সাধারণ বর্ণনা : ছয় গম্বুজের এই মসজিদটি নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার ৭ নম্বর জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্গত ৬০ নম্বর কাজীপাড়া মৌজার সি.এস. ৪৪৬ নম্বর দাগে অবস্থিত। ব্রিটিশ আমলের ল্যান্ড রেকর্ড অনুযায়ী পূর্বে এটি মহজমপুর পরগনার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এটি ঢাকা শহর থেকে ১৭ কি.মি. দূরে অবস্থিত। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুর বাসস্টপ হয়ে এখানে যাওয়া যায়। ঢাকা-বারদি রুটের লোকাল বাসেও এখানে যাওয়া যায়।
মসজিদের মূল অংশটি ছয় গম্বুজ বিশিষ্ট। এটি পূর্ব ও উত্তর দিকে বর্ধিত করা হয়েছে। একটি খোলা চত্বরের উত্তর-পুব কোণায় একটি মিনারও সংযোজন করা হয়েছে। মসজিদের পুব দিকে পুরাতন একটি কুয়া রয়েছে। খোলা চত্বরের দক্ষিণ-পুব কোণায় শাহ আলম (শাহ লঙ্গর)-এর মাজার রয়েছে। মসজিদের পুব দিকে পুব-পশ্চিমে লম্বা একটি পুকুর রয়েছে। মসজিদের অভ্যন্তরীণ পরিমাপ ৯.৫৭ মি. উত্তর-দক্ষিণ x ৮.০৫ মি. পূর্ব-পশ্চিম এবং বহির্ভাগের পরিমাপ ১২.৯৭ মি. উত্তর-দক্ষিণ x ৯.৩০ মি. পূর্ব-পশ্চিম। চারদিকের বক্র ছাদ কিনারা সোজা করা হয়েছে। এটি ঢাকা ওয়াক্ফ প্রশাসকের অধীনে নিবন্ধনকৃত একটি ওয়াকফ সম্পত্তি (মেমো নং : প্র/নারা/ইসি/১৫৩৪২/২৭৮ তারিখ ৩০/০৬/৯৯। ইসি নং ১৫৩৪২)। পরিদর্শনকালে (২০০০) এ ওয়াকফ সম্পত্তির মোতওয়াল্লি ছিলেন মওলানা আব্দুস সামাদ সরকার।
মসজিদের সম্মুখ-ভাগ (Façade) : প্রার্থনা-কক্ষের পুব দিকে কৌনিক খিলানযুক্ত তিনটি প্রবেশ-পথ রয়েছে। প্রতিটি খিলান-পথের দুই দিকে দুটি অর্ধ-স্তম্ভ (pilaster) সংযুক্ত রয়েছে। বক্র ছাদ কিনারায় বদ্ধ কাঞ্জুরা (merlons) অলঙ্করণ রয়েছে। দুই দিকের অষ্টভুজাকৃতির বুরুজ দুটি আংশিকভাবে মসজিদের বর্ধিত অংশের আড়ালে পড়ে গেছে। এ দিকে তেমন কোনো অলঙ্করণ দেখা যায় না। পুব দিকের বর্ধিত অংশটি সমতল ছাদবিশিষ্ট ও এখানে আর.সি.সি. পিলার ও বিম (beam) ব্যবহৃত হয়েছে।
উত্তর দিক (বহির্ভাগ) : উত্তর দিকে কৌনিক খিলানযুক্ত দুটি প্রবেশ-পথ রয়েছে। প্রবেশ-পথের দুই দিকে উল্লম্ব প্যানেল নকশা রয়েছে। পুব দিকের প্রবেশ-পথটি জানালা হিসেবে ও পশ্চিম দিকের প্রবেশ-পথটি দরওয়াজা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই দিকে তিনটি আনুভূমিক সারিতে মোল্ডিং রয়েছে। পুব দিকের কোণার বুরুজটি মসজিদের বর্ধিত অংশের কারণে প্রায় ঢাকা পড়ে গিয়েছে।
দক্ষিণ দিক (বহির্ভাগ) : প্রায় উত্তর দিকের অনুরূপ। এ দিকের প্রবেশ-পথ দুটি দরওয়াজা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কিবলা দিক (বহির্ভাগ) : কেন্দ্রীয় মিহরাব অংশটি বাহিরের দিকে বর্ধিত। কেন্দ্রীয় মিহরাবের বর্ধিত অংশে পোড়ামাটির দেশীয় নকশাযুক্ত একটি খাড়া প্যানেল রয়েছে। বহুখাঁজবিশিষ্ট খিলানের মধ্যে শিকল-ঘণ্টার অলঙ্করণ রয়েছে।
মিহরাব : মসজিদের অভ্যন্তরে কিবলা দেওয়ালে অর্ধবৃত্তাকার তিনটি মিহরাব রয়েছে। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি প্রস্তর-নির্মিত। এটির উপরে বহুখাঁজবিশিষ্ট একটি কৌণিক খিলান রয়েছে। মিহরাবের অভ্যন্তরে শিকল-ঘণ্টা একটি ঝুলন্ত নকশা রয়েছে। খিলানের দুই পার্শ্বে (spandrel) প্রস্তর-নির্মিত দুটি পুষ্প রয়েছে।
দুই দিকের অর্ধবৃত্তাকার অবতল মিহরাব দুটি অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রকার। এ দুটির উপর বহুখাঁজবিশিষ্ট দুটি কৌনিক খিলান রয়েছে। খিলান দুটির অভ্যন্তরে শিকল-ঘণ্টার ঝুলন্ত নকশা রয়েছে। খিলান দুটির দুই পার্শ্বে (spandrel) দুটি পুষ্প রয়েছে। মিহরাবের দুই দিকে পোড়ামাটির নকশাযুক্ত ক্ষুদ্র দুটি পিলার রয়েছে এবং উপরে পত্র-পুষ্প ও আমলকীর অলঙ্করণ রয়েছে। মিহরাব দুটির উপরে আনুভূমিক সারিতে পোড়ামাটির বিভিন্ন প্রকার অলঙ্করণ রয়েছে। দুই দিকের মিহরাব দুটি ইষ্টক-নির্মিত ও পোড়ামাটির অলঙ্করণে সমৃদ্ধ। তবে রং করার কারণে প্রথম দৃষ্টিতে এগুলো প্রস্তর-নির্মিত বলে ভুল হয়।
কোনার বুরুজ ও গম্বুজগুলো দেখে মনে হয়, এ মসজিদটি বিভিন্ন সময়ে মেরামত করা হয়েছে। বারবার মেরামতের কারণে পশ্চিম দিকের বুরুজ দুটি বর্তমানে নেই। পুব দিকে সম্প্রসারণের কারণে এ দিকের বুরুজ দুটি ভালোভাবে দেখা যায় না। বর্তমানে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও এক সময় এটি অত্যন্ত সৌন্দর্য-মণ্ডিত একটি ইমারত ছিল।
লেখক : প্রত্নতত্ত্ববিদ, আর্ট হিস্টোরিয়ান ও গবেষক