পৃথিবীতে কেউ চিরকাল থাকবে না। প্রতিটি মানুষের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহতায়ালা তার হায়াত ও রিজিক নির্দিষ্ট করে দেন। কার হায়াত কতো দিন, কার মৃত্যু কখন হবে এবং কার রিজিক কী হবে, সেটা নির্ধারিত করে রাখেন। আগেকার মানুষদের তুলনায় বর্তমান সময়ের মানুষদের হায়াত অতি সামান্য। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন ‘আমার উম্মতের বয়স হলো- ৬০ থেকে ৭০ বছরের মাঝামাঝি। খুব কম সংখ্যক লোকই তা অতিক্রম করে’ (তিরমিজি : ৩৫৫০)। দুনিয়ার জীবনে এ সমান্য সময়ে জীবন চলার উপকরণ হিসেবে আল্লাহতায়ালা কাউকে অঢেল ধন-ভাণ্ডার দেন, আবার কাউকে করেন নিঃস্ব ও অসহায়। এটি নিতান্তই তিনি বান্দাদের পরীক্ষা স্বরূপ করে থাকেন। এর মাধ্যমে তিনি পরীক্ষা করবেন, ধনী ব্যক্তিরা অঢেল সম্পদের মালিক হয়েও সেটা কোথায় কীভাবে খরচ করে, আর দরিদ্র ব্যক্তিরা কতটুকু ধৈর্যধারণ করে। আল্লাহর ওপর কতটুকু ভরসা রাখে। সে হিসেবেই তাদের প্রতিদান দেয়া হবে। ধনীদের যে ধন-সম্পদ দেয়া হয়েছে তা থেকে ধনীরা হতদরিদ্র ও দুস্থদের মাঝে খরচ করবে এবং তাদের সাহায্য সহযোগিতা করবে- এটাই হলো ইসলামের স্বাভাবিক নিয়ম। মুসলিমের মানবিকতাপ্রসূত, ধর্ম শাসিত অনুপম সৌন্দর্য। এটাই প্রকৃত মোমেনের গুণ। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘আর তাদের ধন-সম্পদে রয়েছে ভিক্ষুক ও বঞ্চিতদের হক’ (সুরা আয-যারিয়াত : ১৯)। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা মোমেনের গুণ বর্ণনা করে বলেন, ‘যারা সালাত কায়েম করে এবং তাদের দেয়া রিজিক থেকে (আল্লাহর রাস্তায়) খরচ করে, প্রকৃতপক্ষে তারাই খাঁটি মোমিন। তাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রতিপালকের কাছে সুউচ্চ মাকাম, ক্ষমা এবং উত্তম রিজিক।’ (সুরা আল আনফাল : ৪-৫)।
অসহায়কে সাহায্য করা নৈতিক দায়িত্ব : অসহায়কে সাহায্য করা মোমেন বান্দার বৈশিষ্ট্য। যথাসম্ভব গরিব মানুষকে ধনীশ্রেণির মানুষরা সাহায্য করা উচিত। এটা তাদের ওপর নৈতিক দায়। রাস্তা-ঘাটে প্রতিনিয়ত আমরা কতো ধরনের হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষ দেখতে পাই। কারো হাত নেই, পা নেই, কেউ মা-বাবাহারা আবার কেউ বা স্বামী সন্তান হারিয়ে ভিখারী বেশে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে দুমুঠো ভাতের জন্য। নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। অভাবের তাড়নায় দিক্বিদিক ছুটোছুটি করে, মানুষের কাছে হাত পাতে। রোদণ্ডবৃষ্টি উপেক্ষা করে নিজের, মা-বাবার কিংবা সন্তানের মুখে আহার তুলে দিতে ব্যতিব্যস্ত থাকে। সামর্থ্যবানদের উচিত সাধ্য অনুযায়ী এমন লোকদের সাহায্য করা। কেউ সাহায্যের জন্য হাত পাতলে যথাসম্ভব সামান্য কিছু টাকা-পয়সা দিয়ে হলেও তাদের সাহায্য করা। অন্তত ৫ থেকে ১০ টাকা দিয়ে হলেও তাদের সহায্য করা। একেবারে খালি হাতে ফিরিয়ে না দেওয়া। সাহায্য করতে না পারলে সুন্দর আচরণের মাধ্যমে তাদের বিদায় করা। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা তিরস্কার না করা। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর প্রার্থীকে (ভিক্ষুককে) ভর্ৎসনা করবে না’ (সুরা : আজ জোহা : ১০)।
দান আখেরাতের সঞ্চয় : অসহায়-দুস্থদের সহায়তায় রাসুল (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরাম এক অনন্য ভূমিকা রেখে গেছেন। যা মূলত উম্মতের জন্য শিক্ষাস্বরূপ। রাসুলের দরবারে কোনো দরিদ্র লোক এলে যথাসাধ্য তিনি তার প্রয়োজন মিটানোর চেষ্টা করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে দান করতে উদ্বুদ্ধ করতেন। নবী (সা.) সর্বদা নিজে দান করতেন এবং দানশীলতার প্রতি উৎসাহিত করতেন। নবীর উম্মত হিসেবে আমাদের করণীয় হলো, সদা সর্বদা সাধ্যানুপাতে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা ও অসহায়, হতদরিদ্র মানুষদের সহায়তায় সচেষ্ট থাকা। দান খায়রাতে যে সম্পদ খরচ হবে তা প্রকৃতপক্ষে খরচ নয় বরং আখেরাতের জন্য সঞ্চয় হবে। পরকালে নাজাতের উসিলা হবে। আল্লাহতায়ালা সবাইকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তৌফিক দান করুন।
লেখক : শিক্ষার্থী, শাইখ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।