সাহরি শেষে ফজরের নামাজ আদায় করে ঘুমাতে যাই। কারণ, মিশরে চাইলেও রাতে ঘুমানো যায় না। বাংলাদেশে যেমন তারাবির নামাজ পড়ে যার যার মতো বাসায় ফিরে ঘুমিয়ে যায়, সাহরির সময় যেন উঠতে পারে; কিন্তু মিশরে ভিন্ন রকমের পরিবেশ। মিশরে সারাদিন ছেলেমেয়েরা বাসায় থাকলেও রাত ১২টার সময় তাদের খেলার সময় হয়; কেউ কেউ ফুটবল নিয়ে রাস্তায় নেমে যায়, আবার কেউ রমজানের আনন্দে বাজি ফুটিয়ে উৎসব করে। কানের কাছে ঠাসঠুস বাজি ফুটলে কারই বা ঘুম আসবে? এভাবেই চলতে থাকে সাহরির আগপর্যন্ত তাদের আনন্দণ্ডউল্লাস।
অনলাইনে ইফতারি রেজিস্ট্রেশন
আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুটি রুমে আমরা চারজন থাকি। রান্নাবান্না নিজেদেরই ভাগাভাগি করে করতে হয়। সেক্ষেত্রে আমরা সাহরির রান্না রাতের শেষ ভাগে করে থাকি। সাহরি শেষে ফজরের নামাজ আদায় করে ঘুমাতে যাই। ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে কিছু সময় কোরআন তেলাওয়াত করি। ইফতার করতে যাই আল আজহার মসজিদে। এখানে ইফতার করতে হলে আগেই অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। আসরের নামাজের পর যেসব ছাত্র-ছাত্রী ওখানে ইফতার করতে যায়, তাদের মসজিদের পূর্বপাশের গেট দিয়ে মোবাইল স্ক্যান করে রেজিস্ট্রেশন করা আছে কি-না, চেক করা হয়। তারপর মসজিদে প্রবেশ করতে দেয়া হয়।
পরিচয় একটাই : আমরা মুসলমান
নিয়ম অনুযায়ী আমরা পূর্ব পাশের গেট দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করলাম। ভেতরে ঢুকেই জান্নাতি পরিবেশ। সামনে মসজিদ, চারপাশে কাঠের দেয়াল। যার মধ্যে নারীরা ইফতার করেন, নামাজ আদায় করেন। মাঝখানে খোলা ময়দান। যেখানে রয়েছে সাদা টাইলস করা উঠোন। মসজিদের বারান্দায় বসে কেউ কেউ কোরআন পড়ছেন, কেউ তাসবিহ পাঠ করছেন। তাদের কেউ কেউ স্থানীয়। কিন্তু বেশিরভাগই বিদেশি ছাত্র। এর মধ্যে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার ছাত্র বেশি। তবে আমাদের সবার পরিচয় একটাই, আমরা মুসলমান।
খেজুর-পানি দিয়ে ইফতার
আসরের নামাজ শেষ হওয়ার পরপরই খোলা ময়দানে শুরু হয়ে যায় ইফতার পরিবেশন। যেখানে সবাই সুন্দরভাবে ইফতারসামগ্রী সাজিয়ে রেখে দেয়। সবকিছু ঠিকঠাক মতো সাজানো-গোছানো থাকে। কারও সঙ্গে কারও কথা নেই। যে যার মতো কাজ করছেন। কেউ কেউ দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। মাগরিবের আজানের প্রায় ৩০ মিনিট আগেই সবাইকে ডাকা হয় ইফতার সামনে নিয়ে বসার জন্য। আজানের ১৫ মিনিট আগে একজন কারি সুমিষ্ট সুরে কোরআন তেলাওয়াত করতে থাকেন আজানের আগপর্যন্ত। এরপর আজান হয়। একটা খেজুর ও পানি পান করেই সবাই নামাজে দাঁড়িয়ে যায়।
ভিন্নরকম পরিবেশে অন্যরকম আবহ
বাংলাদেশে ইফতার মানে ছোলা, মুড়ি, চপ, বেগুনি। এ ছাড়া যেন ইফতারই জমে না; কিন্তু এখানে পুরোই ভিন্ন আবহ। চিকেনসহ অন্যান্য খাবার একেবারে তেল, লবণ, মরিচ ছাড়া সেদ্ধ। যেগুলো খেতে প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও এখন অভ্যাস করে নিয়েছি। নামাজ শেষে সবাই বাকি খাবার শেষ করেন। এখানকার ইফতারে থাকে খেজুর, জুস, পানি, রাইস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, শস, চিকেন ফ্রাই, কোপ্তা ইত্যাদি।
লেখক : শিক্ষার্থী, আল আজহার
বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো, মিশর