ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফিলিস্তিনের জীবনী (৪)

প্রতিশ্রুতি ভূমি : ন্যায্যতা-অন্যায্যতা

মুসা আল হাফিজ
প্রতিশ্রুতি ভূমি : ন্যায্যতা-অন্যায্যতা

কাব্বালা আন্দোলন ইহুদিদের বিলুপ্তপ্রায় বিশ্বাসের পুনরুজ্জীবন ঘটাল। ইহুদিরা হলেন Chosen People বা ঈশ্বরের বাছাইকৃত জাতি। আব্রাহামের সঙ্গে খোদাতায়ালা তার বংশধরদের জন্য যে ভূমির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ইহুদিরা সেই ভূমির ন্যায্য মালিক। বাইবেলের বিভিন্ন জায়গায় আছে সেই প্রতিশ্রুতি ভূমির কথা। স্বয়ং বাইবেল জানাচ্ছে, প্রতিশ্রুতি ভূমি দানের শর্ত হলো ইবরাহিমের (আ.) একত্বের আদর্শ মানা, ন্যায়নিষ্ঠ, কর্মপন্থা ও জীবনাচারে বিশুদ্ধতা। ‘আমি আব্রাহামের সঙ্গে এক বিশেষ চুক্তি করেছি। প্রভুর ইচ্ছা অনুসারে জীবনযাপনের জন্য যাতে আব্রাহামের সন্তানসন্ততি ও উত্তরপুরুষগণ আব্রাহামের আজ্ঞা পালন করে তাই এই ব্যবস্থা করেছি। এটা করেছি যাতে তারা ন্যায়পরায়ণ ও সৎ জীবনযাপন করে। তাহলে আমি প্রভু, প্রতিশ্রুত জিনিসগুলো দিতে পারব। ইহুদিরা দাসত্ব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি ভূমিকে স্বর্গ হিসাবে কল্পনা করত।’

বাস্তবে সেখানে পৌঁছানোর সম্ভাবনা দেখছিল না তারা। ফলে সেখানে সাধারণত মৃত্যুর মাধ্যমে পৌঁছানোর বিশ্বাস ছিল। কিন্তু বাস্তবে কীভাবে তাকে প্রতিফলিত করা যায়, সেই চেষ্টাও শুরু হলো। তার ফলাফল হিসেবে জন্ম নিলো জায়নবাদ। কিন্তু আসলেই কি ইহুদিরা এই প্রতিশ্রুত ভূমির হকদার? এটা কি বর্ণবাদী প্রতিশ্রুতি? এই প্রতিশ্রুতি কি নিছক বংশ বা রক্তের ভিত্তিতে? না, তা নয়। ভূমির অধিকার অনেকগুলো শর্তের উপর নির্ভরশীল। এই শর্ত বাইবেলে ঘোষিত হয়েছে বহুবার। ইসরাইল জাতিকে অবশ্যই ঈশ্বরের একত্ব ও তার আদেশ-নিষেধ মানতে হবে, বিধিব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবে। বিদ্রোহ ও অনাচার থেকে বিরত থাকতে হবে। তা না করলে বঞ্চনা হবে তাদের ভাগ্যলিপি, তাদের জন্য কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। তারা শুধু ইসরাইলি বংশের বলেই ঈশ্বরের বিশেষ লোক হতে পারবে না। ঈশ্বরের বিশেষ লোক হতে হলে কী করতে হবে, জানাচ্ছে বাইবেল। ‘এখন আমি তোমাদের বলছি, আমার হুকুমগুলো মেনে চলো। আমার সঙ্গে করা প্রতিশ্রুতি পালন করো। তাহলেই শুধু তোমরা হবে আমার বিশেষ লোক। সারা জগত তো আমারই। আর তোমাদের আমি করেছি নিজের আপনজন।’

এই শর্তেরভিত্তিতে যারা আপন, তাদের ঈশ্বর শোনাচ্ছেন ভূমির প্রতিশ্রুতি। মুসেজকে লক্ষ্য করে প্রভুর বার্তা- তোমরা পুণ্য মানুষদের হবে বিশেষ এক রাষ্ট্র। আমি যা বললাম, তা তুমি ইসরাইলিদের অবশ্যই জানাবে।

কিন্তু শেষ অবধি ইসরাইলিরা সাধারণভাবে সদাপ্রভুকে ত্যাগ করল। মূর্তিপূজায় নিমজ্জিত হলো। সদা প্রভুর আনুগত্য পূর্বপুরুষের স্মৃতির বিষয়ে পরিণত হলো। পৌত্তলিকতার জন্য দেবতাগুলো স্থির করে নিলো। তোরাহ জানাচ্ছে- প্রভু ইসরাইলবাসীদের মিশর দেশ থেকে বের করে এনেছিলেন। এদের পূর্বপুরুষরা প্রভুর সেবা করত। কিন্তু এখন তারা প্রভুকে ত্যাগ করল। তাদের চারিধারে বসবাসকারী লোকরা মূর্তির পূজা করতে শুরু করল। এই কারণে প্রভু ক্রুদ্ধ হলেন।

ইসরাইলের লোকরা প্রভুকে ত্যাগ করে বাল ও অষ্টারোতকে পূজা করতে লাগল। শুধু তাই নয়। তাদের পাপ সকল মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তোরাহের ভাষ্য- ‘তারা ব্যভিচারমূলক পাপ করেছে। তারা দণ্ডযোগ্য অপরাধে অপরাধী। তারা একজন বেশ্যার মতো আচরণ করেছে। তাদের নোংরা মূর্তিগুলোর সঙ্গে থাকবার জন্য আমাকে ত্যাগ করেছে। তাদের কাছে আমার যে সন্তানরা ছিল, তাদের তারা জোর করে আগুনের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে বাধ্য করেছে; যাতে তারা তাদের নোংরা মূর্তিগুলোকে খাদ্য জোগাতে পারে। তারা আমার বিশ্রামের বিশেষ দিন ও পবিত্র স্থানকে কোনো গুরুত্ব দেয়নি। তারা তাদের মূর্তিগুলোর জন্য তাদের সন্তানদের হত্যা করেছে এবং সেই একইদিনে আমার সে জায়গাটাকে অশুচি করেছে। দেখ, তারা এসবই আমার মন্দিরের মধ্যে করেছে!

এসবের পরিণতি হিসেবে সদাপ্রভু তাদের জন্য যা স্থির করলেন, তা হলো : (ক) নির্বাসন, (খ) শত্রুদের দ্বারা আক্রান্ত হতে থাকা, (গ) সব অধিকার কেড়ে নেওয়া, (ঘ) ইসরাইলিদের পরাজিত জাতিতে পরিণত করা, (ঙ) চরম দুর্দশা ও ভয়াবহ লাঞ্চনা, (চ) অব্যাহত পরাজয়, (ছ) সদাপ্রভুর ক্রোধ।

তোরাহের বয়ান- প্রভু ইসরাইলবাসীদের উপর ক্রুদ্ধ ছিলেন তাই তিনি ইসরাইলবাসীদের শত্রুদের দ্বারা আক্রান্ত হতে দিলেন। শত্রুরা ইসরাইলবাসীদের আক্রমণ করল এবং তাদের অধিকারের সব কিছু নিয়ে নিল। প্রভু তাদের ইসরাইলবাসীদের পরাস্ত করতে দিলেন যারা নিজেদের রক্ষা করতে অসমর্থ ছিল। যখনই ইসরাইলিয়রা যুদ্ধ করত, তারা হেরে যেত। কারণ প্রভু তাদের দিকে ছিলেন না। তিনি তো তাদের নিষেধ করে বলেছিলেন যে তাদের ঘিরে যে সব মানুষ রযেছে তাদের দেবতাদের পূজা করলে তারা হেরে যাবে। এর ফলে ইসরাইলিয়দের চরম দুর্দশা হলো।

সদাপ্রভুর ক্রোধ, ধিক্কার ও অভিশাপ তাদের প্রতি তো বটেই, তাদের বাসস্থানের প্রতিও। সদাপ্রভু বলেন, ‘জেরুজালেম! তুমি আমায় ভুলে গেছ। তুমি আমায় দূর করে একাকী রেখে গেছ। আমাকে পরিত্যাগ করার জন্য ও বেশ্যার মতো জীবনযাপন করার জন্য তোমায় তাই কষ্ট ভোগ করতে হবে। তোমার দেখা দুষ্টু স্বপ্নের জন্যও তোমায় কষ্টভোগ করতে হবে।’

যীশু-খ্রিষ্টের মুখ দিয়ে অবশেষে উচ্চারিত হলো- ‘জেরুজালেম, হায় জেরুজালেম! তুমি পয়গাম্বরদের হত্যা করেছ; আর ঈশ্বর তোমার কাছে যাদের পাঠিয়েছেন তুমি তাদের পাথর মেরেছ! মুরগি যেমন তার বাচ্চাদের নিজের ডানার নীচে জড়ো করে, তেমনি আমি কতবার তোমার লোকদের আমার কাছে জড়ো করতে চেয়েছি। কিন্তু তুমি রাজি হওনি।’

তোরাহের এই যে ভাষ্য, তা দেখায় প্রতিশ্রুত ভূমির অধিকার কীভাবে হারিয়েছে ইহুদিরা। যে প্রভু তাদেরকে ভূমির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনিই কীভাবে তা থেকে উচ্ছেদ করেছেন তাদের।

মানুষহীন ভূমি ও ভূমিহীন মানুষ : জায়নবাদ দাবি করে ফিলিস্তিন ছিল মানুষহীন ভূমি, আর ইহুদিরা ছিল ভূমিহীন মানুষ। ফলে তাদের জন্য এই ভূমিটাই ছিল ন্যায্য। কিন্তু ফিলিস্তিন ইতিহাসের কোনো কালেই মানুষহীন ভূমি ছিল না। ইসলাম ও ইহুদি-খ্রিষ্টান জগতের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ শহর যেখানে, সেই ভূমি কীভাবে মানুষহীন হবে?

আল কোরআনে ফিলিস্তিনি ভূমিকে বলা হয়েছে আরদুল মুবারাকাহ। বরকতময় ভূমি। সেই ভূমিতে কত নবী-রাসুল, কত সাহাবি-তাবেয়ি আর কত মহামনীষী শুয়ে আছেন। ফিলিস্তিনের প্রায় প্রতিটি জনপদের সঙ্গে মুসলিম সভ্যতার গভীর আবেগ ও ঐতিহ্যপূর্ণ বিষয় জড়িত। খ্রিষ্টান বা ইহুদি ঐতিহ্যেও তা রয়েছে। উসমানি আমলে তা মানুষহীন ভূমি হয়ে উঠার কোনো কারণ ঘটেনি। বরং জনসংখ্যা, শহর-নগর, ভূকৌশলগত গুরুত্ব, ইতিহাস-ঐতিহ্য ইত্যাদি কারণে উসমানিসহ গোটা মুসলিম সাম্রাজ্যে ফিলিস্তিন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও উন্নত অঞ্চল। এ অঞ্চলে বছরজুড়ে বৃষ্টি হয়। সারা বছর তাপমাত্রা থাকে স্বাভাবিক। শীত কিংবা গ্রীষ্ম সবসময়ই তাপমাত্রা থাকে ১৯-২৭ ডিগ্রির মধ্যে। ফিলিস্তিন হলো এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের মিলনস্থল। বায়তুল মাকদিস তো বটেই, এর নিকটবর্তী ভূমিও মুসলিমদের অত্যন্ত প্রিয় ও মূল্যবান।

ফিলিস্তিনের গুরুত্বের কেন্দ্রে ছিল মুসলমানদের প্রথম কিবলা, মসজিদে আকসা। নবীজির ইসরার প্রান্ত, আল্লাহর উদ্দেশ্যে মেরাজে উর্ধারোহণের সূচনাস্থল, মহান ফজিলতময় মসজিদ, অগণিত পূণ্য স্মৃতির ভূমি এই ফিলিস্তিন। এর সাথে জড়িত কেয়ামতপূর্ব পৃথিবীর বহুবিষয়, এমনকি মৃত্যুপরবর্তী জীবনের বিশ্বাসের সঙ্গেও রয়েছে এর প্রাসঙ্গিকতা। সারা দুনিয়া থেকে মুসলিমরা আকসায় সফর করতেন। এর রয়েছে বিশেষ মহিমা।

এ প্রসঙ্গে রচিত হয় বহু গ্রন্থ। হাফিজ ইবনে আসাকিরের আল জামিউল মুসতাকসা ফি ফাজায়িলি মাসজিদিল আকসা, শায়খ বুরহান উদ্দিন জুরারীর বায়িসুন নুফুস ইলা জিয়ারাতিল কুদসিল মাহরুস, শিহাব উদ্দিন আল মাকদিসির মুসিরুল গারাম ইলা জিয়ারাতিল কুদসি ওয়াশ শাম, শামসুদ্দিন সুয়ুতি আল-মাকদিসির ইতহাফুল আখসা বি ফাজায়িলি মাসজিদিল আকসাসহ বহু গ্রন্থ দেখায় আরদে মুবারাকাহ (ফিলিস্তিন) ও বায়তুল মাকদিসের মহিমা। এর প্রতি মুসলিমদের ভক্তি, আবেগ, এর সমৃদ্ধ চিত্র। ইয়াকুত হামাবি, ইবনে বতুতা কিংবা নাসির খসরুর সফরনামা সমৃদ্ধ ফিলিস্তিনকেই প্রকাশ করে। উসমানি আমলে সিরিয়ার বিখ্যাত আইনবিদ ও বিদ্যাপুরুষ ছিলেন শায়খ আব্দুল গনি নাবুলুসি। আল-হাদরাতুল আনিসা ফির রিহলাতিল কুদসিয়া রচিত হয় ১০১১ হিজরি মোতাবেক ১৬০২ খ্রিষ্টাব্দে। এতে ফিলিস্তিনের সমৃদ্ধ নগর-শহর, বিদ্যাচর্চা, চিন্তা ও শিল্পচর্চা, আধ্যাত্মিক সাধনা, মানুষের জীবনের প্রাণপূর্ণ চিত্র, মুখর ও সমৃদ্ধ জনপদগুলোর চিত্রপট সুস্পষ্ট। বস্তুত সমকালীন উসমানি নথিপত্র, ভ্রমণ কাহিনী, প্রত্যক্ষ বিবরণী এবং ঐতিহ্যগত ভাষ্যগুলো ফিলিস্তিনকে সমৃদ্ধ, উন্নত জীবনমানে বিকশিত একটি অঞ্চল হিসেবে উপস্থাপন করে।

মোহাম্মদ কুরদ আলির খুতাতুশ শামের ষষ্ঠ খণ্ড তখনকার চিত্ররূপ তুলে ধরেছে, ডক্টর আবদুল ফাত্তাহ ওমর উয়াইসির মাকানাতু ওয়া তারিখু বাইতুল মাকদিসি ফিল ইসলাম গ্রন্থও এ বিষয়ে বিস্তারিত দলিল-প্রমাণ হাজির করে। যা মানুষহীন ভূমিতত্ত্বকে ভিত্তিহীন প্রমাণ করে। এই ভূমি সম্পর্কে আল্লাহর ঘোষণা, ‘আর আমি তাকে ও লুতকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলাম সেই ভূখণ্ডে, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি বিশ্ববাসীর জন্য।’ মুসলমানরা তাই কল্যাণের এই ভূমিতে বসবাস ও তাকে গুরুত্বদানের প্রশ্নে অবহেলা করেননি কোনো কালেই।

ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইহুদিদের ঐতিহাসিক দাবি : জায়নবাদের আরেকটা তত্ত্ব হলো, ফিলিস্তিনের ভূমিতে ইহুদিদের ঐতিহাসিক দাবি রয়েছে। কিন্তু এ দাবির কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই।

ফিলিস্তিনের যে ভূমিপুত্ররা ইহুদিদের জন্মের হাজার বছর আগ থেকে এই ভূমি আবাদ করছেন, সেই কানানিদের বংশধররাই এখনকার ফিলিস্তিনি। তাদের কেউ কেউ খ্রিষ্টান হয়েছেন। বাকিরা হয়েছেন মুসলমান। ইহুদিরা এই ভূমিতে এসেছিল দখলকারী হিসেবে। মাত্র ৪০০ বছর টিকেছিল এখানে। তারপর উচ্ছেদ হয়েছে দুই হাজার বছর আগে। ইহুদিরা উচ্ছেদ হলেও থেকে গেছে ভূমিপুত্র ফিলিস্তিনিরা। এ ছাড়া ইহুদিরা দখল করেছিল ফিলিস্তিনের বিশেষ কিছু এলাকা। বাকি ফিলিস্তিনে তাদের আমলেও বাস করেছে কানানি জেবুসি আরবরা। তাদেরকে বিতাড়িত করা সম্ভব হয়নি। তাদের বসবাস এই ভূমিতে নিরবচ্ছিন্ন। সেখানে বহু জাতি এসেছে, দখল জারি করেছে, তারপর বিতাড়িত হয়েছে বাতাসে উড়ে যাওয়া ঝরা পাতার মতো।

বিতাড়িত হওয়ার পরে প্রায় উনিশ শত বছর ধরে ফিলিস্তিনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল না ইউরোপীয় ইহুদিদের। ফিলিস্তিনে বিদ্যমান ছিল মুষ্টিমেয় কিছু ইহুদি। তারা তাদের ভূমির ন্যায্য বাসিন্দা সেখানকার মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের মতোই। তারা হলেন মিজরাহি ইহুদি। আর ইউরোপ থেকে আসছিলো আশকেনাজি ইহুদিরা। এরা ইহুদিদের মধ্যে নিজেদের সবচেয়ে উচ্চবর্ণের বলে দাবি করে। মানবজাতির অন্য যেকোনো নৃগোষ্ঠীর তুলনায় তারা নিজেদের মস্তিষ্কের শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করে। এমনতর বর্ণবাদী চর্চা তাদের মধ্যে নানামুখী। কিন্তু সেটা এখানে মুখ্য নয়। মোদ্দাপ্রশ্ন হলো, ইউরোপ-আমেরিকা, রাশিয়া, ল্যাতিন আমেরিকা ইত্যাদি অঞ্চলের ইহুদিরা কীসের ভিত্তিতে ফিলিস্তিনে নিজেদের অধিকার দাবি করতে পারে? একদা কিছু ইহুদি সেই ভূমি দখল করে শাসন করেছিল, সেই ভিত্তিতে ফিলিস্তিনের ভূমি যদি প্রায় দুই হাজার বছর পরে ইহুদিদের হয়, তাহলে স্পেন, পর্তুগাল ও সিসিলি কেন আরবদের হবে না? গ্রিস, হাঙ্গেরি ও সার্বিয়া কেন তুরস্কের হবে না? বস্তুত পশ্চিমা ইহুদিদের সিংহভাগই না বংশে বনি ইসরাইল, না রক্তসম্পর্কে। তারা বরং আর্য জনগোষ্ঠীজাত। উত্তর ককেশাসে বসবাস করত এদের পূর্বপুরুষ। একদা তারা ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তারা যদি নিজেদের ফেলে আসা প্রাচীন ভূমিতে অধিকার দাবি করেন, সে দাবি নিয়ে ককেশাসে হাজির হোন, রাশিয়াকে ভূমি ছেড়ে দিতে বলুন। কিংবা যে ইউরোপে তারা ছিলেন হাজার বছর, যে ইউরোপ তাদেরকে হত্যা ও নির্বাসন দ্বারা পিষ্ট করেছে যুগ যুগ ধরে, সেই ইউরোপে তারা ভূমি দাবি করুন। বস্তুত ইউরোপে, আর্জেন্টিনায়, এমনকি আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে ইহুদিদের রাষ্ট্র গড়ে দেবার প্রকল্প ছিল। কিন্তু পশ্চিমারা কোনোভাবেই চায়নি ইহুদি সমস্যা তাদের ভূমিতে থাকুক। আর জায়নবাদ প্রবলভাবে চাইছিলো ফিলিস্তিন! J.N Darloy- প্রতিষ্ঠিত Plymouth Brethren আন্দোলন ব্রিটেনের মেধাবী তরুণদের ইহুদিরাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষায় জাগিয়ে তোলে। ১৮৪০ এর দশকে লর্ড সভার প্রভাবশালী সদস্য সাফটেসবারী এবং পালামারষ্টন ফিলিস্তিনে ইহুদি কলোনি তৈরির প্রকল্প পেশ করেন। কারণ এটাই ইহুদিসমস্যার প্রকৃত সমাধান। (চলবে)

লেখক: কবি ও গবেষক

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত