চিকিৎসাশাস্ত্রে মুহাম্মদ (সা.)

জামিল মুহাম্মদ জাকওয়ান

প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) চিকিৎসাশাস্ত্রে রেখে যান যুগান্তকারী অবদান। তাঁর হাত ধরে চিকিৎসাশাস্ত্রে পূর্ণতা ও সজীবতা আসে। তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী। তাঁর ওপর নাজিলকৃত কোরআন চিকিৎসাশাস্ত্রের আকরগ্রন্থ। মায়ের পেটের ভেতর বাচ্চার ধরন ও ধারণের কথা দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছে পবিত্র কোরআন। কোরআন জগতের বিস্ময়। চিকিৎসাশাস্ত্রে কোরআনের অবদান উল্লেখ করতে গিয়ে জার্মান পণ্ডিত ড. কার্ল অপিতজি তাঁর ‘উরব গরফরধরহ ওস কড়ৎধহ’ গ্রন্থে দেখিয়েছেন যে কোরআনের ১১৪টি সুরার মধ্যে ৯৭টি সুরার ৩৫৫টি আয়াত চিকিৎসাবিজ্ঞান-সংশ্লিষ্ট। ৩৫৫টি আয়াতে মানবদেহের সব বিষয়ের সুষ্ঠু সমাধান দেওয়া হয়েছে।

ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে অনেক থিওরি বর্ণনা করেছেন। রোগ নিরাময় ও উপশমের পদ্ধতি বলেছেন। নিজ হাতে চিকিৎসা করেছেন এবং নিজ আবিষ্কৃত পদ্ধতির ব্যবহার করেছেন। হাদিসের শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থ বোখারি শরিফে ‘তিব্বুন নববি’ শীর্ষক অধ্যায়ে ৮০টি পরিচ্ছেদ রয়েছে। প্রতিটি পরিচ্ছেদের অধীনে হাদিস রয়েছে কয়েকটি করে। সব হাদিসই রোগের চিকিৎসাপদ্ধতি, রোগ নিরাময় ও রোগ প্রতিরোধ কার্যাবলি সংবলিত। আর তিনি নিজ হাতে শিক্ষা দিয়েছেন সঙ্গীদের। চৎড়ভ. ইৎড়হি বলেন, ‘নবী মুহাম্মদ (সা.) চিকিৎসাবিজ্ঞানকে ধর্মের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছেন।’ রোগ নিরাময়ের ব্যবস্থা হিসেবে মহানবী (সা.) মোটামুটি পাঁচটি পদ্ধতি ব্যবহারের উল্লেখ করেছেন। ১. হাজামাত বা রক্তমোক্ষণ পদ্ধতি। ২. লোলুদ বা মুখ দিয়ে ওষুধ ব্যবহার। ৩. সা’উত বা নাক দিয়ে ওষুধ ব্যবহার। ৪. মাসী’ঈ বা পেটের বিশোধনের জন্য ওষুধ ব্যবহার। ৫. কাওয়াই বা পেটের বিশোধনের ওষুধ ব্যবহার। আর ওষুধ হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন মধু, কালিজিরা, সামুদ্রিক কুন্তা বা বুড়, খেজুর, মান্না বা ব্যাঙের ছাতার মতো এক প্রকার উদ্ভিদ, উটের দুধ প্রভৃতি। (সূত্র : বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান, মুহাম্মদ রহুল আমীন, পৃষ্ঠা ৬০)।

শল্য চিকিৎসায় মুহাম্মদ (সা.)

শারীরিক সুস্থতার স্বার্থে কোনো অঙ্গ কেটে চিকিৎসা করার বিষয়ে মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুমতি ছিল। কখনো তিনি নিজে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে এমন অনেক বর্ণনা রয়েছে যেমন- আলী (রা.)-কে নিয়ে একবার রাসুল (সা.) একজন অসুস্থ সাহাবিকে দেখতে গেলেন। অসুস্থ সাহাবির কোমরে রক্ত জমাট বেঁধে থাকার কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। রাসুল (সা.) আলী (রা.) অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জমাট রক্ত বের করে ফেলার আদেশ দিলেন। আলী (রা.) রাসুলের সামনেই অস্ত্রোপচার করে জমাট রক্ত বের করে ফেলেন। এতে সাহাবি সুস্থ হয়ে ওঠেন। অন্য হাদিসে আছে। আরযাফা ইবনে আসয়াদ জাহেলি যুগে এক যুদ্ধে নাক হারান। তখন রুপা দিয়ে একটি কৃত্রিম নাক লাগানো হয়। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি রাসুল (সা.)-এর কাছে এলেন এবং তাকে জানালেন, তার নাকে দুর্গন্ধ তৈরি হচ্ছে। রাসুল (সা.) তাকে স্বর্ণ দিয়ে নাক পুনঃস্থাপনের পরামর্শ দিলেন। তিনি তা-ই করলেন। এর পর থেকে তার নাকে আর গন্ধ হয়নি।