ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বগুড়ার প্রতাপ খাদুলীতে বিলুপ্তপ্রায় প্রাচীন এক মসজিদ

মুহাম্মদ আবু সালেহ
বগুড়ার প্রতাপ খাদুলীতে বিলুপ্তপ্রায় প্রাচীন এক মসজিদ

সবুজ-শ্যামলে ঘেরা বাংলার এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি গ্রাম। ডানে-বামে সুবিশাল ‘কবরস্থান’। সামনে সবুজে ছাওয়া সুবিশাল এক মাঠ। নববি শিক্ষাকেন্দ্র কওমি মাদ্রাসা। তার পাশেই আছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ গ্রামটি উত্তরবঙ্গের বগুড়া জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। গ্রামের নাম প্রতাপ খাদুলী। এ গ্রামে একটি পুরোনো মসজিদ আছে। মসজিদটির নাম ‘প্রতাপ খাদুলী জামে মসজিদ’। মসজিদটি সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের পথে। ধারণা করা হয়, সম্রাট শাহজাহানের আমলে ১৬৩৮ সনে এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণ গঠনে মিশরি সংস্কৃতি ও স্থাপত্য শিল্পের ছোঁয়া আছে। প্রায় ৪০ বছর এ মসজিদে মোয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালনকারী এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি মরহুম আলহাজ আছাব উদ্দিন তালুকদার সূত্রে জানা যায়- তিনি বলেন, আমার দাদার কাছে শুনেছি, ১৭ শতাব্দীর শুরুর দিকে নির্মিত হয় এ মসজিদ। তার বক্তব্য, তৎকালীন অত্র এলাকার ধর্মপ্রিয় মানুষরা সম্মিলিতভাবে ধর্মীয় কার্যক্রম আঞ্জামের (তথা নামাজ, দোয়া-দরুদ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের) জন্য এটি নির্মাণ করেন। প্রায় ১২০ ফিট সুউচ্চ একটি সুবিশাল গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ এটি। গম্বুজের উপরিভাগকে কয়েকটি ধাপে সাজানো হয়েছে। এ মসজিদের ভেতর দুই সারিতে মুসল্লিরা নামাজে দাঁড়াতে পারে। প্রতি কাতারে পাঁচ থেকে ছয়জন লোক সংকুলান হয়। মসজিদটির ছোট্ট একটি মেহরাব আছে। দু’পাশের দেওয়ালে আছে কোরআন শরিফ ও গ্রন্থাদি রাখার খোপ আকারে সেলফ। আর ভেতরের উপরের অংশে রয়েছে উন্নত ও ডিজাইনকৃত চকচকে গ্লাস। যা ভেতরের অংশের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে মরহুম আলহাজ আছাব উদ্দিন সাহেবের বক্তব্য অনুযায়ী, আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে বিশাল আকৃতির গম্বুজের একদম উপরের ছোট্ট গম্বুজটিতে মূল্যবান ধাতু সংরক্ষিত থাকায় দুষ্টলোকরা তা ভেঙে সব মূল্যবান ধাতু নিয়ে যায়। যা আজও সেভাবেই দৃশ্যমান। মসজিদের বাইরের চারপাশে আগের করা কারুকার্য বহাল না থাকলেও গ্রামবাসীর যৌথ অর্থায়নে সিমেন্ট ও বালু দিয়ে তিন শতক আগের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সংস্কার করা হয়েছে। গ্রামবাসী তাদের গৌরবময় এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে সময় সময় মসজিদটিতে বিভিন্ন সংস্কার কাজ করে থাকেন। এলাকার লোকের আধিক্যতা বিবেচনা করে মরহুম আছাব উদ্দিন তালুকদারের উদ্যোগে উক্ত মসজিদের সঙ্গে সংযুক্ত করে পেছনে একটি ছয় কাতারবিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণ করা হয়। তারপরেও এলাকার ধর্মপ্রিয় মানুষের নামাজের জায়গা সংকুলান হচ্ছিল না। তাই ২০২৩ সালের শুরুর দিকে পুনরায় এলাকাবাসীর নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ১২ কাতার বিশিষ্ট তিন তলাবিশিষ্ট একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। যার কাজ এখনো চলমান। সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এলাকাবাসীর আবেদন যে, এ বাংলায় প্রায় ৩০০ বছর আগের মুসলিম সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহক এ মসজিদটির সংস্কার ও সৌন্দর্য বর্ধনমূলক সংস্কার কাজে যেন কালক্ষেপণ না করে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করেন ।

লেখক : সহকারী মুফতি, মারকাযুদ্ দাওয়াহ ওয়াল ইরশাদ ঢাকা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত