ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিশে সাড়া জাগানো মুসলিম কবি

জিয়া হক
বিশে সাড়া জাগানো  মুসলিম কবি

যুগে যুগে কবিরা কবিতায় ইসলাম ও মুসলিম সভ্যতার পরিচয় তুলে ধরেছেন। ইসলাম ও ইসলামি সংস্কৃতির সত্যিকার সেবক এমন কালজয়ী কয়েকজন মুসলিম সাহিত্যিকের পরিচয় তুলে ধরা হলো।

হাসসান বিন সাবিত (রা.)

নিজের সভাকবি হাসসান বিন সাবিত (রা.)-এর কাব্য প্রতিভার প্রশংসা করেছেন স্বয়ং আল্লাহর নবী (সা.)। অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তাঁকে সাহিত্যচর্চায়। তাঁকে বলা হতো ‘শায়িরুর রাসুল বা রাসুলের কবি’। বংশগতভাবেই তাঁদের পরিবারে কবিতার চর্চা ছিল। তাঁর কবিতা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, ‘হে হাসসান, আল্লাহর কাছ থেকে তোমার জন্য পুরস্কার হলো জান্নাত।’

আলী বিন আবি তালিব (রা.)

আলী (রা.)-কে আরবি ব্যাকরণের জনক বলা হয়। কারণ তাঁর তত্ত্বাবধানে সর্বপ্রথম আরবি ব্যাকরণ রচিত হয়। সমকালীন আরবি সাহিত্যের গ্রন্থাবলিতে তাঁর কবিতার উদ্ধৃতি পাওয়া যায়। ‘দিওয়ানে আলী (রা.) তাঁর বিখ্যাত কাব্য সংকলন’।

আল্লামা শিবলি নোমানি (রহ.) এ গ্রন্থের মর্যাদার ব্যাপারে বলেন, ‘আরবি কাব্য সাহিত্যে মুআল্লাকা, লামিয়াত, আধুনিক আরবি গদ্য ও কাব্য সাহিত্যের সুবিশাল জগতে দিওয়ানে আলীর তুলনামূলক মূল্যায়ন এভাবে করা যেতে পারে যে ইসলামের অনুপম সত্য ও সুন্দরের উপস্থাপনায়, মানবীয় চেতনার উন্মেষ ও বিকাশের সৃজনশীলতায়, নশ্বর ও পার্থিব মোহের বলয় ভেঙে চিরন্তন জীবনের আহ্বানে, সর্বোপরি মাবুদ ও বান্দার সম্পর্ক ও নৈকট্যের জন্য অনুপম আকুতিসমৃদ্ধ দিওয়ানে আলী তত্ত্বানুসন্ধানী ও শিল্পান্বেষী মানুষের জন্য এক মহামূল্যবান উপহার।’

খানাসা (রা.)

ইসলামের ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী কবি। ৫৭৫ সালে নজদ অঞ্চল বা বর্তমান সৌদি আরবের মধ্যাঞ্চলে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। জিন ও মানুষের কবি হিসেবে পরিচিত খানাসা ছিলেন বিখ্যাত সুলাইম গোত্রের। ভাই সাখার ও মুয়াবিয়ার জন্য লেখা শোককবিতার কারণে আল-খানাসা খ্যাতি অর্জন করেন। তবে আরবি কবিতার সব শাখায় খানাসা (রা.)-এর বিচরণ ছিল। তৎকালীন আরব সভ্যতার বিভিন্ন উপাদান; যেমন- ধুলাবালি, ঝড়-বৃষ্টি, উট-তরবারি, পাহাড়-পর্বতের মনোরম চিত্রায়ণ রয়েছে তাঁর কবিতায়।

বুল্লে শাহ

পাঞ্জাবি সাধক সৈয়দ আবদুল্লাহ শাহ কাদরি বুল্লে শাহ বা বুল্লা শাহ ছিলেন সমকালের একজন বিখ্যাত সাহিত্যিক। তিনি ১৬৮০ সালে পাকিস্তানের পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণ করেন। বুল্লে শাহর কবিতাগুলো কাফি ঘরানার। এটি পাঞ্জাবি ঘরানার এক প্রকার রাগ। পাঞ্জাব ও সিন্ধে এ ধরনের কবিতার চল রয়েছে। প্রেমিক-প্রেমিকারা যেমন তাঁর কবিতায় নিজেদের কথা খুঁজে পেয়েছে, তেমনি ধর্মভীরু মানুষ পেয়েছে তাদের স্রষ্টাকে।

আল্লামা ইকবাল

ইসলামি রেনেসাঁ ও চিন্তার গঠনে মুসলিম বিশ্বের যেসব কবি-সাহিত্যিক বিশেষ অবদান রেখেছেন আল্লামা ইকবাল তাঁদের অন্যতম। উন্নত কাব্যশৈলী, চিন্তার গভীরতা, দূরদর্শিতা ও উম্মতের জন্য হৃদয়ের ব্যথা ছিল তাঁর কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য। তিনি ইসলামের মৌলিকত্ব বজায় রেখে আধুনিক মুসলিম সমাজ গঠনের আহ্বান জানান ভারতীয় মুসলিম সমাজকে।

সাইদ নুরসি

বদিউজ্জামান সাইদ নুরসি আধুনিক তুরস্কের অন্যতম প্রভাবশালী ইসলামি লেখক। বর্তমান তুরস্কের ইসলামি শিক্ষার যে কাঠামো রয়েছে, তাতে সাইদ নুরসির অবদান অনস্বীকার্য।

আল্লামা জালালুদ্দিন রুমি

মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি (রহ.) পূর্ব-পশ্চিমে সমানভাবে সমাদৃত একজন মুসলিম কবি। আল্লামা রুমি ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক সাধক। তাঁর কবিতায় আধ্যাত্মিকতার প্রভাব প্রবল। সারা বিশ্বে তিনি মরমি কবি হিসেবেই পরিচিত। প্রধানত তিনি ফারসি ভাষায় সাহিত্যচর্চা করলেও অনেক স্তবক তুর্কি, আরবি ও গ্রিক ভাষায় রচনা করেছেন। তাঁর লিখিত ‘মসনবি’ অধ্যাত্মবাদীদের বিশেষভাবে চর্চিত। এই গ্রন্থে দ্বিপদী ছন্দোবদ্ধ কবিতার সংখ্যা ২৫ হাজার, যা ছয় খণ্ডে বিভক্ত।

এ ছাড়া বিশ্বে সমাদৃত ইসলামি কবিদের মধ্যে অন্যতম হলেন, শেখ সাদি, ফেরদৌসি, কবি ইবনুল আরাবি, নিজামি গজনবি, ওয়ারিস শাহ, ফরিদ উদ্দিন আত্তার, ওমর খৈয়াম, গালিব প্রমুখ।

লেখক : কবি, লালবাগ, ঢাকা

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত