সুসংবাদের অপেক্ষায় আমরা
জিয়া হক
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ফিলিস্তিন পরিস্থিতি নিয়ে যখন ভাবছি, তার ঠিক শেষ ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরাইলের চরম নৃশংস, জঘন্য, অকথ্য, অমানবিক ও ভয়াবহ হামলায় ৭০৪ জন ফিলিস্তিনি শহিদ হয়েছেন। সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ৭ অক্টোবর থেকে চলা ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় পাঁচ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শহিদ হয়েছেন। লাশ এত বেশি, যে কাফনের কাপড়ও যথেষ্ট পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালে থাকা লাশগুলো বোমার আঘাতে থেঁতলে গেছে। বিকৃত হয়ে গেছে। চেনাও যায় না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখভেজানো অসংখ্য নারী, শিশু ও নির্যাতনের অসভ্য ও অকথ্য ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। দখলদার ইসরাইলের যুদ্ধের ধরন, পলিসি ও আগ্রাসন দেখেই বুঝা যায়, তারা যুদ্ধের নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা করছে না। এ সম্পর্কে জানতে ইসরাইলের সাবেক জেনারেল ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে দাইয়ানের গোয়ার্তমিতে নজর দিলেই যথেষ্ট। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘ইসরাইলকে পাগলা কুকুরের মতো আচরণ করতে হবে, খেপালেই বিপদ, এমন একটা ধারণা যেন সবার মনে গেঁথে যায়।’
সম্প্রতি ইসরাইলের পার্লামেন্ট নেসেটের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির সামনে গ্যালান্তের বক্তব্যেও এসব প্রমাণিত। তিনি জানান, গাজায় হামাসের সরকারব্যবস্থা, সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করতে তিন ধাপে যুদ্ধ পরিচালনা করা হবে। হামাসকে নির্মূল করা হবে। যুদ্ধের যে বর্তমান ও প্রথম ধাপ চলছে, সেখানে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ ও তাদের অবকাঠামোকে ধ্বংস করা হবে। পরবর্তী ধাপগুলো কয়েক দিন, কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসে শেষ হয়ে যাবে এমনটা ভাবা যাবে না। তবে যুদ্ধের চূড়ান্ত লক্ষ্য গাজায় একটি নতুন নিরাপত্তা শাসনব্যবস্থা গঠন করে গাজার ওপর ইসরাইলের দায়বদ্ধতা অপসারণ করা।’ ঠিক এই সময়ে মানবতার সবক দেয়া, মুখোশধারী আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানসহ সবাই এই জঘন্য গণহত্যার পক্ষে। যুদ্ধাপরাধের পক্ষে। প্রত্যক্ষভাবে পক্ষে। এমনকি অস্ত্র, অর্থ ও সৈন্য নিয়ে দখলদার ইসরাইলের পাশে দাঁড়িয়েছে। ব্রিটেনের উন্মাদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যান প্রকাশ্যেই বর্ণবাদী কথাবার্তা বলেছেন। তিনি ব্রিটেনের জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাকে বলেছেন, কেউ যদি ফিলিস্তিনি পতাকা ওড়ায় অথবা আরবপন্থি স্লোগান দেয়, তাহলে সেটা অপরাধ বলে গণ্য করা হবে।
পশ্চিমা বিশ্বের বিশ্বাস- মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার নিয়ে কথা বলার অধিকার। কিন্তু হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিনপন্থি দৃষ্টিভঙ্গি লালনকারী গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির ক্ষেত্রে কালো তালিকায় রাখা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছেন। ফ্রান্সে বসবাসকারী ভিনদেশিদের মধ্যে কেউ যদি ‘সেমেটিকবিরোধী কর্মকাণ্ড’ করে, তাকে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন তিনি। একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জার্মানিতেও। তাহলে বুঝাই যাচ্ছে, তারা কী চায়! তারা সারা বিশ্বে মানবতার সবক দিয়ে বেড়ালেও এখানে তারা পাগলা কুকুরের পক্ষে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস অবশ্য বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনের মানুষ ৫৬ বছর ধরে শ্বাসরুদ্ধকর দখলদারিত্বের শিকার হয়েছে। গাজায় মানবিক আইনের যে সুস্পষ্ট লঙ্ঘন আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা নিয়ে আমি গভীর উদ্বিগ্ন। আমি স্পষ্টভাবে বলছি, একটি সংঘাতে কোনো পক্ষই আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’
পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে ফিলিস্তিন ভূমির মর্যাদা প্রমাণিত। পবিত্র এ মর্যাদার অধিকারী গাজা উপত্যকাও। আমরা স্মরণ করতে চাই কোরআনের সুস্পষ্ট উচ্চারণ- ‘হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ তোমাদের জন্য যে পবিত্র ভূমি নির্দিষ্ট করেছেন তাতে তোমরা প্রবেশ করো এবং পশ্চাদসরণ করো না, করলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
(সুরা মায়িদা, আয়াত ২১) রাসুলুল্লাহ (সা.) গাজা বিজয়কারী বাহিনীকে সুসংবাদ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন,‘আমি গাজা ও আস্কালানের বরপুত্রদের সুসংবাদ দিচ্ছি।’ আমরা সেই সুসংবাদের অধীর অপেক্ষায়।
লেখক : কবি ও শিক্ষক