ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কোরআনের হাফেজদের মর্যাদা

শাহাদাত হোসাইন
কোরআনের হাফেজদের মর্যাদা

আল কোরআন মহামহিম রবের মহামান্বিত গ্রন্থ। সম্মানিত এই গ্রন্থের সংস্পর্শ তার ধারক-বাহকদেরও সম্মানিত করে। হাফেজরা নিজেদের সিনায় কোরআন সংরক্ষনের মাধ্যমে আল্লাহর কিতাবের রক্ষণাবেক্ষণকারী হয়ে যায়। এদের মাধ্যমেই আল্লাহ পৃথিবীতে নিজের কোরআন সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি কার্যকর করছেন- আমি স্বয়ং এই কোরআন অবতীর্ণ করেছি আর আমি নিজেই এর সংরক্ষক (সুরা হিজর : ৯)। তাই তাদের গুরুত্ব ও মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক বেশি। আসুন, কোরআন হাদিসের আলোকে হাফেজদের মর্যাদা সম্পর্কে অবগত হই।

সম্মানের মানদ- কোরআন : পৃথিবীতে সম্মানিত ও অসম্মানিত হওয়ার একমাত্র মানদ- কোরআন। কোরআনের কারণে ব্যক্তি সম্মানিত ও অসম্মানিত হয়। নবীজি বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ এই কেতাব-কোরআনের মাধ্যমে অনেক সম্প্রদায়কে উঁচু ও সম্মানিত করেন। আবার এর কারণে অনেককে নিচু ও অসম্মানিত করেন (মুসলিম : ৮১৭)। যারা কোরআন গ্রহণ করে তারা মর্যাদাবান হন আর যারা ছুঁড়ে ফেলেন তারা ধিকৃত হন।

আল্লাহকে সম্মান করার নামান্তর : কোরআনের হাফেজদের সম্মান করা প্রকারন্তরে আল্লাহকে সম্মান ও ইজ্জত করার নামান্তর। প্রিয়নবী বলেছেন, তিন শ্রেণির লোককে সম্মান করা আল্লাহর মাহত্ব ও সম্মানের অন্তর্ভুক্ত। ন্যায়পরায়ণ শাসকের সম্মান করা। বৃদ্ধ মুসলমানের সম্মান করা এবং কোরআনের বাহকের সম্মান করা (বায়হাকি : ১০৯৮৫)। তাই, হাফেজদের সম্মান প্রকারন্তরে আল্লাহকে সম্মান করা।

আল্লাহর পরিবারভুক্ত : কোরআনের বাহক এবং হাফেজদের মর্যাদা ও সম্মান কত বেশি তা অনুধাবন করা যায় এই হাদিস দ্বারা। সাহাবি আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। নবীজি বলেন, আল্লাহর সৃষ্টিজীব থেকে কিছু সৃষ্টিজীব তার পরিবারভুক্ত। সাহাবিরা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তারা কারা? নবীজি বললেন, কোরআন ওয়ালারা আল্লাহর পরিবারভুক্ত এবং আল্লাহর বিশেষ ব্যক্তি (বাযযার ১৩ : ৫২০)। ‘আল্লাহর বিশেষ ব্যক্তি’ শুনতেই হৃদয়ে প্রশান্তি আসে।

পৃথিবীর সর্বোত্তম ব্যক্তি : আল কোরআন এমন একটি গ্রন্থ, যে ব্যক্তিই তার সান্নিধ্যে আসবে সেই সম্মানিত ও শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হবে। ওসমান (রা.) নবীজি হতে বর্ণনা করেন, তোমাদের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ সেই ব্যক্তি যে, কোরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয় (আবু দাউদ : ১৪৫২)। অন্যত্র নবীজি বলেন, তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সে, যে কোরআন শেখে এবং শেখায় (বোখারি : ৫০২৮)। তাই হাফেজরা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি।

কোরআনের সুপারিশ : কেয়ামতের কঠিন বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে যারা আল্লাহর কাছে সুপারিশ করার অধিকার পাবেন, তাদের অন্যতম কোরআন। কোরআন তার ধারকদের জন্য সুপারিশ করবে। হাদিসে এসেছে, প্রিয়নবী বলেন, রোজা এবং কোরআন কেয়ামতের দিন সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার, কামাচার থেকে বিরত রেখেছিলাম। অতএব, তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। আর কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছিলাম। অতএব, তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। নবীজি বলেন, অতঃপর তাদের সুপারিশ কবুল করা হবে (মুসনাদে আহমাদ : ৬৬২৬)। কোরআন মুখস্থ করার জন্য হাফেজেরা হাজারো রাত্রি বিনিদ্র কাটায়। এ পুরস্কার লাভ করা হাফেজদের জন্য খুবই সহজ।

পিতামাতার মাথায় মুকুট : কোরআন শুধু তার ধারককেই সম্মানিত করবে না বরং কোরআনের কারণে কোরআনের হাফেজের পিতামাতাকেও সম্মানিত করা হবে। নবীজি বলেছেন, যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করবে এবং সে অনুযায়ী আমল করবে, কেয়ামতে তার পিতামাতাকে এমন এক-মুকুট পরানো হবে, যার আলো সূর্যের আলোর থেকেও উজ্জ্বল হবে। (আবু দাউদ : ১৪৫৩)। কোরআনের হাফেজদের মর্যাদা আমাদের ধারণার অতীত।

মর্যাদা সম্পন্ন ফেরেস্তার সঙ্গী : ফেরেস্তারা আল্লাহর বিশেষ সৃষ্টি। যারা কখনো আল্লাহর অবাধ্যতা করেন না। গোনাহে লিপ্ত হয় না। তাই তারা আল্লাহর কাছে সম্মানিত-মর্যাদা সম্পন্ন এক-জাতি। এই ফেরেস্তাদের মর্যাদা সম্পন্ন সঙ্গী হবেন সেই সব লোক, যারা কোরআন পাঠে দক্ষ। আর এটা স্বীকৃত বিষয় যে, হাফেজরা কোরআন পাঠে দক্ষ হয়ে থাকেন। নবীজি বলেছেন, কোরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ফেরেস্তাদের সঙ্গী হবে (মুসলিম : ৭৯৮)।

হাফেজের সম্মানের মুকুট : নবীজি বলেছেন, কোরআন কেয়ামতের দিন আল্লাহকে বলবে, হে আল্লাহ! একে (হাফেজকে) অলংকার পরিয়ে দিন। তখন তাকে সম্মানের মুকুট পরানো হবে। কোরআন আবার বলবে, হে আল্লাহ! তার প্রতি আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যান। তাই, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন। অতঃপর তাকে বলা হবে একেক আয়াত পড় এবং ওপরে উঠতে থাক। প্রতি আয়াতের বিনিময় একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে (তিরমিজি : ২৯১৫)। অন্য হাদিসে এসেছে, কোরআনের বাহককে বলা হবে, পাঠ করতে থাক এবং ওপরে আরোহণ করতে থাক। কেননা, যে আয়াতে তোমার পাঠ সমাপ্ত হবে, সেটাই তোমার স্থান (জান্নাতে মর্যাদা লাভের স্তর) (তিরমিজি : ২৯১৪)।

হাফেজদের জন্য বিশেষ সম্মান : উহুদের যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর সত্তরজন লোক শাহাদাত বরণ করেন। যুদ্ধ শেষে তাদের দাফন করতে গেলে সাহাবিরা নবীজিকে জিজ্ঞাসা করেন, একটি কবরে কয়েকজনকে কবরস্থ করা হবে? তখন নবীজি বলেন, একটি কবরে দুজন অথবা তিনজনকে কবরস্থ করো এবং তাদের মধ্যে যাদের কোরআন বেশি জানা আছে, তাদের আগে কবরে রাখো (আবু দাউদ : ৩২১৫)।

লেখক : শিক্ষা পরিচালক, ভরসা মাদ্রাসা, রংপুর।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত