শৈলকুপা শাহী মসজিদ, ঝিনেদা

(ষোড়শ শতাব্দীর শেষার্ধ)

প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ড. খোন্দকার আলমগীর

ছয় গম্বুজের আয়তাকার মসজিদটি ঝিনেদা জেলার শৈলকুপা উপজেলার শৈলকুপা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত শাহী মসজিদপাড়া গ্রাম ও ৫১ নং শেলকুপা মৌজার ২২৮২ খতিয়ানের ৫৩৫২ নং দাগে অবস্থিত। এটি পরগনা মোহাম্মদশাহীর অন্তর্গত। ঝিনেদা শহর থেকে খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের গাড়াগঞ্জ বাজার হয়ে এখানে যাওয়া যায়। গাড়াগঞ্জ বাসস্টপ থেকে এ স্থানটি প্রায় ৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত। গাড়াগঞ্জ থেকে সাইকেল, রিকশা বা অটো-ট্যাম্পোতে এখানে পৌঁছানো যায়। মসজিদটি শৈলকুপা বাজারের পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থিত।

ঢাকা ওয়াকফ প্রশাসকের দপ্তরে নিবন্ধনকৃত এটি একটি ওয়াকফ (ওয়াকফ আলাল আওলাদিয়া) সম্পত্তি (ই.সি. নং-১১৩৮)। মোতওয়াল্লির (২০০০) নাম মীর শামসুজ্জামান। মসজিদের উত্তর পার্শ্বে পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা একটি দিঘি আছে।

সাধারণ বর্ণনা : এ মসজিদের চার কোনায় গোলাকার চারটি বুরুজ রয়েছে। মসজিদের পুব দিকে তিনটি প্রবেশ-পথ এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি করে প্রবেশ-পথ রয়েছে। মিহরাব অংশটি পশ্চিম দিকে কিছুটা উদ্গত। মসজিদের অভ্যন্তরে অষ্টভুজাকৃতির দুটি খাটো স্তম্ভের ওপর ছয়টি গম্বুজ স্থাপিত। মসজিদের কিবলা দেওয়ালে অর্ধ-বৃত্তাকার তিনটি মিহরাব রয়েছে। ১৯৯৩-৯৪ সালে মসজিদটি পুব দিকে সম্প্রসারণ করা হয়। মসজিদের উত্তর-পুব দিকে একটি কুয়া এবং দক্ষিণ-পুব দিকে আরব শাহ ও তাঁর খাদিমের কবর রয়েছে।

মসজিদের সম্মুখ-ভাগ (Façade) : এ মসজিদের সম্মুখ-ভাগ পরবর্তীকালে পলেস্তারা করা হয়েছে। পুব দিকে তিনটি প্রবেশ-পথ রয়েছে। প্রধান প্রবেশ-পথের দুই পার্শ্বে দুটি গোলাকার স্তম্ভ সংযুক্ত আছে। প্রধান প্রবেশ-পথটি পার্শ্ববর্তী প্রবেশ-পথ দুটি অপেক্ষা বৃহত্তর। পার্শ্ববর্তী প্রবেশ-পথ দুটি বর্তমানে জানালা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এখানে লোহার জালি স্থাপন করা হয়েছে।

মসজিদটি পুব দিকে সম্প্রসারিত হওয়ায় আদি মসজিদের সম্মুখ অংশ সহজে দৃষ্টিগোচর হয় না। এ দিকে চার পাপড়িযুক্ত পুষ্প নকশার একটি আনুভূমিক সারি রয়েছে। তার উপরে পুষ্প-পল্লব ও জ্যামিতিক নকশার কয়েকটি সারি রয়েছে। বক্র ছাদ কিনারার (curved cornice)) উপরে বাংলা হরফে লেখা রয়েছে যে, মসজিদটি দরবেশ শাহ মুহম্মদ আরিফ রব্বানির (ওরফে আরব শাহ) নির্দেশে সুলতান হুসাইন শাহ কর্তৃক নির্মিত হয়। আরিফ রব্বানির খাদেম ছিলেন সৈয়দ আব্দুল কাদের বাগদাদি। ওই খাদেমের বংশধররা পার্শ্ববর্তী স্থানে অদ্যাবধি অবস্থান করছেন বলেও সেখানে লেখা আছে।

উত্তর দিক (বহির্ভাগ) : উত্তর দিকে কৌনিক খিলান-যুক্ত দুটি প্রবেশ-পথ আছে। প্রবেশ-পথ দুটি বর্তমানে জানালা হিসেবে লোহার জালি দ্বারা বন্ধ রয়েছে। দেওয়াল-গাত্রে জ্যামিতিক নকশা ও পুষ্প অলঙ্করণ রয়েছে। ছাদ থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য পাথরের দুটি নালি (gargoyles) রয়েছে।

দক্ষিণ দিক (বহির্ভাগ) : উত্তর দিকের অনুরূপ। ছাদের পানি নিষ্কাশনের জন্য এই দিকে একটি মাত্র নালি (gargoy) রয়েছে।

পশ্চিম দিক (বহির্ভাগ) : কিবলা দেওয়ালটি কেন্দ্রীয় মিহরাব বরাবর বাহিরের দিকে বর্ধিত। কিবলা দেওয়ালের নিচের অংশ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইটের তৈরি আদি অবস্থায় দেখা যায়। দেওয়ালের উপরের অংশে আনুভূমিক সারিতে অলঙ্করণ রয়েছে। তার ওপর রয়েছে বক্র ছাদ কিনারা।

অভ্যন্তর-ভাগ : আয়তাকার এ মসজিদের অভ্যন্তরীণ পরিমাপ ৯.৬০ মি. x ৬.৪০ মি.। পুব দিকে তিনটি প্রবেশ-পথ এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি করে কৌনিক খিলান-যুক্ত প্রবেশ-পথ রয়েছে। তবে পুব দিকের কেন্দ্রীয় প্রবেশ-পথটি পরবর্তীকালে বহুখাঁজবিশিষ্ট করা হয়েছে। পুব দিকের কেন্দ্রীয় প্রবেশ-পথ ব্যতিরেকে বাকি প্রবেশ-পথগুলো জানালা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এগুলোতে লোহার জালি ও কাঠের পাল্লা সংযুক্ত দেখা যায়। অষ্টভুজাকৃতির দুটি প্রস্তর স্তম্ভের ওপর স্থাপিত খিলানগুলোর ওপর ছয়টি গম্বুজ স্থাপিত আছে।

মিহরাব : মসজিদটির অভ্যন্তরে কিবলা দেওয়ালে অর্ধবৃত্তাকার তিনটি মিহরাব রয়েছে। মধ্যবর্তী মিহরাবটি বৃহত্তর। মিহরাবগুলোর অভ্যন্তরে পুষ্প-পল্লব ও জ্যামিতিক নকশাযুক্ত অলঙ্করণের আনুভূমিক সারি রয়েছে। মিহরাবগুলো আয়তাকার বন্ধনীর মধ্যে আবদ্ধ। কেন্দ্রীয় মিহরাবের উপরে আনুভূমিক সারিতে পোড়ামাটির ‘কলস’ ও পুষ্প অলঙ্করণ রয়েছে।

মসজিদের চার কোনায় চারটি বুরুজ রয়েছে। বুরুজগুলো ছাদ কিনারা ছাড়িয়ে ওপরে উঠে গেছে। এগুলোর ওপর আবার ছত্রী ও ফিনিয়াল রয়েছে। ছাদ কিনারার উপরের অংশ পরবর্তীকালের সংযোজন বলে মনে হয়।