স্বামী-স্ত্রীর যে ভুলে সংসার ভাঙে

শরিফ আহমাদ

প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সুখময় দাম্পত্য জীবনের স্বপ্ন সবাই দেখে। এক বুক আশা নিয়ে সংসার জীবনে প্রবেশ করে। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর কিছু কিছু ভুলের কারণে সুখপাখি হারিয়ে যায়। ভেঙে যায় সাজানো সংসার। এমন কিছু কমন ভুল ও তার সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হলো-

ভরণপোষণ না দেওয়া : ইসলাম স্বামীর ওপর স্ত্রী-সন্তানের ভরণপোষণ আবশ্যক করেছে। পুরুষের কর্তব্য শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী ভরণপোষণ দেওয়া। স্ত্রীর দায়িত্ব স্বামীর সামর্থ্য বিবেচনা করে আবদার রাখা। উচ্চাভিলাসী ও দায়িত্ব পালনের অবহেলাই সংসার ভাঙার প্রধান কারণ। পুরুষদের উদ্দেশ্য রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। কেননা, তাদের তোমরা আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর বিধান মোতাবেক তোমরা তাদের লজ্জাস্থানকে নিজেদের জন্য হালাল করেছ...। তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব তোমাদের ওপর। তোমরা তা স্বাভাবিকভাবে আদায় করবে। (আবু দাউদ : ১৯০৫)।

প্রকৃত ভালোবাসার অভাব : স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটাকে উপেক্ষা বা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এর অভাব বোধে অধিকাংশ সংসার ভেঙে যায়। নিয়মিত পারস্পারিক ভালোবাসা প্রকাশ ও আন্তরিকতা বন্ধনকে স্থায়ী করে তোলে। মিলে অফুরন্ত সওয়াব। হজরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেছেন, স্ত্রীর সঙ্গে মিলন করা সদকা। সাহাবীরা বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কেউ যদি স্ত্রী সঙ্গম করে এতেও কি সে সওয়াব পাবে? তিনি বললেন, তোমরা কি মনে কর যদি সে কামাচার করে হারাম পথে তাতে কি তার পাপ হবে না? অনুরূপভাবে যদি সে কামাচার করে হালাল পথে তবে সে সওয়াব পাবে। (মুসলিম : ২২০১)।

বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক থাকা : স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরস্পরের জন্য পরিপূরক, ভালোবাসা প্রকাশের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। শরিয়ত নির্দেশিত এই সম্পর্কের বাইরে গিয়ে কারো সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করাই পরকীয়া। আর এটা ইসলামে জঘন্য একটি অপরাধ। এই অপরাধে সামাজিক শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়। ভেঙে যায় বৈবাহিক বন্ধন। পরকীয়া ব্যভিচারের প্রথম সিঁড়ি। আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ। (সুরা বনী ইসরাইল : ৩২)।

পারস্পারিক বোঝাপড়ার অভাব : বিয়ের আগে স্বামী-স্ত্রী দুজন ভিন্ন পরিবেশ ও ভিন্ন চিন্তা-চেতনা নিয়ে বেড়ে উঠেছে। এজন্য বিয়ের পর প্রাথমিক পর্যায়ে মতের মিল-অমিল থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে পারস্পারিক বোঝাপড়া ও পরামর্শের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনের সুখ রচনা করা যায়। খামখেয়ালি ও একগুঁয়েমি চিন্তাধারার প্রথা অনেক সংসারের ইতি ঘটায়। স্বামী-স্ত্রীর এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। পবিত্র কোরআনে মোমিনদের গুণাবলির বর্ণনায় এসেছে, যারা তাদের পালনকর্তা আদেশ মান্য করে, নামাজ কায়েম করে, পারস্পরিক পরামর্শক্রমে কাজ করে। (সুরা শুরা : ৩৮)।

পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও নির্যাতন : পারিবারিক দ্বন্দ্ব সমাজের একটি কমন বিষয়। প্রত্যেকটি পরিবারের কমবেশি হয়ে থাকে। এটাকে কেন্দ্র করে স্ত্রীর ওপর শারীরিক নির্যাতন করা অন্যায়। এই অন্যায় প্রবণতার স্রোতে সংসার ভেঙে যায়। মামলা-মোকদ্দমা হয়। রাসুল (সা.)-এর একাধিক স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও কাউকে প্রহার করেননি। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে যামআ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, তোমরা কেউ নিজ স্ত্রীদের গোলামের মতো প্রহার করো না। কেননা, দিনের শেষে তার সঙ্গে তো মিলিত হবে। (বোখারি : ৪৮২৯)।

অনর্থক সন্দেহ পোষণ করা : সামাজিক অবক্ষয় ও পারিপার্শ্বিক প্রেক্ষাপটে কারণে অনেক ক্ষেত্রে দাম্পত্য জীবনে সন্দেহের বীজ দানা বাঁধে। জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। ভেঙে পড়ে সোনালি সংসার। নিছক সন্দেহ ও অন্যের কথায় প্রভাবিত হয়ে বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে ইসলাম নিষেধ করেছে। খোলামেলা আলোচনা ও সুধারণা রাখার নির্দেশ দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, হে মোমিনগণ! তোমরা বেশিরভাগ অনুমান থেকে দূরে থাকো। কেননা, অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে গুনাহ। তোমরা কারো গোপন ত্রুটির অনুসন্ধানে পড়বে না এবং তোমাদের একে অন্যের গিবত করবে না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? এটাকে তো তোমরা ঘৃণা করে থাকো। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। (সুরা হুজুরাত : ১২)।

লেখক : আলেম ও কবি