মুসলিম ছাত্রকে মারতে বলা শিক্ষিকা লজ্জিত নন

প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত বিশ্ব ডেস্ক

ভারতের উত্তরপ্রদেশে একটি মুসলিম ছাত্রকে মারার জন্য ক্লাসেরই অন্য ছাত্রদের নির্দেশ দিয়ে যে শিক্ষিকা দেশজুড়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রে, তিনি সাফ জানিয়েছেন, ওই ঘটনার জন্য তিনি মোটেও লজ্জিত নন। মুজফফরনগর জেলায় তৃপ্তা ত্যাগী নামে ওই শিক্ষিকা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি কেন লজ্জিত হব? একজন শিক্ষিকা হিসেবে আমি আমার গ্রামের সেবা করে আসছি। আর গ্রামবাসীরাও সবাই আমার পাশেই আছে।’ ক্লাসে অবাধ্য ছাত্রদের ‘বাগে আনতেই’ ওই ধরনের পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল। নিজের আচরণের পক্ষে এ সাফাইও দিয়েছেন তিনি। তৃপ্তা ত্যাগী বলেছেন, ‘দেশের সরকার তো আইন বানিয়েই খালাস। কিন্তু আমাদের তো স্কুলে বাচ্চাদের কন্ট্রোল করতে হয়। আমরাই জানি, সমস্যাটা কোথায়!’

এ ঘটনার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুজফফরনগরে নেহা পাবলিক স্কুল নামে ওই স্কুলটি বন্ধ রাখতে বলেছে উত্তরপ্রদেশের শিক্ষাদপ্তর। স্কুলের গেটে তালাও ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। নির্যাতিত মুসলিম শিশুটির বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই স্কুল শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির (ইন্ডিয়ান পিনাল কোড) ৩২৩ ও ৫০৬ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে জানা গেছে। তবে অভিযুক্ত ওই শিক্ষিকাকে গত রোববার বিকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার তো দূরস্থান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও ডাকা হয়নি। এরইমধ্যে মুসলিম ওই বাচ্চাটির মা রুবিনা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ম্যাডাম (তৃপ্তা ত্যাগী) আসলে খুবই অন্যায় করেছেন। সব দেখেশুনে তো মনে হচ্ছে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ থেকেই এ কাজ করা হয়েছে।’

উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগর জেলার খুব্বাপুর নামে যে গ্রামটিতে এ ঘটনা ঘটেছে, সেখানে এখন মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে। শনিবার নির্যাতিত শিশুটির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাবা ইরশাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য অনেক দূর-দূরান্ত থেকেও বহু মানুষ এসেছেন। তারা পরিবারটিকে সমবেদনা জানাচ্ছেন। শিশুটির বাবা ইরশাদ অবশ্য বারবারই বলছেন, তিনি ঘটনাটিকে হিন্দু-মুসলিম বিরোধের দৃষ্টি দিয়ে দেখতে চান না। তিনি বলছেন, ‘বিষয়টা মোটেই হিন্দু-মুসলিম না, বরং একটা বাচ্চাকে মারধর করার। আমাদের সন্তানকে নির্যাতন করা হয়েছে, আমরা তার বিরুদ্ধে এফআইআর করেছি। এখন প্রশাসন এ ব্যাপারে যা করার করবে।’

খতৌলির পুলিশ সুপার রবিশঙ্কর মিশ্রাও জানান, নির্যাতিত শিশুটির পিতার অভিযোগের ভিত্তিতে ইন্ডিয়ান পিনাল কোডের ৩২৩ ও ৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ধারাগুলো হলো, কারও ভাবাবেগে আঘাত হানা ও ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান করা সংক্রান্ত। তবে কোনো বিশেষ ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্বেষসূচক মন্তব্য করলে যে ১২৩-এ ধারায় চার্জ আনা হয়, সেই ধারাটি এ মামলায় যুক্ত করা হয়নি। পুলিশ প্রধান মি. মিশ্রা শুধু বলেছেন, ‘তদন্ত চলছে। তদন্ত এগোলে আরো যেসব তথ্য সামনে আসবে, তার ভিত্তিতে আমরা ব্যবস্থা নেব।’ তবে ওই শিশুটির মা রুবিনা জানিয়েছেন ওই শিক্ষিকার আচরণ মুসলিমবিদ্বেষী ছিল বলেই তার মনে হয়েছে। রুবিনা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ম্যাডাম কাজটা মোটেই ঠিক করেননি। ক্লাসের অন্য বাচ্চাদের দিয়ে আমাদের ছেলেকে মারধর করাটা উচিত হয়নি। উনি নিজে মারলে তবুও বুঝতাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার তো মনে হচ্ছে, উনি মুসলমানদের সহ্য করতে পারেন না। ঘটনার মানে তো তা-ই দাঁড়াচ্ছে!’

গ্রামেরই আরেক প্রান্তে অভিযুক্ত শিক্ষিকা তৃপ্তা ত্যাগীও দুদিন ধরেই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে দেখা করছেন, বিভিন্ন চ্যানেলে ‘বাইট’ও দিচ্ছেন। মিস ত্যাগী বারবার একটা জিনিসই বলছেন, তার স্কুলে বেশিরভাগ ছাত্রই মুসলিম। এমনকি যাদের উনি বাচ্চাটিকে মারতে বলেছিলেন, তাদের মধ্যে মুসলিম ছাত্রও ছিল। কাজেই এর মধ্যে মুসলিমবিদ্বেষের কিছু নেই।