ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কোরআন গবেষণায় উইলিয়াম টিসডালের ভ্রান্তিবিলাস

মুসা আল হাফিজ
কোরআন গবেষণায় উইলিয়াম টিসডালের ভ্রান্তিবিলাস

উইলিয়াম ক্লেয়ার টিসডাল (১৮৫৯-১৯২৮) ছিলেন একজন ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ। আরবিসহ বেশ কয়েকটি প্রাচ্যয়ীও ভাষায় পারদর্শী ছিলেন তিনি। ইরানে ‘চার্চ অব ইংল্যান্ড’ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মিশনারি সোসাইটির সেক্রেটারি ছিলেন। ফারসি, হিন্দি, গুজরাটি ও পাঞ্জাবি ভাষার ব্যাকরণ সংকলন করেন তিনি। এসব ভাষায় তার অধিকার স্বীকৃত ও প্রশংসিত।

টিসডাল কোরআন নিয়ে দুটি বই লিখেন। সেগুলো হচ্ছে- The Original Sources of the Quran (কোরআনের মূল উৎস) এবং The Sources of islam (ইসলামের মূল উৎস)। [১] প্রথম বইটি ১৯০৫ সালে নিউইয়র্কে এবং দ্বিতীয়টি ১৯০১ সালে স্কটল্যান্ডে প্রকাশিত হয়। বই দুটিতে ছিল বিস্তর ভ্রান্তি। মৌলভী মুহাম্মদ আলী এবং ইমাম ফখরুল ইসলামের সমালোচনা করলে প্রতিক্রিয়া হিসেবে টিসডাল লিখেন দীর্ঘ এক প্রবন্ধ। যার শিরোনাম হলো- A Word to the wise, being a brief defense of the Sources of Islam। ১৯১২ সালে প্রবন্ধটি লখনৌ, মাদ্রাজ ও কলম্বো থেকে প্রকাশিত হয়। [২] ক্লেয়ার টিসডালের ‘The Original Sources of the Quran’ বইটি ছয় অধ্যায়ে বিভক্ত। গোটা বইয়ের সারকথা হলো- কোরআন আসমানি কিতাব নয়। বরং এ কিতাব জাহেলি যুগের আরব রীতিনীতি, খ্রিষ্টবাদ, ইহুদিবাদ, সাবিবাদ, দ্বীনে হানিফ এবং জরথুষ্ট্রবাদের চিন্তা ও চর্চা দ্বারা প্রভাবিত।

টিসডালের বইয়ের প্রথম অধ্যায়টি পরিচিতিমূলক।

এ অধ্যায়ে তিনি কোরআনকে মুহাম্মদের (সা.) নিজস্ব রচনা বলে বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি সুরাগুলোকে নাজিল হওয়ার ক্রমধারা অনুযায়ী জড়ো করি, তাহলে স্পষ্ট দেখতে পাব যে, কোরআন ও নবীর জীবনে ঘটে যাওয়া পরিস্থিতি ও কাহিনির মধ্যে হুবহু মিল রয়েছে। যা প্রমাণ করে, ইসলামের নবী সফল জীবন যাপনের জন্য পরিস্থিতি মাফিক অহি বানাতেন। আর অনুসারীদের বলতেন, এ আুল্লাহর তরফ থেকে অবতীর্ণ প্রত্যাদেশ।’

টিসডাল দাবি করেন : ‘ইসলামের নবী মনমতো অহি বানিয়ে প্রচার করতেন। কোরআন সময় ও উপলক্ষ্য হিসেবে মুহাম্মদের জীবন ও চরিত্রের একটি বিশ্বস্ত দর্পণ। এটি মরুভূমির কথা বলে, নবীর অনুসারীদের যুদ্ধের আর্তনাদ শুনায়, মুহাম্মদের মনের কাজ ও কথাকে ভাষা দান করে।’ [৩] টিসডালের এই আপত্তি মূলত বাহুল্যের উপর ভর করে খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসের উচ্চারণ। বাহুল্য হলো কোরআনের আয়াতগুলোকে নবীজীবন ও পরিস্থিতির বিবরণী হিসেবে দেখানো। কোরআনের আয়াতগুলো যে কারণে আল্লাহর রাসুলের জীবনের সঙ্গে মিলে যায়, তা বিলকুল স্পষ্ট। তা হলো, আল্লাহতায়ালা তাঁর রাসুল ও অনুসারীদের বাস্তব জীবনে নির্দেশনা দিয়েছেন ঘটনাচক্রের ধারায়। তাই রাসুল ও তাঁর সাহাবা যে বাস্তব পরিস্থিতি ও সমস্যার সম্মুখীন হতেন, তার সঙ্গে সঙ্গতি রয়েছে, এমন আয়াতগুলো নাজিল করতেন অনেক সময়। সব সময় বা সব ক্ষেত্রে তা ঘটত না। এটা যে ঘটত, তার কারণ হচ্ছে- জীবনযাপনের বহুমাত্রিকতার সঙ্গে ইসলামের প্রয়োগশীলতা। আল কোরআন ধীরে ধীরে অবতরণের প্রজ্ঞাগুলোর মধ্যে ঘটনাচক্রও তার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ দিকনির্দেশার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কোরআন জীবনের নির্দেশিকা হিসেবে নাজিল হয়েছে। যদি এতে ভবিষ্যতের জন্য দিকনির্দেশনা থাকে; কিন্তু জাতি যে সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা থেকে উত্তরণের নির্দেশনা না থাকলে এর পূর্ণতাই বরং খর্ব হয়।

আল্লাহর কালাম যে যুগ ও জাতির মাঝে নাজিল করা হচ্ছে, সে যুগ ও জাতির সমস্যাকে উপেক্ষা করবে কেন? অতীতের ধর্মগ্রন্থগুলো কি তা উপেক্ষা করেছিল? করেনি।

বরং সেসব গ্রন্থ প্রায়ই সংশ্লিষ্ট জাতি ও সময়কালে আবদ্ধ রেখেছে দৃষ্টি। কিন্তু কোরআন একই সঙ্গে কালীক ও কালাতিক্রমী, একই সঙ্গে সাময়িক ও সময়োত্তর, স্থানিক ও স্থানাতিক্রমী। কোরআন যেখানে মুহাম্মদ (সা.) কে সম্বোধন করে বিধান দিচ্ছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, বিধানটি সবার জন্য প্রযোজ্য। ফলে ব্যাপারটি একই সঙ্গে ব্যক্তিক ও নৈর্ব্যক্তিক থাকছে। কী অর্থে, কী বিধানে। টিসডাল আল কোরআনের এই বাস্তবতাকে বুঝতে পারেননি কিংবা বুঝতে চাননি। ফলে ভাবছেন কোরআনে নবী মুহাম্মদ ও সঙ্গীদের উল্লেখ মানে ব্যক্তির জীবনবৃত্তান্ত। কোরআনকে কেউই জীবনবৃত্তান্তের বর্গে ফেলতে পারবে না। একে অসম্ভব করে দিয়েছে কোরআন নিজেই। কারণ জীবনবৃত্তান্তের কোনো চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য তার মধ্যে নেই। তবে যার কাছে আল কোরআন নাজিল হয়েছে, তিনি হলেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। আল্লাহর নির্দেশনার বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছে তার জীবনে। ফলে কোরআনে বিবৃত বাক্যে যা নির্দেশিত, তার জীবন্ত নমুনা ও শিক্ষক হিসেবে মহানবী উল্লেখিত হয়েছেন। সেই সব উল্লেখ কোনো জীবন কাহিনির আদলে নয়, শুধুই আল কোরআনের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও বিশেষত্বের আলোকে, যার সঙ্গে মিলবে, এমন গ্রন্থ কোথাও আরেকটি নেই। নবী-সাহাবিদের জীবনে আপতিত নানা পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সম্বোধনমূলক বিবৃতি কখনো প্রমাণ করে না- এটি ইসলামের নবীর নিজস্ব রচনা।

টিসডাল বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে দেখাতে চেয়েছেন, ইসলাম ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ উৎস (Sources) হলো- জাহেলি যুগের আরবরীতি, রেওয়াজ এবং বিশ্বাস (Pagan Center)। নমুনা হিসেবে তার দাবি নবী মুহাম্মদ ইসলামের বহুবিবাহ ও দাসপ্রথার আইন জাহেলি যুগের আরব সমাজ থেকে নিয়েছেন ইত্যাদি। টিসডাল এ অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়েছেন- —Influence of Ancient Arabian Beliefs and Practices অর্থাৎ, প্রাচীন আরবীয় বিশ্বাস ও অনুশীলনের প্রভাব। তার বয়ান হলো ‘আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে, ইসলামের প্রথম উৎস নবীযুগের আরবদের ধর্মীয় আকিদা ও আচার থেকে গৃহীত। ইসলাম বহুবিবাহ ও দাসপ্রথার আইন আরবদের থেকে নিয়েছে। ইসলামের নবী নিজে বহুবিবাহ গ্রহণের মাধ্যমে সর্বকালের জন্য একে অনুমোদন দিয়েছেন’। [৪] টিসডাল এখানে জবরদস্তি করলেন। তার বাড়াবাড়ি ও সাধারণিকরণের এটি এক নমুনা।

ইসলাম আবহমান মানবজীবনের সব কিছু বদলাতে আসেনি। সমাজে যা চলমান, তাকে সংস্কার করেছে ইসলাম। তাকে কল্যাণী খাতে প্রবাহিত করেছে এবং তার মধ্য থেকে মন্দকে প্রতিরোধ করেছে। ফলে ইসলাম যে সব বিষয়ের বিধান দিয়েছে, তার আগের সমাজে থাকবে না, এটা অবাস্তব কল্পনা। তেমনি ইসলাম নিজেকে কখনো একেবারে নতুন দ্বীন বলে দাবি করেনি। পূর্র্বতী সব নবীর শিক্ষার পূর্ণতা হচ্ছে ইসলাম। ফলে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর দ্বীনে হানিফের নানা বিশ্বাস, রীতি, আচার ও অভ্যাস কোরআনে স্বীকৃত হয়েছে। আরবরা প্রধানত ছিলেন নবী ইবরাহিমের (আলাইহিস সালাম) পুত্র ইসমাইলের বংশধর। ধর্মে ছিলেন তারা দ্বীনে ইবরাহিমের অনুসারী। কিন্তু বহু শতাব্দীর ক্রমধারায় এই ধর্মে নানা কুসংস্কার ও প্যাগান উপাদান প্রবেশ করে। বিকৃতির তলায় চাপা পড়ে এর শিক্ষা। এই ধর্মের যে সব অবশেষ বিদ্যমান ছিল, ইসলাম সেগুলোকে নিজস্ব ছাচে ফেলে বৈধতা দিয়েছে। জাহেলিযুগে বিকৃত অবয়বে সেগুলোর চর্চা হতো।

যেমন- জান্নাত ও ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান, তাওয়াফ ও সায়ী, মিনায় অবস্থান, মুযদালিফার শাআয়ের তথা আচার-অনুষ্ঠান এবং বিবাহ ও খতনার আদত ইত্যাদি। কোরআনের শিক্ষা সেগুলোকে সংস্কার করেছে। আমর ইবনে লুহাই প্রথম ব্যক্তি যে বনী ইসমাইলের মধ্যে মূর্তিপূজার প্রচলন করে। সিরিয়া সফরের সময় সে বালকা ভূমিতে বসবাসরত আমালেকার মুশরিকদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ‘হুবল’ নামক মূর্তিটি মক্কায় নিয়ে আসে। [৫] বহুবিবাহ নিয়ে যে আলাপ, তা টিসডালের বিভ্রান্তির ফসল। সেটা আরবদেরই রীতি নয়, প্রতিটি সেমেটিক ধর্মের উত্তরাধিকার। কোনো সেমেটিক ধর্মে তা নিষিদ্ধ ছিল না। আমরা জানি, মহিমান্বিত নবী ইবরাহীম আলাইহিস সালাম, হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম, হজরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম, হজরত সুলায়মান আলাইহিস সালাম প্রমুখ একাধিক বিয়ে করেছেন।

দাসপ্রথার বিষয়ে না প্রাচীন আরব দায়ী, না ইসলাম। ইসলাম দাসপ্রথার প্রচলন করেনি।

বরং হাজার বছর ধরে ইউরোপসহ গোটা বিশ্বে এই প্রথার ব্যাপক বিস্তার ছিল। জাহিলি যুগে আরবে দাসপ্রথা একটি অলঙ্ঘনীয়, স্থায়ী ও বহুমুখী বাস্তবতা হিসেবে বিদ্যমান ছিল। ইসলাম দাসপ্রথাকে রেওয়াজ হিসেবে না নিয়ে প্রজ্ঞাপ্রসূত প্রক্রিয়ায় দাসদের মুক্তির পথ রচনা করেছে। দাসত্বকে নয়, বরং তাদের মুক্তিকে সুগম করেছে। মুক্তিদানকে মহান সওয়াবের বিষয়ে শুধু পরিণত করেনি, বরং একে নানাক্ষেত্রে পাপমুক্তি ও কাফফারার আবশ্যকীয় স্তরে পরিণত করেছে। মুসলিমসভ্যতা দাসদের দিয়েছে সামাজিক সেই অবস্থান, যেখান থেকে শিক্ষায়, সংস্কৃতিতে, ধর্মীয় শাস্ত্রচর্চায়, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ, সমর বা সভ্যতায়, রাজত্ব পরিচালনায়, রাজবংশ গঠনে, সেনাপতিত্বে তারা সর্বোচ্চ অবস্থান লাভের পথ পেয়েছেন। আত্মউন্নয়নে মুসলিম সভ্যতায় দাস ও মুক্তদাসদের অবস্থান এতো ঊর্ধ্বে, যার নজির বিশ্বের ইতিহাসে নেই। কোরআনে দাসবিষয়ক ভাষ্য কোনো অর্থেই জাহেলি আরবদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে না।

তৃতীয় অধ্যায়ে টিসডাল নিজের সিদ্ধান্ত পেশ করে বলেন, ইসলাম ও কোরআনের দ্বিতীয় উৎস হলো ইহুদি ও সাবিয়ান চিন্তাধারা ও ধর্মীয় আচার। তিনি এ অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়েছেন- Influence of Sabian and Jewish Ideas and Practices ‘সাবিয়ান-ইহুদি ধারণা ও অনুশীলনের প্রভাব।’ [৬] টিসডালের দাবি হলো, ‘নবী মুহাম্মদ (সা.) ঈমান, বেহেশত, জাহান্নাম, ফেরেশতা, শয়তান, তওবা, জিবরাইল ইত্যাদির ধারণা ইহুদি ধর্ম থেকে ধার করেছেন।’ ‘বিশ্বাস, অনুতাপ, স্বর্গ, নরক, শয়তান, ফেরেশতা, জিবরাইল এসবকিছু ইহুদি উৎস থেকে অর্জিত নমুনামাত্র।’ [৭] তার ধারণা, ইহুদিরা যেহেতু আরব সমাজে বিদ্যমান ছিল, তাই ইসলামের নবী (রাসুল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের আকিদা, ধ্যান-ধারণা ও ধর্ম সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত ছিলেন। ফলত তিনি ইহুদিদের মধ্যে তার নতুন ধর্মের গ্রহণযোগ্যতা (acceptance) তৈরির জন্য তাদের ধর্ম থেকে অনেক কিছু আল কোরআনে যুক্ত করেন। প্রকৃতপক্ষে এই দাবি অনৈতিহাসিক। মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে কোরআনের বিপুল বিশাল অংশ, সেখানে কোনো ইহুদি ছিল না। তবে মদিনায় ইহুদি ছিল বটে; কিন্তু ইহুদিদের সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে তখনই, যখন মহানবী (সা.) মদিনায় গিয়েছিলেন। এতক্ষণে কোরআন নাজিলের ১৩ বছর কেটে গেছে এবং কোরআনের দুই-তৃতীয়াংশের অবতরণ সমাপ্ত হয়ে গেছে। বাস্তবতা হলো সে সময় তাওরাতের আরবি সংস্করণ ছিল না। আরবি সংস্করণের তাওরাত তখন না ছিল আরবে, না ছিল বিশ্বের অন্য কোথাও। আরবি ভাষায় তাওরাতের সংস্করণ প্রকাশ পায় নবীজির ইন্তেকালের প্রায় ২৫০ বা ২০০ বছর পরে। অর্থাৎ ৮৯৭ বা ৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে আরবিতে অনূদিত তাওরাত প্রথম প্রকাশিত হয়। [৮] অতএব, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহুদিদের কাছ থেকে ধর্মীয় চিন্তা ও ধারণা গ্রহণ করেছেন, এমন দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অমূলক।

পবিত্র কোরআন, তাওরাত ও ইঞ্জিলের বিষয়বস্তুর মিলের কারণ হলো, (পবিত্র কোরআনের বক্তব্য অনুসারে) তিনটি কিতাবই আল্লাহতায়ালা মানুষের হেদায়েতের জন্য বিভিন্ন সময়ে নাজিল করেছেন। তিন কিতাবের উৎস এক, লক্ষ্য এক, মূল বিষয়বস্তু এক। পূর্ববর্তী কিতাবগুলো বিকৃত হলেও তাতে রয়ে গেছে মূল সত্যের ছিটেফোটা। ফলে কোরআনের সঙ্গে তার সাদৃশ্য নানা ক্ষেত্রে থাকবে, এটা স্বাভাবিক।

এই সাদৃশ্যের মূলে আছে কোরআনের এই সত্য। তিন গ্রন্থই নাজিল হয়েছে তিন পয়গম্বরের ওপর। তাদের শিক্ষা ও দাওয়াহ একই আলোকধারা থেকে উৎসারিত, এটা ইসলামের বিশ্বাস। একজন মুসলিমকে এ বিশ্বাস পোষণ করতে হয়। একই সঙ্গে বিশ্বাস করতে হয়, সেই প্রমাণিত সত্যকে, যা বানান করে বুঝিয়ে দিয়েছে কত বিপুল ও গভীরভাবে পূর্ববর্তী পয়গাম্বরদের কিতাবগুলো বিকৃত হয়েছে, মানুষের স্বেচ্ছাচারের শিকার হয়েছে। ফলে যেসব জায়গায় কোরআনের সঙ্গে এসব গ্রন্থের আপাত সাদৃশ্য দেখা যায়, সেখানেই তলিয়ে দেখলে লক্ষ্য করা যায়, কত গভীর ও প্রভাবশালী পার্থক্য রয়ে গেছে উভয় ভাষ্যে। সেই তফাৎ যেমন বক্তব্যে, মাত্রায়, বৈশিষ্ট্যে, গুণাগুণে, তেমনই ফলাফলে। শুধুই বিষয়ের সমরুপিতা আছে কোথাও কোথাও। যাকে আপাত মিল বলে আখ্যায়িত করা যায়। এই আপাত মিলের জায়গাগুলো বরং প্রকৃষ্ট অনুসন্ধানে আল কোরআনের অহি হবার দলিল। যখন লক্ষ্য করা যায় একই বিষয়ে অন্য গ্রন্থে বিদ্যমান সমস্যাগুলোতে কী অলৌকিক নৈপুণ্যে এড়িয়ে গেছে বা পরিহার করেছে আল কোরআন। (চলবে)

লেখক : কবি ও আলেম গবেষক

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত