মুফতি শাহ আমিমুল ইহসান সিদ্দিকি
ইমাম ও খতিব, মসজিদ-ই বায়তুস সালাম, ত্রেভেজো, ইতালি
প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
প্রশ্ন : এক টাকা বা কয়েক কোটি টাকা বিয়ের মহর নির্ধারণ করার বিধান কী?
উত্তর : হানাফি মাজহাব মতে সর্বনিম্ন মহর দশ দিরহাম অর্থাৎ দুই ভরি সাড়ে সাত মাশা রুপা, যা গ্রাম হিসাবে ৩০.৬১৮ গ্রাম রুপা হয়। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৪ হাজার ৫০০ টাকা। সর্বনিম্ন মহর নির্ধারণের ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো দশ দিরহাম খাঁটি রুপা তথা ৩০.৬১৮ গ্রাম রুপার বাজারমূল্য যখন যা হবে তা-ই হবে শরিয়ত নির্ধারিত সর্বনিম্ন মহরের পরিমাণ। এ মূলনীতির আলোকে দশ দিরহামের কম মূল্যে যে কোনো অঙ্ক মহর হিসেবে নির্ধারিত হলে তা শরিয়তসম্মত মহর হিসেবে গণ্য হবে না। মহর পরিমাণে কম হওয়া শরিয়তে প্রশংসনীয়, তবে এর উদ্দেশ্য এ নয়, এক টাকা দুই টাকা যার যা খুশি তাই মহর নির্ধারণ করবে। এটা ইসলামি শরিয়তসম্মত নয়। ইসলামি শরিয়তে মহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ রাখা হয়েছে আর্থিকভাবে দুর্বল লোকদের কথা বিবেচনা করে, যাতে তারাও নারীর সম্মতির শর্তে এই পরিমাণ অর্থ দ্বারা বিবাহ করতে পারে। মহর নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিয়ের পাত্রীর বংশীয় নারীদের বিয়ের মহরই মূলত তার আসল হক। শরিয়তে এটা ‘মহরে মিছিল’ হিসেবে পরিচিত। তবে পাত্রপাত্রীর উভয়পক্ষের সম্মতিতে মহরে মিছিল হতে কমবেশি করেও মহর নির্ধারণ করা যাবে। মহর নির্ধারণের ক্ষেত্রে অবশ্য অনুসরণীয় নীতি হলো, ‘নির্ধারিত মহর এই পরিমাণ হতে হবে, যাতে স্ত্রীর মর্যাদা রক্ষা হয় এবং স্বামীর সামর্থ্যরে চেয়ে বেশি না হয়।’ স্বামীর সামর্থ্যরে বাইরে মহর নির্ধারণ করা উচিত নয়। কারণ মহর শুধু বিয়ের কাবিননামায় লেখার জিনিস নয়, এটা স্ত্রীর প্রাপ্য। স্বামী পরিশোধ না করলে গোনাহগার হবে। স্বামীর সামর্থ্য থাকলে উভয়পক্ষের সম্মতিতে সর্বোচ্চ যে কোনো পরিমাণ মহর নির্ধারণ করা যায়, কিন্তু সামর্থ্য নেই শুধু লোক দেখানোর জন্য মোটা অঙ্কের মহর নির্ধারণ করা অনুচিত। এতে ঋণের বোঝা বহন করা ছাড়া কোনো ফায়দা নেই। মনে রাখা জরুরি, এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আর্থিক লেনদেন। এর যাবতীয় দিক শরিয়ত অনুযায়ী ও পরিষ্কারভাবে হওয়া উচিত এবং সে হিসেবেই তা পরিশোধের চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। কয়েক কোটি টাকা মহর নির্ধারণ করল; কিন্তু পরিশোধ করল না বা করতে পারল না এটি বড়ই অন্যায়। আরো বড় অন্যায় হলো, সারা জীবন স্ত্রীর সঙ্গে প্রতারণা করে কিংবা মহর আদায়ে উদাসীন থেকে মৃত্যুশয্যায় পতিত হয়ে স্ত্রীর কাছে মাফ চাওয়া, যখন পরিস্থিতির চাপে স্ত্রীরও মাফ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। এমন আচরণ মূলত পুরুষের পৌরুষত্বকেই কলঙ্কিত করে। তাই মনে রাখতে হবে, দশ দিরহামের কম ও সামর্থ্যরে চেয়ে বেশি মহর নির্ধারণ করা যাবে না। উল্লেখ্য, শরিয়তসম্মত সর্বনিম্ন পরিমাণের চেয়ে কম যেমন এক টাকা, দুই টাকা ইত্যাদি যে কোনো অঙ্কের মহর ধার্য করা হলেও বিয়ে সহি হয়ে যাবে, কিন্তু এক্ষেত্রে স্বামীর ওপর সর্বনিম্ন মহর দশ দিরহামই পরিশোধ করা আবশ্যক হবে। আর সর্বোচ্চ মহর যা ধার্য করা হবে তাই পরিশোধ করতে হবে। (শরহু মুখতাসারিত তাহাবি ৪/৩৯৮, সুরা তালাক : ৭,-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩০৩, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৩৭৫, আলবাহরুর রায়েক ৩/১৪৩, আদ্দুররুল মুখতার ৩/১০২)।