আলমগীর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও ইসলামিক আর্টস অর্গানাইজেশন বাংলাদেশের সভাপতি ড. নাজমা খান মজলিস। সেমিনারের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মোহাম্মদ আব্দুর রহিম ও স্বাগত বক্তব্য পেশ করেন রাষ্ট্রদূত মস্য়ূদ মান্নান। পরে ড. খোন্দকার আলমগীরের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করেন ড. সাজেদা ইউসুফ। স্বাগত ভাষণে রাষ্ট্রদূত মস্য়ূদ মান্নান এনডিসি ইসলামিক আর্টস অর্গানাইজেশন বাংলাদেশের পরিচিতি তুলে ধরেন। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ড. সৈয়দ মাহমুদুল হাসানের মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত সংগঠনের প্রথম সেমিনারে প্রবন্ধ পাঠের জন্য তিনি ড. খোন্দকার আলমগীরকে ধন্যবাদ জানান।
ড. খোন্দকার আলমগীর তার প্রবন্ধে বাংলার সুলতানি স্থাপত্যে প্রস্তর ও পোড়ামাটির মাধ্যমে শিকল-ঘণ্টার অলঙ্করণের বহুল ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করেন। সুলতানি মসজিদে পুনর্ব্যবহৃত (reused) প্রাক-ইসলামি প্রস্তর-স্তম্ভের গাত্রে শিকল-ঘণ্টার প্রচুর অলঙ্করণ দেখা যায় এবং এ আমলে নতুনভাবে প্রস্তুত বিভিন্ন ইমারতে ব্যবহৃত নকশাগুলোতে এ মোটিফের একটি বিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এ আমলে শিকল কোথাও বিমূর্ত হয়ে আবহমান বাংলার ‘শিক্ষার’ রূপ পরিগ্রহ করেছে, আবার কোথাও বা প্রদীপের আকার ধারণ করেছে। আদিনা মসজিদের ‘মিহরাব’-এর অভ্যন্তর শিকলের সঙ্গে ঝুলন্ত প্রদীপ লক্ষ্যণীয়। এর দ্বারা ‘মিহরাব’কে মসজিদের অন্যান্য স্থান অপেক্ষা অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। একই সঙ্গে আলোকের দিকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে। মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরিফে আল্লাহকে আলোক (আন-নূর) বলা হয়েছে। বাংলার বিভিন্ন ইমারতে ব্যবহৃত এ অলঙ্করণের বৈচিত্র্য আলোচনা করে শিকল-ঘণ্টা ও এর বিভিন্ন বিমূর্ত রূপ বিশ্লেষণ পূর্বক এ প্রবন্ধে বিষয়টির বিবর্তনের একটি ধারা এবং তৎসহ পূর্ববর্তী দেশীয় ও লোকজ উৎসের সঙ্গে সম্পর্কও দেখানো হয়।
সেমিনারের নির্ধারিত আলোচক প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান এ ধরনের একটি প্রবন্ধ উপস্থাপনের জন্য ড. খোন্দকার আলমগীরকে অভিনন্দন জানান। তিনি তার বক্তব্যে শিল্প-ইতিহাসের সঙ্গে দর্শনের সম্পর্কটি তুলে ধরেন। বাংলার মুসলমানদের শিল্প-চর্চার পেছনে কোরআনের অনুপ্রেরণার দার্শনিক ভিত্তি আলোচনা করায় তিনি লেখককে ধন্যবাদ জানান। তবে প্রাক-মুসলিম যুগের শিল্প-চর্চা ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশের শিল্প-চর্চার ইতিহাসের দার্শনিক ভিত্তির তুলনামূলক আলোচনা সন্নিবেশিত হলে প্রবন্ধটি আরও সমৃদ্ধ হতো বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।
সভাপতির ভাষণে প্রফেসর ড. নাজমা খান মজলিস ইসলামিক আর্টস অর্গানাইজেশন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ ধরনের একটি সেমিনার আয়োজন করতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেন। সেমিনার আয়োজনের জন্য যারা উদ্যোগ নিয়েছেন এবং পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় করেছেন, তাদের তিনি ধন্যবাদ দেন। সুদূর বরিশাল থেকে এসে এ সেমিনারে নির্ধারিত আলোচক হিসেবে মূল্যবান বক্তব্য প্রদানের জন্য তিনি বিশিষ্ট দার্শনিক প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামানকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ প্রদান করেন। এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশের পরিচালনা পরিষদ তাদের অডিটরিয়ামে সেমিনার আয়োজনের অনুমতি প্রদান করায় তিনি এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃপক্ষকে বিশেষ করে সেক্রেটারি জেনারেল প্রফেসর ড. ছিদ্দিকুর রহমান খানকে ধন্যবাদ জানান। ভবিষ্যতে ইসলামিক আর্টস অর্গানাইজেশন বাংলাদেশের কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য তিনি উপস্থিত সুধীবৃন্দ ও সাংবদিকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।