জানাজা শুধু একবার পড়াই বিধান। এর মাধ্যমে সব মুসলমানের ফরযিয়াত আদায় হয়ে যায়। ফরজে আইন হলে কাযা করা লাগে। এটি তো এমন নয়। এক মৃতের একাধিক জানাজা সুন্নাহসম্মত নয়। সুতরাং মৃতের অভিভাবক জানাজা পড়ে নিলে বা তার সম্মতিতে জানাজা পড়া হয়ে গেলে দ্বিতীয়বার জানাজা পড়া বিদআত ও মাকরুহ। অভিভাবক না থাকলেই মাত্র অভিভাবক দ্বিতীয়বার জানাজা পড়তে পারে, অন্য কেউ নয়। চার মাযহাবের কেউই গায়েবানা জানাজাকে বৈধ বলেননি।
হজরত নাফি (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রদি.) কোনো জানাজায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে জানাজা শেষ হয়ে গেলে মৃতের জন্য দোয়া করে ফিরে আসতেন। দ্বিতীয়বার জানাজা পড়তেন না। (আবদুর রাজজাক : ৬৫৪৫)। ইবরাহিম নাখয়ি (রহ.) এক মাইয়্যেতের একাধিক জানাজা পড়তে নিষেধ করেছেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১২০৭০)। হজরত হাসান বসরি (রহ.) সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি মৃতের জানাজা না পেলে মৃতের জন্য ইস্তিগফার করতেন। অতঃপর বসতেন অথবা ফিরে যেতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১২০৭১)।
সালেহ ইবনে নাবহান (রহ.) বলেন, সহাবীরা (রদি.) জানাজার জায়গা সংকীর্ণ হলে (মাসজিদে) নামাজ না পড়ে ফিরে যেতেন। (ইবনে আবি শায়বা: ১২০৯৭)। এসব বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হয়, সাহাবা-তাবেঈনের যুগে দ্বিতীয়, তৃতীয় জানাজার প্রচলন ছিল না। একাধিক জানাজা যদি জায়েজ হতো, তবে তারা ফিরে যেতেন না। মৃতের জানাজা হয়ে যাওয়ার পর হাদিসের নির্দেশনা মোতাবেক লাশ দ্রুত দাফন করে দেয়া শরিয়তের নির্দেশ। দ্বিতীয় বা তৃতীয় জানাজার জন্য লাশ রেখে দেওয়া নিয়মপরিপন্থি। (বাদায়েউস সানায়ে : ২/৪৭)। জানাজা সহিহ হওয়ার জন্য লাশ সামনে উপস্থিত থাকা আবশ্যক। অনুপস্থিত লাশের গায়েবানা জানাজা আদায়ের বিধান নেই। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় অসংখ্য সাহাবি (রদি.) মদিনার বাইরে দূর-দূরান্তে শহীদ হয়েছেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে তাদের গায়েবানা জানাজা পড়ার কোনো ঘটনা বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নেই। তদ্রুপ খুলাফায়ে রশিদীন থেকেও গায়েবানা জানাজা পড়ার প্রমাণ নেই। অথচ তাদের খেলাফতকালে বিভিন্ন যুদ্ধে মুজাহিদরা শহীদ হয়েছেন। গায়েবানা জানাজা যদি সুন্নাহ সম্মত হতো, তাহলে সাহাবিরা (রদি.) অবশ্যই ওই সুন্নাহর অনুসরণ করতেন; কখনো পরিত্যাগ করতেন না।
আল্লামা ইবনুল ক্বয়্যিম (রহ.) জাদুল মা’আদ গ্রন্থে লেখেন, অনুপস্থিত লাশের গায়েবানা জানাজা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সুন্নাহ ও আদর্শ ছিল না। কেননা অসংখ্য মুসলমান দূর-দূরান্তে ইন্তেকাল করেছেন। কিন্তু তিনি তাদের গায়েবানা জানাজা পড়েননি। (জাদুল মাআদ: ১/১৪৮)। হজরত ইমরান ইবনু হুসাইন (রদি.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের ভাই নাজাশি ইন্তেকাল করেছে। সুতরাং তোমরা তার জানাজা আদায় কর। হজরত ইমরান (রা.) বলেন, অতঃপর রাসুলে করিম (সা.) দাঁড়ালেন। আর আমরা তার পেছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। অতঃপর তিনি তার জানাজা পড়ালেন। আমাদের মনে হচ্ছিল, নাজাশির লাশ তার সামনেই রাখা ছিল। (মুসনাদে আহমদ: ২০০০৫)।
অনেক মুহাদ্দিস নাজাশির জানাজা সংক্রান্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এ ঘটনাটি বিশেষ এক প্রয়োজনের কারণে সংঘটিত হয়েছিল।
তা হলো, নাজাশির মৃত্যু হয়েছিল এমন এক ভূখণ্ডে যেখানে তার জানাজা পড়ার মতো কোনো (মুসলিম) ব্যক্তি ছিল না। তাই আল¬াহর রাসুল (সা.) সাধারণ নিয়মের বাইরে তার জানাজা পড়িয়েছেন।
এর ওপর ভিত্তি করে ব্যাপকভাবে প্রচলিত গায়েবানা জানাজাকে বৈধ বলার সুযোগ নেই। কেননা অনুসৃত সুন্নাহর সঙ্গে এটির কোনো মিল নেই। (সংক্ষেপিত, সৌজন্যে: মাওলানা আবদুল জাব্বার)।