ভাষা সাহিত্যের অবদান বিশ্লেষণে যদিও নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের রচনাকে আলাদা করে দেখিয়ে প্রভেদ সৃষ্টির সুযোগ নেই। তবে এতটুকু অবশ্যই বলা যায় যে, বাংলা ভাষায় যারা অসামান্য অবদান রেখেছেন, তন্মধ্যে মুসলিম মনীষাদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলা ভাষা সাহিত্যে মুসলিম কবি-সাহিত্যিক ও লেখকদের অবদানকে স্মৃতিবদ্ধ করে রাখার উদ্দেশ্যে কয়েকজন মুসলিম মনীষার ভাষা সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
মুসলমানরা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চায় এগিয়ে আসে সুলতানি আমলে। বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে তাদের সবচেয়ে বড় অবদান মনে করা হয় কাহিনিকাব্য বা রোম্যান্টিক কাব্যধারার প্রবর্তনকে। তবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান অসামান্য। তিনি স্বাতন্ত্র মহিমায় সমুজ্জ্বল। মানবতা, সাম্য ও দ্রোহের কবি নজরুল। স্বল্পকালীন সৃষ্টিশীল জীবনে তিনি রচনা করেছেন প্রেম, প্রকৃতি, বিদ্রোহ ও মানবতার অনবদ্য সব কবিতা, গান, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস ও নাটক। কালজয়ী প্রতিভার অধিকারী কবি নজরুল তার লেখনীর মাধ্যমে আমাদের সাহিত্য, সংগীত ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার সাহিত্যকর্মে উচ্চারিত হয়েছে পরাধীনতা, অন্যায়-অত্যাচার ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের বাণী। কালের জালেম শাসকের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন বজ্রকণ্ঠ। তোষণ ও পোষণ রীতিকে দু’পায়ে দলে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বিদ্রোহী। খ্যাতি লাভ করেন নিখিল ভারতের বিদ্রোহী কবি হিসেবে। অসামান্য ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয়কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
আমাদের সংস্কৃতির পূর্ণতাদানে নজরুল ইসলামের অতল ঋণ অপরিশোধ্য। ভূগোল ও রাজনীতির বাইরে তাঁর অনুভব এমন-
দূর আরবের স্বপন দেখি বাংলাদেশের কুটির হতে
বেহুঁশ হয়ে চলেছি যেন কেঁদে কেঁদে কাবার পথে।
আল্লাহ নামের মহিমা ও প্রেমণ্ডতন্ময় নজরুল ইসলামের সার্থক উচ্চারণ-
আল্লাহ নামের বীজ বুনেছি এবার মনের মাঠে
ফলবে ফসল বেচবো তারে কেয়ামতের হাটে।
মুসলমানদের কর্মকাণ্ড নিয়ে নজরুল অনুভূতির সার্থক প্রকাশ-
আল্লাহতে যার পূর্ণ ঈমান কোথা সে মুসলমান...
যার মুখে শুনি তওহিদের কালাম
ভয়ে মৃত্যুও করিত সালাম।
যার দ্বীন দ্বীন রবে কাঁপিত দুনিয়া
জ্বীন পরী ইনসান।
নজরুল হৃদয়ে নবীপ্রেম এক অনন্য উচ্চতায় সমাসীন। নবীপ্রেমিক মানুষের আবেগ বোঝাতে কবির হৃদয়-উৎকলিত উচ্চারণ-
ওরে ও দরিয়ার মাঝি, মোরে
নিয়ে যারে মদীনা
তুমি মুরশিদ হয়ে পথ দেখাও ভাই,
আমি যে পথ চিনি না।
আমার প্রিয় হজরত যেথায়
আছেন নাকি ঘুমিয়ে ভাই,
আমি প্রাণে যে আর বাঁচি না রে
আমার হজরতের দরশ বিনা ॥
নদী নাকি নাই ও দেশে
নাও না চলে যদি
আমি চোখের সাঁতার-পানি দিয়ে
বইয়ে দেব নদী ॥
আজানের মধ্যেও কাজী নজরুল শুনেন অসাধারণ সুধাময় সুর মূর্ছনা, স্রষ্টা প্রেমের আহ্বান ও একজন মুসলিমের প্রাত্যহিক জীবনের বাস্তবতা-
দূর আজানের মধুর ধ্বনি বাজে বাজে মসজিদেরই মিনারে।
এ কী খুশির অধীর তরঙ্গ উঠলো জেগে প্রাণের কিনারে।
মনে জাগে হাজার বছর আগে
ডাকিত বেলাল এমনি অনুরাগে,
তার খোশ এ লেহান, মাতাইত প্রাণ গলাইত পাষাণ ভাসাইত মদিনারে
প্রেমে ভাসাইত মদিনারে ॥
তোরা ভোল গৃহকাজ, ওরে মুসলিম থাম
চল খোদার রাহে, শোন, ডাকিছে ইমাম।
মেখে দুনিয়ারই খাক, বৃথা রহিলি নাপাক,
চল্ মসজিদে তুই, শোন্ মুয়াজ্জিনের ডাক
তোর জনম যাবে বিফলে যে ভাই এই ইবাদতে বিনা রে ॥
কাজী নজরুল আজানের মধ্যে মানসিক প্রশান্তি পেতেন-
মসজিদে ঐ শোন রে আজান, চল নামাজে চল।
দুঃখে পাবি সান্ত¡না তুই বক্ষে পাবি বল।
নজরুলের ভাষায় আজানের শক্তি মানুষকে পৌঁছে দেয় অনন্য উচ্চতায়-
ঘুমাইয়া কাজা করেছি ফজর
তখনো জাগিনি যখন যোহর
হেলায় ফেলায় কেটেছে আসর
মাগরেবের ঐ শুনি আজান।
কবি মানেই ধর্মহীন নয়। কবিরও স্বর্ধমের প্রতি ভালোবাসা ও আত্মনিবেদন আছে। তেমনই চিত্র ফুটে ওঠেছে কাজী নজরুল ইসলামের চেতনায় মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে সুখ অনুভবের তীব্র আকাঙ্ক্ষায়-
মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই।
যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।
‘এক আল্লাহ জিন্দাবাদ’-এ নজরুল সাম্য-সম্প্রীতি, তাওহিদি প্রেরণা ও মুসলিম চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করেছেন দীপ্তকণ্ঠে-
উহারা করুক হিংসা-বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ;
আমরা বলিব, সাম্য, শান্তি, এক আল্লাহ জিন্দাবাদ।
উহারা চাহুক সংকীর্ণতা, পায়রার খোপ, ডোবার ক্লেদ,
আমরা চাহিব উদার আকাশ, নিত্য আলোক প্রেম অভেদ।
উহারা চাহুক দাসের জীবন, আমরা শহীদী দর্জা চাই;
নিত্য মৃত্যু-ভীত ওরা, মোরা মৃত্যু কোথায় খুঁজে বেড়াই।
‘নয়া যমানা’য় সত্য-ন্যায় প্রতিষ্ঠায় মুসলমানকে মাথা নত না করার আহ্বান করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম-
বাজিছে দামামা বাঁধরে আমামা
শির উঁচু করি মুসলমান।
দাওয়াত এসেছে নয়া যমানার
ভাঙ্গা কেল্লায় ওড়ে নিশান।
নামাজ নিয়ে নজরুলের আকুতি-
হে নামাজী! আমার ঘরে নামাজ পড় আজ।
দিলাম তোমার চরণ-তলে হৃদয়-জায়নামাজ।
‘আজাদ’ কবিতায় কবির স্বপ্নময় আশাজাগানিয়া উচ্চারণ-
কোথা সে আজাদ? কোথা সে পূর্ণ মুক্ত মুসলমান?
আল্লাহ ছাড়া করে না কারেও ভয়, কোথা সেই প্রাণ?
কোথা সে ‘আরিফ’, কোথা সে ইমাম, কোথা শক্তিধর?
মুক্ত যাহার বাণী শুনি কাঁপে ত্রিভুবন থরথর!
০২. আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কবি ফররুখ আহমদ। তিনি মুসলিম রেনেসাঁর কবি হিসেবে সমধিক পরিচিত। তাঁর কবিতা তৎকালীন বাংলার অধঃপতিত মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণের অনুপ্রেরণা জোগায়। দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের হাহাকার, আর্তনাদ, অনাহারক্লিষ্টের করুণ পরিণতি, সমকালের সংকট, জরাগ্রস্ত বাস্তবতা, সাম্প্রদায়িকতার হিংস্রতা দেখে তিনি আঘাত পান। আর সব অসঙ্গতিই তাকে সাহিত্য সাধনায় অনুপ্রেরণা জোগায়। মুসলিম জাগরণের কবি ফররুখ আহমদও ছড়া-কবিতায় ইসলাম ও সংস্কৃতির নিপুণ নকশি কাঁথা বুনেছেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত ফররুখ আহমদের ‘মাহফিল’ গ্রন্থে মুদ্রিত প্রথম ‘হামদ’টি হলো সুরা ফাতেহার ব্যাখ্যাসহ বঙ্গানুবাদ। কী আবেগ তাতে জড়িয়ে আছে!
সকল তারিফ তোমারি আল্লাহ-রাব্বুল আ’লামীন
তুমি রহমান, রহীম তোমার রহমত শেষহীন ॥
কুল আলমের পালক হে প্রভু-তুমি দাতা, দয়াময়
রোজ কিয়ামতে বিচার দিনের মালিক অসংশয়
তব অধিকারে হাশরের মাঠ, শেষ বিচারের দিন ॥
করি বন্দেগী তোমারি হে রব, করি তব ইবাদত,
তোমারি সমীপে চাহি মোরা শুধু মদদ ও হিম্মৎ,
পাঠাও মদদ মোদের জীবনে হে প্রভু রজনী দিন ॥
চালাও মোদেরে তাদের সুপথে নেয়ামত পেল যারা,
চির সত্যের সুদৃঢ় পথে সফল হয়েছে তারা,
তোমার রাসুল, নবী, সিদ্দিক, শহীদ ও সালেহীন ॥
চালায়ো না তুমি মোদেরে হে প্রভু তাহাদের ভুল পথে,
ভ্রান্তিতে লীন যারা পেল শুধু ব্যর্থতা কিস্মতে,
যাদের উপরে আছে অভিশাপ রাত্রি ছায়া মলিন ॥
আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ফররুখ আহমদের এই ইসলামি গানটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে।
ওগো নূরনবী হজরত
আমরা তোমারি উম্মত
তুমি দয়াল নবী, তুমি নূরের রবি,
তুমি বাসলে ভালো জগতজনে
দেখিয়ে দিলে পথ।
আমরা তোমার পথে চলি
আমরা তোমার কথা বলি
তোমার আলোয় পাই যে খুঁজে
ঈমান, ইজ্জত।
সারা জাহানবাসী
আমরা তোমায় ভালোবাসি,
তোমায় ভালোবেসে মনে
পাই মোরা হিম্মত।
জাতির সমস্যাকে চোখে আঙুল দিয়ে আমাদের দেখিয়ে ফররুখ তার লেখনীর মাধ্যমে বলেছিলেন-
‘হে মাঝি এবার তুমিও পেয়ো না ভয়
তুমিও কুড়াও হেরার পথিক তারকার বিস্ময়
ঝরুক এ ঝড়ে নারঙ্গী পাতা তবু পাতা অগণন
ভিড় করে সেথা জাগছে আকাশে হেরার রাজতোরণ।’
তার কলম ও কণ্ঠে বার বার অভাব, অভিযোগ, অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে ধ্বনিত হয়েছে। বিশ্ব মানবতার কণ্ঠে কবিকণ্ঠ বলে উঠে-
“লাহুতে পার্থক্য নাই বণি আদমের
শিরায় শিরায় আর ধমনীতে দেখি বহমান
এক রক্ত ধারা।”
সুস্থ চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জাতীয় উত্থানের আহ্বানে রচিত ফররুখের কালজয়ী ‘পাঞ্জেরি’ কবিতার কয়েক ছত্র-
রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা, হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে?
তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি।
রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
তাঁর ‘সিন্দবাদ’ কবিতার উচ্চারণ-
কেটেছে রঙিন মখমল দিন, নতুন সফর আজ,
শুনছি আবার নোনা দরিয়ার ডাক,
ভাসে জোরওয়ার মউজের শিরে সফেদ চাঁদির তাজ,
পাহাড়-বুলন্দ ঢেউ ব’য়ে আনে নোনা দরিয়ার ডাক;
নতুন পানিতে সফর এবার, হে মাঝি সিন্দবাদ!
এক সময় কবিরা তাদের রচিত কবিতায় ধর্ম-ইবাদত ও প্রার্থনা প্রকাশ করাকে জীবনের সার্থকতা মনে করতেন। বাংলা সাহিত্যের শুরুটাই হয়েছিল ধর্ম, ইবাদত, প্রার্থনা ও নীতিবাক্য সংবলিত উপদেশের মাধ্যমে মনুষ্যত্ব বিকাশের লক্ষ্যে। এ লক্ষ্যে হিন্দু-মুসলিম সব কবিই নিজ নিজ ধর্মের স্বরূপ ও স্তুতি প্রকাশ করেছেন তাদের কবিতায়। কালক্রমে হিন্দুত্ববাদকে জিইয়ে রেখে মুসলিম কবি ও তাদের কবিতাকে দৃষ্টি ও চর্চার আড়াল করার অসাম্প্রদায়িক হীন প্রয়াসও চলেছে, যা সাহিত্যের মূল আবেদনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যদি ধর্ম সাহিত্যের বিষয় না হয়, যা অনেকের দাবি; তাহলে বাংলা সাহিত্যের অস্তিত্বের সংকট দেখা দেবে। হিন্দুদের ধর্ম আশ্রিত মহাকাব্য যদি সাহিত্য হতে পারে, তাহলে মুসলিমদের ধর্মবিশ্বাস ও প্রার্থনা সাহিত্য হবে না কেন? এ প্রশ্ন সাহিত্যের একচোখা বিশ্লেষণ থেকে সৃষ্ট! যেসব মুসলিম কবি তাদের কবিতায় ধর্ম ও প্রার্থনাকে উপজীব্য এবং প্রতিপাদ্য করে কবিতা রচনা করেছেন, তাদের কবিতার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো-
০৩. কবি আলাওলের বিখ্যাত কবিতার কিছু অংশ-
‘হামদ’ কবিতায় আলাওল এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর পরিচয় ও প্রশংসা ব্যক্ত করেছেন-
‘বিছমিল্লা প্রভুর নাম আরম্ভ প্রথম
আদ্যমূল শির সেই শোভিত উত্তম
প্রথমে প্রণাম করি এক করতার
যেই প্রভু জীবদানে স্থাপিল সংসার।
আপনা প্রচার হেতু সৃজিল জীবন
নিজ ভয় দর্শাইতে সৃজিল মরণ
কাকে কৈল ভিক্ষুক কাকে কৈল ধনী
কাকে কৈল নির্গুণী, কাকে কৈল গুণী।
০৪. কবি কায়কোবাদের ‘আজান’ কবিতার বিখ্যাত কয়েক লাইন-
‘কে অই শুনালো মোরে
আজানের ধ্বনি!
মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিল কি সমুধুর
আকুল হইল প্রাণ বাজিল ধমনী!
কি মধুর
আজানের ধ্বনি!’
০৫. কবি সুফিয়া কামালের প্রার্থনা কবিতার হৃদয়গলা আবেদন-
‘তুলি দুই হাত
করি মোনাজাত
হে রহিম রাহমান
কত সুন্দর করিয়া ধরণী
মোদের করেছ দান,
গাছে ফুল ফল
নদী ভরা জল
পাখির কণ্ঠে গান
সকলি তোমার দান।
০৬. উভয় বাংলার শ্রেষ্ঠ কবিখ্যাত আল মাহমুদ তার নাতিয়া কবিতায় হাউসে কাউসারকে চিত্রিত করেছেন তার নিজস্ব ধর্ম বিশ্বাস থেকেই।
কোনদিন আমি দেখবো কি কোনকালে
সেই মুখ সেই আলোকোজ্জ্বল রূপ?
এই দুনিয়ায় কিম্বা পেরিয়ে গিয়ে
মোহের পর্দা হায়াতের পর্দাকে,
দেখবো নবীকে, আল্লার শেষ নবী
আছেন সেখানে, হ্রদটির কাছে তার
স্ফটিকের মত স্বচ্ছ অমৃত জলে
ছায়া পড়ে যেনো ধরে নাম, কাওসার।
রাসুল নামে, কে এলো
০৭. পল্লীকবি জসীম উদ্দীন রাসুল (সা.) এর প্রশংসায় গেয়ে ওঠলেন-
রসুল নামে কে এলো মদিনায়!
রসুল নামে।
ওরে আকাশের চন্দ্র কেড়ে
ও কে আনল দুনিয়ায় ॥
গলেতে তসবীর মালা
কে চলে ওই কমলিওয়ালা রে
-ওরে আমার বুকের দরজা খোলা
তাঁরে ডেকে নিয়ে আয় ॥
দেখি নাই শুনি নাই কথা
মাইনষে নাশে মাইনষের ব্যথা রে
-ওরে এমনও দরদীর কথা
শুনলে পরাণও জুড়ায় ॥
০৮. কবি গোলাম মোস্তফা সুরা ফাতেহা অবলম্বনে স্রষ্টার পরিচয়, বান্দার প্রার্থিত বন্দনা ও কাঙ্ক্ষিত জীবনের প্রার্থনা করে নিজেকে রবের কাছে সমর্পণ করেছেন তার প্রার্থনা কবিতায়।
অনন্ত অসীম প্রেমময় তুমি
বিচার দিনের স্বামী।
যত গুণগান হে চির মহান
তোমারি অন্তর্যামী।
দ্যুলাক-ভূলোক সবারে ছাড়িয়া
তোমারি চরণে পড়ি লুটাইয়া
তোমারি সকাশে যাচি হে শকতি
তোমারি করুণাকামী।
সরল সঠিক পূণ্য পন্থা
মোদের দাও গো বলি,
চালাও সে-পথে যে-পথে তোমার
প্রিয়জন গেছে চলি।
যে-পথে তোমার চির-অভিশাপ
যে-পথে ভ্রান্তি, চির-পরিতাপ
হে মহাচালক, মোদের কখনও
করো না সে পথগামী।
যুগে যুগে মুসলিম কবি-সাহিত্যিকরা তাদের কবিতা ও রচনার মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলিম সভ্যতাকে এবং মানবতা ও মনুষ্যত্বের পূর্ণতাকে বিকাশ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
লেখক : কবি, লালবাগ, ঢাকা