ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

স্মরণ

ক্ষণজন্মা মনীষী মওলানা আবদুর রহিম

শেখ নজরুল ইসলাম
ক্ষণজন্মা মনীষী মওলানা আবদুর রহিম

১ অক্টোবর ছিল বিশিষ্ট লেখক, গবেষক, অনুবাদক, দার্শনিক ও রাজনীতিবিদ মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহিম (রহ.)-এর মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ১৯৮৭ সালের ১ অক্টোবর রাশমনো পলিক্লিনিক, ঢাকায় ইন্তেকাল করেন।

তিনি সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদি ও ইউসূফ আল-কারযাবির বই বাংলায় অনুবাদ করে খ্যাতি অর্জন করেন। এছাড়াও ইসলাম নিয়ে বাংলা ভাষায় তার মৌলিক রচনা রয়েছে। মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহিম (রহ.) গত শতকের এক অনন্য প্রতিভা। গত শতকে যে কজন খ্যাতনামা মনীষী ইসলামি জীবনব্যবস্থা কায়েমের সংগ্রামে নেতৃত্ব দানের পাশাপাশি লেখনীর সাহায্যে ইসলামকে একটি কালজয়ী জীবন-দর্শন রূপে তুলে ধরতে পেরেছেন, তিনি তাদের অন্যতম। শেষ জীবনে মওলানা আবদুর রহিমের রাজনৈতিক চিন্তার মধ্যেও কিছুটা পরিবর্তন এসেছিল। তিনি মওলানা মওদুদির গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ভেতর দিয়ে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কর্মসূচিতে অনাগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। সম্ভবত বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতারণামূলক নির্বাচন পদ্ধতি তাকে কিছুটা হতাশ করেছিল এবং পশ্চিমের রাজনৈতিক মডেলের ভেতর দিয়ে ইসলামিব্যবস্থা কায়েম সম্ভব কি না, তা নিয়ে তিনি যথেষ্ট চিন্তাভাবনা করেছিলেন। যার ফলে তিনি জামায়াতে ইসলামি থেকে বেরিয়ে নতুন দল গঠন করেছিলেন। ১৯৮৫ সালে জীবনের শেষ দিকে এসে তিনি একটি বক্তৃতা দেন, যেখানে তিনি গণতান্ত্রিকব্যবস্থাকে পুরোপুরি ‘না’ বলে ইসলামের রাজনৈতিকব্যবস্থা খিলাফতকে অনুমোদন করেছেন এবং তা প্রতিষ্ঠার জন্য যে একটি বিপ্লবের প্রয়োজন, সেটার কথাও তিনি তুলে ধরেছেন। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল- মহান এই মনীষীর সান্নিধ্য পাওয়ার। ফলে মার্ক্সীয় দর্শনের বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে আসা সহজতর হয়েছিল। মুসলিম সমাজে আধুনিকতাকে ঔপনিবেশিকতার দানই বলতে হবে। এই দান ভালো হয়েছে, না মন্দ হয়েছে- তার বিচারের প্রয়োজনও এখন জরুরি হয়ে উঠেছে। ঔপনিবেশিক শক্তির জোরে আধুনিকতাকে মুসলিম সমাজের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। এটাকে বলা চলে এক ধরনের আরোপিত আধুনিকতা। এই আধুনিকতা মুসলিম সমাজের ইতিহাসের ভেতর দিয়ে বিবর্তিত হয়নি। যার ফলে মুসলিম সমাজ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। একদল কলোনীর আধুনিকতাকে প্রাণপণে কবুল করে আরেক দল ততোধিক শক্তিতে এটিকে তালাক দেয়। এভাবে মুসলিম সমাজ দ্বিধাবিভক্ত হওয়ার পরিণতিতে বিশ্বাসীদের ঐক্য দুর্বল হয়ে যায়। মুসলিম উম্মাহর বিভাজনকারী এই আধুনিকতাবাদী চিন্তাভাবনাকে মওলানা আবদুর রহিম পশ্চিমা বিশ্ব থেকে যেমন বুঝার চেষ্টা করেন, তেমনি ইসলামের পরিসর থেকেও এটিকে পর্যালোচনা করেন। মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহিমের লেখা আজকের চিন্তাধারা বইটি পশ্চিমা সভ্যতার নৈতিক ও দার্শনিকভিত্তির একটি নিখুঁত বিশ্লেষণ এবং পশ্চিম মনস্ক বাঙালি মুসলিম পাঠকের কাছে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে পশ্চিমকে বুঝা ও প্রশ্ন করার পরিসর তৈরি করেছে। এদেশের আধুনিকতাবাদীদের কাছে শক্তিশালী পশ্চিম প্রায় প্রশ্নোর্ধ হয়ে উঠেছে। মওলানা আবদুর রহিম সেই জায়গায় পশ্চিমের নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সীমাবদ্ধতাকে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। শুধু তাই নয়, পশ্চিমের বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তি ও দুর্বলতাকে তুলে ধরে তিনি যেমন বাঙালি পাঠককে নাড়া দিয়েছেন, তেমনি এর বিকল্প বয়ান হিসেবে ইসলামের নৈতিক ও অহিভিত্তিক দর্শনের প্রস্তাবনা করেছেন। মওলানা আবদুর রহিমের মতো একজন গুণী পণ্ডিত ব্যক্তিকে নিয়ে যে রকম আলোচনা হওয়ার প্রয়োজন ছিল তার তেমন কিছুই হয়নি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত