ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইসলাম ও প্রগতি, উন্নয়নের প্রাচ্য-প্রতীচ্য

মুসা আল হাফিজ
ইসলাম ও প্রগতি, উন্নয়নের প্রাচ্য-প্রতীচ্য

মিশরীয় বিদ্যাবিশারদ মুফতি মুহাম্মদ আবদুহুর সঙ্গে দেখা করতে এলেন বিশিষ্ট এক খ্রিষ্টান পাদ্রি। উভয়ের মধ্যে নানা বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। খ্রিষ্টান পাদ্রি চান ইসলামের ওপর তাঁর ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব দেখাতে। বলেন খ্রিষ্টধর্ম জ্ঞান-বিজ্ঞান ও উন্নয়নের সহায়ক, প্রগতির পক্ষে উৎসাহদাতা। ইসলাম জ্ঞান-বিজ্ঞানবিরোধী এবং কুসংস্কার ও গোঁড়ামিপূর্ণ এবং প্রগতির প্রতিবন্ধক।

মুফতি মুহাম্মদ আবদুহু চুপ থাকলেন কিছুক্ষণ। বললেন, দাবি তো করলেন গুরুতর। প্রমাণ আছে এর পক্ষে? পাদ্রি যেন এরই অপেক্ষা করছিলেন। বললেন, প্রমাণ তো একেবারে পরিষ্কার। খোলা চোখে তাকালেই দেখা যায়। খ্রিষ্টান অধ্যুষিত দেশগুলো বিশেষ করে ইউরোপের অবস্থা দেখুন, আর দেখুন মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর পরিস্থিতি। আমরা এগিয়ে গেছি কতদূর আর আপনারা পড়ে আছেন কত পেছনে? জ্বলন্ত এই বাস্তবতার চেয়ে বড় প্রমাণ আর কী চাই?

মুফতি আবদুহু হাসলেন। জানতে চাইলেন পশ্চিমা দুনিয়ায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতি কখন শুরু হয়? সেটা কেমন পুরোনো?

পাদ্রি জবাব দিলেন, ‘এই ৪০০ বছরের পথ। রেনেসাঁর পর থেকে আমরা দুনিয়ার শিক্ষা, সভ্যতা ও অগ্রগতির শিক্ষক।’ আবদুহু বললেন, আপনি ঠিক। কিন্তু রেনেসাঁর আগে কেমন ছিল ইউরোপের অবস্থা?’ পাদ্রি জবাব দিলেন, ‘খুবই খারাপ, একেবারেই লজ্জাজনক। অন্ধকার, বর্বর, কদর্য।’ আবদুহু বললেন, ‘ ইউরোপ যখন অন্ধকার, বর্বর ও কদর্য, তখন ইসলামি দেশগুলো ও মুসলমানদের অবস্থা কেমন ছিল?’ পাদ্রি চিন্তায় পড়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে বললেন, ‘তখন তো সমৃিদ্ধ ছিল এখানে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সারথ্য করছিল মুসলিমরা, সভ্যতার মশাল ছিল আপনাদের হাতে। প্রগতির প্রতীক এশিয়ার মুসলিম দেশগুলো, রাজধানীগুলো।’

আবদুহু এবার বললেন, দেখুন, পাদ্রি সাহেব, রেনেসাঁর মাধ্যমে ইউরোপে খ্রিষ্টধর্মকে উপেক্ষা করে জীবনযাত্রা শুরু হলো। সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে বিদায় নিল খ্রিষ্টধর্মের আধিপত্য। এরপরের যে উন্নতি-অগ্রগতি, তা খ্রিষ্টান ধর্মের কারণে নয়; বরং খ্রিষ্ট ধর্মকে ত্যাগ করার কারণে।

অন্যদিকে কয়েকশ বছর ধরে মুসলিম রাষ্ট্র ও সমাজে ইসলাম ধর্মকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। ইসলামের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রভাব কয়েক শতাব্দী ধরে ম্রিয়মাণ। আর এ সময়টাই জ্ঞান-বিজ্ঞান, সভ্যতাণ্ডপ্রগতি ও বিশ্বনেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়ে মুসলিমরা। এ সময়টাই মুসলিম অধপতনের কাল। তাদের এই পশ্চাৎপদতার কারণ ইসলাম ধর্মকে ত্যাগ করা।

যত দিন মুসলমানরা এবং তাদের সমাজ ও রাষ্ট্র ইসলাম ধর্মকে আঁকড়ে ধরে এর শিক্ষাকে অবলম্বনের চেষ্টা করেছিল, ততদিন তারা বিশ্বসেরা ছিল। যখন তারা ইসলাম ত্যাগ করল, তখনই পিছিয়ে পড়তে লাগল।

আপনাদের উন্নয়নের যে চিত্র দেখিয়ে খ্রিষ্টধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে চান, সে উন্নয়ন খ্রিষ্টধর্মকে সমাজ-রাষ্ট্র থেকে নির্বাসনের ফসল। মুসলিমদের যে দুরবস্থা দেখিয়ে ইসলাম ধর্মকে বাতিল সাব্যস্ত করতে চান, সেই দুরবস্থা মূলত সমাজ-রাষ্ট্র থেকে ইসলামকে উপেক্ষার ফসল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত