ইসলামে সাহিত্যচর্চা
রহমতুল্লাহ শিহাব
প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ইসলাম। পৃথিবীর বুকে মানবতার বৃক্ষকে সজীব ও সতেজ রাখার জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অর্পিত একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানুষের সব প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে প্রত্যেকটি বিষয়ে সর্বোপযোগী ও সর্বসুন্দর দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ইসলামে। যথাযথ মনের ভাব প্রকাশ করতে পারা মানুষের একটি মৌলিক প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ভাষার মধ্যে সাহিত্যের সুবিস্তার প্রভাব লক্ষণীয়। তাছাড়া যুগ যুগ ধরে সাহিত্য মানুষের চিন্তা-চেতনা ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক-বাহক এবং মানবসভ্যতার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সাহিত্য সাধনা ও সাহিত্য রচনা তাই মানবসমাজের একটি অনস্বীকার্য ও গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন। ইসলাম এই প্রয়োজন অস্বীকার করেনি; বরং শরীয়তের নির্ধারিত নীতি অনুসরণ করে প্রয়োজন পূরণের নির্দেশ দিয়েছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে সাহিত্য দুই ধরনের। একটি সত্য ও কল্যাণের পথপ্রদর্শক। অপরটি বিভ্রান্তি ও কুরুচিপূর্ণ চিন্তার ধারক। তাই ইসলাম সত্য, সুন্দর ও কল্যাণকর সাহিত্য সৃষ্টির প্রতি উৎসাহিত করেছে। আর মিথ্যা, অশ্লীল ও ক্ষতিকর সাহিত্য সৃষ্টির ব্যাপারে কঠিন বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে :
(অনুবাদ) ‘বিভ্রান্ত লোকেরাই কবিদের অনুসরণ করে। তুমি কি দেখ না, তারা প্রতি ময়দানেই উ™£ান্ত হয়ে ফেরে? এমন কথা বলে যা তারা করে না। তবে তাদের কথা ভিন্ন, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং আল্লাহকে খুব স্মরণ করে ও নিপীড়িত হওয়ার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে।’ (সুরা শুয়ারা : ১২৪-১২৭)।
এ আয়াত নাজিল হওয়ার পর আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা, হাসসান ইবনে সাবেত, কাব ইবনে মালেক প্রমুখ সাহাবি কবি ক্রন্দনরত অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হন এবং আরজ করেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! আল্লাহতায়ালা এই আয়াত নাজিল করেছেন। আমরাও তো কবিতা রচনা করি। এখন আমাদের কি উপায়? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আয়াতের শেষাংশ পাঠ করো। উদ্দেশ্য ছিল তোমাদের কবিতা যেন অনর্থক, ভ্রান্ত ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত না হয়। কাজেই তোমরা আয়াতের শেষাংশে উল্লেখিত ব্যতিক্রমীদের শামিল।’ (ফাতহুল বারী)
সহিহ বোখারিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস বর্ণিত আছে ‘কতক কবিতা জ্ঞানগর্ভ হয়ে থাকে।’ তাছাড়া যারা সাহাবি কবি ছিলেন তাদেরকে রাসুলুল্লাহ (সা.) উৎসাহ দিতেন। মাঝে মাঝে তাদের কবিতা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতেন। শুনতে আগ্রহ প্রকাশ করতেন। কবিতার শুদ্ধতার প্রতি নজর রাখতেন। তাদের উৎসাহিত করার জন্য পুরস্কৃত করতেন। তাঁর লালন, পরিশোধন, ভালোবাসা ও সহযোগিতায় সাহাবি কবিগণ রচনা করতেন সাহিত্যের একেক আলো ঝলমলে অধ্যায়। সেখানে ফুটে উঠত ইসলামের সৌন্দর্য। কখনও আল্লাহতায়ালার প্রশংসা। কখনও কখনও রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাঁদের কবিতার বিষয় হয়ে উঠতেন। তাঁর সৌন্দর্যমণ্ডিত জীবন, দয়ার্দ্র হৃদয়, মানুষ ও মানবতার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা সাহাবি-কবিদেরও বিমুগ্ধ করত। তারা কবিতার ভাষায় তাঁর জীবনের নানা দিক উচ্চকিত করে তুলতেন। হজরত আয়েশা (রা.)-ও মাঝে মাঝে রাসুল (সা.)-এর শানে কবিতা আবৃত্তি করতেন।
সুতরাং উল্লেখিত আয়াত, তাফসির ও হাদিস দ্বারা স্পষ্ট হয়, যে সব সাহিত্য বা কাব্য অশ্লীলতা ও অসৎকর্মের কুমন্ত্রণা দেয় এবং মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ করে সেগুলো ইসলামে নিষিদ্ধ ও নিন্দনীয়। পক্ষান্তরে যে সাহিত্য বা কাব্যচর্চা সৎ ও সত্যের দিকে পথপ্রদর্শন করে এবং মানুষকে আল্লাহর স্মরণে নিমগ্ন রাখে, সেগুলো সিদ্ধ এবং প্রশংসনীয়।