ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কুসুম্বা মসজিদ, নওগাঁ (১৫৫৮-৫৯ খ্রিষ্টাব্দ)

ড. খোন্দকার আলমগীর
কুসুম্বা মসজিদ, নওগাঁ (১৫৫৮-৫৯ খ্রিষ্টাব্দ)

ছয় গম্বুজ বিশিষ্ট আয়তাকার এই মসজিদটি নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্গত কুসুম্বা গ্রামের কুসুম্বা মৌজায় অবস্থিত। প্রাকার-বেষ্টিত এ মসজিদটির পুব দিকে উত্তর-দক্ষিণে লম্বা একটি দিঘি আছে। রাজশাহী শহর থেকে রাজশাহী-নওগাঁ সড়ক পথে বাসে এখানে যাওয়া যায়। এটি রাজশাহী শহর থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। গম্বুজ ও খিলানগুলো বাদে সম্পূর্ণ মসজিদটি প্রস্তর-নির্মিত। গম্বুজ ও খিলানগুলো ইষ্টক-নির্মিত। ১৫৫৮-৫৯ খ্রিষ্টাব্দে জনৈক সুলাইমান কর্তৃক এটি নির্মিত। মসজিদের চার দিকেই বক্র ছাদ কিনারা (curved cornice) রয়েছে।

সাধারণ বর্ণনা : এ মসজিদের পুব দিকে কৌনিক খিলান বিশিষ্ট তিনটি প্রবেশ-পথ আছে। উত্তর ও দক্ষিণ পার্শ্বে কৌনিক খিলান বিশিষ্ট প্রবেশ-পথে পাথরের জালি রয়েছে। কিবলা দেওয়ালের কেন্দ্রীয় মিহরাব অংশটি বাইরের দিকে উদ্গত। মসজিদের অভ্যন্তরে কিবলা দেওয়ালে মেঝের সমতলে অর্ধ-বৃত্তাকার দুটি অবতল মিহরাব রয়েছে। মসজিদের উত্তর-পশ্চিম কোনায় একটি জেনানা গ্যালারি রয়েছে। এ গ্যালারির দোতালায় কিবলা দেওয়ালে অর্ধ-বৃত্তাকার অবতল আরও একটি মিহরাব আছে। মসজিদের চার কোনায় অষ্টভুজাকৃতির চারটি বুরুজ আছে।

মসজিদের সম্মুখ অংশ : এই দিকে কৌনিক খিলান-যুক্ত তিনটি প্রবেশ-পথ রয়েছে। এই দিকের দেওয়াল-গাত্রে আনুভূমিক দুই সারিতে প্রস্তর-নির্মিত বদ্ধ প্যানেল-নকশা রয়েছে। প্রতি সারিতে চারটি করে প্যানেল রয়েছে। প্যানেলের সারি দুটির মাঝখানে আনুভূমিক এক সারি মোল্ডিং রয়েছে। কৌনিক খিলানগুলোর উপরের অংশ বহুখাঁজবিশিষ্ট। খিলানগুলোর দুই পাশে (spandrels) কলস ও পুষ্প অলঙ্করণ রয়েছে। পূর্ব দেওয়ালে বিভিন্ন ধরনের বহু অলঙ্করণ রয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রবেশ-পথের উপর একটি শিলালিপি আছে।

উত্তর দিক (বহির্ভাগ) : এ দিকের বদ্ধ প্রবেশ-পথ দুটিতে পাথরের জালি রয়েছে। খিলানগুলোর দুই দিকে পুষ্প অলঙ্করণ রয়েছে। এ খিলানগুলোর উপর আরও একটি বদ্ধ খিলান রয়েছে। মসজিদের অভ্যন্তরে উত্তর-পশ্চিম কোনায় জেনানা গ্যালারির অবস্থানের জন্য এরূপ ব্যবস্থা করা হয়েছে। খিলানগুলোর দুই পাশে (spandrels) ও মধ্যবর্তী(tympanum) অংশে পুষ্প অলঙ্করণ রয়েছে। ছাদ থেকে পানি নিষ্কাষণের জন্য পাথরের দুটি নালি (gargoyles) রয়েছে।

ক্ষিণ দিক (বহির্ভাগ) : উত্তর দিকের অনুরূপ এ দিকের বদ্ধ প্রবেশ-পথ দুটিতেও পাথরের জালি রয়েছে। এ দিকেও বিভিন্ন প্রকার পুষ্প অলঙ্করণ রয়েছে। ছাদ থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য পাথরের দুটি নালি (gargoyles) রয়েছে।

কিবলা দিক (বহির্ভাগ) : কিবলা দিকটি মোটামুটি সাদামাটা ধরনের। এ দিকে অনেক অফসেট (off-sets) ও অবতল (recesses) অংশ রয়েছে। কেন্দ্রীয় মিহরাব অংশটি বাইরের দিকে উদ্গত। ছাদ থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য কোনো নালি (gargoyle) নেই।

অভ্যন্তর-ভাগ : আয়তাকার এ মসজিদের অভ্যন্তরে মুক্তভাবে দ-ায়মান দ্বাদশ বাহু বিশিষ্ট দুটি প্রস্তর-স্তম্ভের ওপর ছয়টি গম্বুজ স্থাপিত। খিলান ও গম্বুজ ব্যতীত এ মসজিদটি সম্পূর্ণভাবে প্রস্তর নির্মিত। খিলান ও গম্বুজগুলো ইষ্টক নির্মিত। মসজিদের অভ্যন্তরে উত্তর-পশ্চিম কোনায় চারটি ক্ষুদ্র স্তম্ভের উপর স্থাপিত একটি জেনানা গ্যালারি আছে। এটির সিঁড়ি মসজিদের ভেতর থেকে। গ্যালারির উপরে ও নিচে জালিযুক্ত বদ্ধ প্রবেশ-পথ আছে। কিবলা দেওয়ালে অর্ধ-বৃত্তাকার দুটি অবতল মিহরাব আছে। জেনানা গ্যালারির নিচে কোনো মিহরাব নেই। এখানে কিবলা দেওয়ালে মিহরাবের শুধু একটি বদ্ধ নকশা আছে। তবে গ্যালারির দোতালায় কিবলা দেওয়ালের উপরাংশে অর্ধ-বৃত্তাকার একটি অবতল মিহরাব আছে।

লেখক : প্রত্নতত্ত্ববিদ, আর্ট হিস্টোরিয়ান ও গবেষক

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত