ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গলাকাটা মসজিদ বারবাজার ঝিনেদা

ড. খোন্দকার আলমগীর
গলাকাটা মসজিদ বারবাজার ঝিনেদা

ছয় গম্বুজ বিশিষ্ট আয়তাকার এ মসজিদটি ঝিনেদা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলাধীন বারবাজার গ্রামের বারবাজার মৌজার সি.এস. ১৫৮ ও ১৯৩ নম্বর দাগে বারবাজার-তাহিরপুর সড়কের উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত। মসজিদটি একটি ঢিবির নিচে ছিল এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে ধ্বংস-প্রায় অবস্থায় উন্মোচিত করে। উৎখননের আগে এখানে একটি মসজিদ ছিল, নাকি মন্দির ছিল সে বিষয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে যথেষ্ট মতবিভেদ ছিল। ব্রিটিশ সরকারের পরগনা উজিয়াল শাহির ভূমি রেকর্ডে এখানে একটি মসজিদ ছিল বলে উল্লেখ করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে উৎখননে সেটিই প্রমাণিত হয়।

মসজিদের উত্তর পার্শ্বে উত্তর-দক্ষিণে লম্বা একটি পুকুর আছে। মসজিদের কাছে পুকুরটির একটি পাকা ঘাট রয়েছে। চার কোনার সপ্ত-ভুজাকৃতির বুরুজগুলো ব্যতিরেকে মসজিদটির বাইরের দিকের পরিমাপ ১১.৫১ মি. উত্তর-দক্ষিণ ঢ ৮.১৭ মি. পূর্ব-পশ্চিম। মসজিদটির অভ্যন্তরীণ পরিমাপ ৯.১৭ মি. উত্তর-দক্ষিণ ঢ ৫.৮৫ মি. পূর্ব-পশ্চিম। মসজিদের পুবদিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি করে কৌণিক খিলান-যুক্ত প্রবেশ-পথ রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ দিকের প্রবেশ-পথগুলো ইটের জালি দ্বারা বন্ধ। মসজিদের অভ্যন্তরে কিবলা দেওয়ালে অর্ধ-বৃত্তাকার তিনটি অলঙ্কৃত মিহরাব আছে। মিহরাবগুলোর দুই পার্শ্বে পোড়ামাটির নকশাযুক্ত দুটি অর্ধ-স্তম্ভ (pilasters)) আছে। মিহরাবগুলোর অভ্যন্তরে আনুভূমিক বন্ধনী এবং বিভিন্ন ধরনের জ্যামিতিক নকশা, পুষ্প অলঙ্করণ এবং শিকল-ঘণ্টার অলঙ্করণ রয়েছে। তিনটি মিহরাবই আয়তাকার বন্ধনীর মধ্যে আবদ্ধ। তিনটি মিহরাবের আয়তাকার বন্ধনীতেই পোড়ামাটির বিভিন্ন ধরনের অলঙ্করণ রয়েছে।

উত্তর ও দক্ষিণ দিকের মিহরাব দুটির আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে পোড়ামাটির জ্যামিতিক নকশা রয়েছে। আয়তাকার ফ্রেমগুলোর ওপরে বদ্ধ কাঞ্জুরার ((blind merlons) সারি রয়েছে। মসজিদটির পুব দিকে সম্ভবত একটি পাকা চত্বর (courtyard) ছিল। মসজিদের বহির্দেওয়ালে পর্যায়ক্রমে স্থাপিত উল্লম্ব অফসেট ও খাঁজ (recess) রয়েছে। এগুলোর নিচের দিকে আনুভূমিক সারিতে বন্ধনী ও মোল্ডিং (mouldings) রয়েছে। মসজিদের অভ্যন্তরে মুক্তভাবে দণ্ডায়মান দ্বাদশবাহুযুক্ত দুটি প্রস্তর-স্তম্ভ রয়েছে। এগুলোর গাত্রে শিকল-ঘণ্টার অলঙ্করণ রয়েছে। ছয়টি গম্বু^জসহ মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে।

ছয় গম্বুজ বিশিষ্ট বাংলার আরও কয়েকেটি মসজিদের নাম হলো: ১. ঝনঝনিয়া মসজিদ, গৌড়, পশ্চিম বাংলা, ২. বশিরহাট শাহি মসজিদ, পশ্চিম বাংলা, ৩. মিসকিন শাহের মসজিদ চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ এবং ৪. ওয়ালি খানের মসজিদ, চট্টগ্রাম ইত্যাদি।

লেখক : প্রত্নতত্ত্ববিদ, আর্ট হিস্টোরিয়ান ও গবেষক

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত