হারিয়ে যাচ্ছে ওয়াজ-মাহফিলের আবেদন
মুফতি দিদার শফিক
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ওয়াজের মৌসুম : শীতকালে পিঠাপুলির উৎসব যেমন বাংলাদেশের সংস্কৃতির অংশ ঠিক তেমনি শীতকালে দেশব্যাপী ওয়াজ মাহফিলের আয়োজনও বাঙালি মুসলিমের ঐতিহ্যগত সভ্যতার অংশ। এদেশে কমবেশি সারা বছরই ওয়াজ-মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। তবে সাধারণত শীতকালকেই ওয়াজ-মাহফিলের মৌসুম বলা হয়। ঋতু হিসেবে শীতকালের সময় দুই মাস হলেও ওয়াজ-মাহফিলের শীতকালীন ঋতু প্রায় পাঁচ মাস। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এ দীর্ঘ সময় ধরে দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই ওয়াজ-মাহফিল ব্যাপকহারে অনুষ্ঠিত হয়।
ওয়াজ-মাহফিলের উদ্দেশ্য : ওয়াজ-মাহফিল মূলত একটি ধর্মীয় মজলিশ। এখানে আমলদার বিজ্ঞপ্রাজ্ঞ বুজুর্গ আলেমগণ সাধারণ মানুষকে ধর্মের উপদেশ বাণী শুনিয়ে থাকেন। সর্বসাধারণের জন্য ধর্মের বিষয়কে তারা সহজ করে উপস্থাপন করেন। নীতি-নৈতিকতা অর্জন, সভ্যতা ও শিষ্টাচার শিখন এবং আত্মিক ও চারিত্রিক উৎকর্ষ সাধনের পথ ও পদ্ধতি দীলি দরদ ও আন্তরিকতার সঙ্গে বাতলে দেন। মাহফিলের মূল উদ্দেশ্য সর্বস্তরের জনগণকে ধর্মের মৌলিক বিধিবিধান, সমকালীন জীবন জিজ্ঞাসার সমাধান সম্পর্কে অবগত করা এবং সাধারণ মানুষ যেন নববি আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ধর্ম পালনের প্রতি উৎসাহিত হয় সে পরিবেশ ও আবেদন তৈরি করা। ঈমান ও আমলের প্রতি আহ্বান করা। অতীত জীবনের ভুল শুধরে নতুনভাবে পুতঃপবিত্রভাবে জীবনযাপনে উদ্যোগী ও অনুপ্রাণিত হওয়ার প্রয়োজনীয় ইলমি রসদ ও উপকরণ সরবরাহ করা। এজন্য অন্তত তিন শ্রেণির মানুষের আন্তরিকতা ও নিয়তের বিশুদ্ধতা প্রয়োজন। যার উপস্থিতিতে ওয়াজ-মাহফিল সফল ও সার্থক বলে পরিগণিত হয়।
আয়োজক বা উদ্যোক্তাদের নিয়তের বিশুদ্ধতা : আয়োজক বা উদ্যোক্তাদের নিয়তের বিশুদ্ধতা ছাড়া ওয়াজ-মাহফিল দ্বারা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হয় না। তাই কেন মাহফিলের আয়োজন করা হচ্ছে- এ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আগে স্থির করতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে। ধর্মীয় বিধিবিধান ও অনুশাসনের মর্মকথা মানুষের কাছে আমলের উদ্দেশ্যে পৌঁছে দেওয়া এবং এর মাধ্যমে ব্যক্তিক, সামাজিক, ও রাষ্ট্রিক জীবনে শান্তি ও শুচিশুদ্ধতার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার নিয়ত থাকা আবশ্যক। সর্বোপরি অঞ্চলভিত্তিক একটি দীনি পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করা ও মানবিক জীবনবোধ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখার মনোভাব থাকা, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা একমাত্র উদ্দেশ্য হবে।
ওয়ায়েজ বা বক্তাদের নিয়তের বিশুদ্ধতা : ওয়াজ-মাহফিলের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য লাভের জন্য ওয়ায়েজ বা বক্তাদের নিয়তের বিশুদ্ধতা জরুরি। ওয়ায়েজ মূলত একজন ধর্মপ্রচারক। ধর্মপ্রচারককে অবশ্যই ধর্মপ্রচারের মূল্য লক্ষ্য ও আবেদন রক্ষার বিষয়ে সতেচন থাকতে হবে। একজন দায়ী ইলাল্লাহ বা ধর্মপ্রচারকের জন্য নবীদের উত্তরাধিকারী হিসেবে কাঁধে ন্যস্ত দায়িত্ব পালনের কথা সদা স্মরণ রাখতে হবে। অহেতুক গালগল্প, গান-সংগীত বা অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে সুর মূর্ছনায় শ্রোতাকে মুগ্ধ করার অসুস্থ মানসিকতা বর্জন করতে হবে। ওয়াজ-নসিহতকে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম বানানো থেকে বিরত থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, ওয়াজ-নসিহত করা যারতার কাজ নয়। ওয়াজ-নসিহত ধর্ম চর্চা ও প্রচারের একটি শক্তিশালী সামাজিক মাধ্যম। হাদিসের বাণী ‘বাল্লিগূ আন্নী ওলাও আ-ইয়াহ’ অর্থাৎ আমার (নবী মুহাম্মদ) পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও অন্যের কাছে পৌঁছে দাও। এ হাদিসের ওপর আমলের চেষ্টা করতে হবে। সর্বোপরি বক্তাকে তার ওয়াজের মাধ্যমে প্রথমত নিজের তারপর মাহফিলে সমবেত জনতার আমলি ও আখলাকি সংশোধনের নিয়ত থাকা আবশ্যক। বক্তা ওয়াজ-নসিহতের ময়দানে নামার আগে, মনেমনে স্থির করতে হবে, এটা পেশা নয়, গুরু দায়িত্ব। এটা বাণিজ্য নয়, নবী ও সাহাবাওয়ালা কাজ। এর যথাযথ বিনিময় আল্লাহর কাছে পাব। এ মানসিকতার বাস্তব প্রয়োগ ছাড়া কেউ বক্তা হলে তার বক্তব্য উম্মতের জন্য ফায়দাজনক হয় না।
শ্রোতার নিয়তের বিশুদ্ধতা : ওয়াজ-নসিহত বিনোদনের বিষয় না। হাসি-তামাশা দেখে বা কৌতুকক্রিয়া উপভোগ করে আনন্দিত হওয়ারও বিষয় না। কোন বক্তা কেমন কথা বলে, কে হাসায়, কে কাঁদায়, কার জনপ্রিয়তা আছে, কে সুর দিয়ে শ্রোতাকে মুগ্ধ করে আর কে স্বাভাবিক আলোচনা করে এসব বিবেচনায় এনে ওয়াজ শোনা বা ওয়াজ শোনা থেকে বিরত থাকার মানসিকতা বাদ দিয়ে আমলের নিয়তে মনোযোগ দিয়ে ওয়াজ শোনা। বক্তার পুরো ওয়াজ থেকে আমলযোগ্য কথাগুলো নোট করে আমলে পরিণত করার চেষ্টা করা। ওয়াজ-মাহফিল থেকে দ্বীন শেখা ও আমল শেখার নিয়ত করা।
উপর্যুক্ত তিন শ্রেণির মানুষের নিয়ত শুদ্ধ হলে যে কোনো পর্যায়ের ওয়াজ-মাহফিল সর্বজনীন হয়ে ওঠে।
নবীদের ওয়াজ-নসিহত : নবীগণ (আলাইহিমুস সালাম) সাধারণত তাদের উম্মতকে কুফর ছেড়ে ঈমানের পথে আসার দাওয়াত দিতেন। আল্লাহর সস্তুষ্টি লাভের বিধান ও তরিকা সম্পর্কে উম্মতকে অবগত করতেন। তাওহিদ বা একত্ববাদ প্রতিষ্ঠার মিশন ও ভিশন ছিল যুগে যুগে আগত সব নবীর ওয়াজ-নসিহতের মূল বিষয়।
যেমন- আল্লাহতায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক উম্মতের মাঝে কোনো না কোনো রাসুল পাঠিয়েছি এ নির্দেশ দিয়ে, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগূতকে (আল্লাহ ছাড়া যত উপাস্য আছে তাকে) পরিহার কর।’ (সুরা নাহল: ৩৬)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমার (মুহাম্মদ) পূর্বে যে রাসুলই পাঠিয়েছি, তার কাছে এ আদেশই (ওহী) পাঠিয়েছি যে, আমি ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই।
সুতরাং আমারই ইবাদত কর। (সুরা আম্বিয়া: ২৫)। সুরা যুখরুফের ৪৫নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমার (মুহাম্মদ) আগে আমি যেসব রাসুল পাঠিয়েছি, তাদের জিজ্ঞেস কর- আমি কি দয়াময় আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ স্থির করেছিলাম, যাদের ইবাদত করা যায়? এসব আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় নবীদের দাওয়াতের বা ওয়াজ-নসিহতের মূল বিষয় ছিল উম্মতকে কুফর থেকে ফিরিয়ে ঈমানের পথে আনা। এক আল্লাহর ইবাদতের ওপর উম্মতকে প্রতিষ্ঠিত করা।
মুহাম্মদ (সা.) এর দাওয়াতের আলোচ্য বিষয় : ইব্রাহিম আ. এর দোয়ার ফসল হিসেবে মক্কা নগরীতে ইব্রাহিমতনয় ইসমাইল আ. এর বংশধর থেকে মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম হয়। মুহাম্মদ (সা.) এর দাওয়াতি কাজ কী হবে, উম্মতের প্রতি ওয়াজ-নসিহতের মূল বিষয় কী হবে তা ইব্রাহিম আ. তার এক প্রার্থনায় বলেন। কোরআনে বর্ণিত প্রার্থনাটি হলো, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের মধ্যে এমন একজন রাসুল প্রেরণ করুন, যে তাদেরই মধ্য হতে হবে এবং যে তাদের সামনে আপনার আয়াতসমূহ (পবিত্র কোরআন) তিলাওয়াত করবে, তাদের কিতাব ও হেকমত (কোরআনের বিধান ও সুন্নাহ) শিক্ষা দেবে এবং তাদের পরিশুদ্ধ করবে (শিরক ও যাবতীয় গোনাহ থেকে)। (সুরা বাকারা : ১২৯)। এ একটি আয়াত থেকে বোঝা যায়, বক্তা বা ওয়ায়েজদের ওয়াজের আলোচ্য বিষয় কী হওয়া উচিত। পবিত্র কোরআনের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শেখানো, কোরআন ও হাদিসের বিধান শেখানো এবং কুফর-শিরক ও সব গোনাহ থেকে উম্মতকে বাঁচানোর পথ দেখানো। এগুলোই মূলত ওয়াজের আলোচ্য বিষয় হওয়া কাম্য।
হারিয়ে যাচ্ছে ওয়াজ-মাহফিলের আবেদন : দিন দিন ওয়াজ-মাহফিলের সংখ্যা বাড়ছে। জাকজমক ও আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনে ওয়াজ-মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
কিন্তু ওয়াজের মূল লক্ষ্য থেকে সরে যাচ্ছে ওয়াজ-মাহফিলের সব আয়োজন। ইলম ও আমলের ধারক-বাহক বিজ্ঞ আলেমদের কাজ মূলত ওয়াজ-নসিহত করা। ওয়াজ মাহফিল জাতির হেদায়াতের জন্য অত্যন্ত কার্যকর ও ফলপ্রসূ একটি মাধ্যম। এ মাধ্যমটি বিভিন্ন কারণে আজ এর স্বকীয়তা ও আবেদন হারাতে বসেছে। যা হেদায়াতপ্রার্থী মানুষের জন্য বড়ই দুঃজনক! বিগত বিশ বছরের সমাজচিত্র ও ওয়াজ-মাহফিলের হালহাকিকত নজরে আনলে মোটা দাগে পাঁচটি কারণ পাওয়া যায় ওয়াজ মাহফিলের ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারক আবেদন হারানোর নেপথ্য কারণ হিসেবে। এ অযাচিত কারণগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারলে ওয়াজ মাহফিল ব্যাপক পরিসরে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে।
এক. কোনো গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের বিবেচনায় কিংবা অযোগ্য ও ধর্মবিষয়ে মূর্খ লোক কর্তৃক বক্তা দাওয়াত করা-
যেমন-স্থানীয় যোগ্য আলেমদের মাধ্যমে বক্তা নির্বাচন না করে কোনো দল বা গোষ্ঠীর পছন্দমতো ইউটিউব বক্তাকে আমন্ত্রিত করা, কোনো সামাজিক সংগঠন জনসমাগম করে নিজেদের শক্তি ও সংঘবদ্ধতা জানান দেওয়ার জন্য কোনো অযোগ্য ভাইরাল বক্তা দাওয়াত করা বা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাহফিলের মাধ্যমে এলাকার মানুষের হেদায়াতের বিষয়টি তুলনামূলক কম গুরুত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লাভের বিষয়কে গুরুত্ব দিতে গিয়ে অশিক্ষিত ও নসিহতের অযোগ্য কাউকে নসিহতের আসনে বসিয়ে দেওয়া। শ্রোতাদের থেকে মূল টার্গেট হিসেবে প্রকাশ্যে চাঁদা তোলা। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুটি বিষয় স্পষ্ট হয়-১. অযোগ্য লোক কর্তৃক অযোগ্য বক্তা আমন্ত্রিত হওয়া। ২. ওয়াজ-মাহফিলের মাধ্যমে হেদায়াতের আশার তুলনায় আয়োজকদের নিজেদের স্বার্থ লাভের ফিকির বেশি থাকা। যা ওয়াজ-মাহফিলের প্রাণ হারানোর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
দুই. চুক্তিভিত্তিক বাণিজ্যিক বক্তার সয়লাব : ওয়াজ-মাহফিলকে বাণিজ্যিক রূপদানকারী বক্তার সংখ্যা বেড়ে চলেছে। যাদের মূল লক্ষ্য কণ্ঠ বেচে টাকা উপার্জন করা। এ জাতীয় বক্তাদের মাঝে আছে ধর্ম সম্পর্কে টুকটাক-জানা কণ্ঠশিল্পী, আজান-ইকামত শুনিয়ে মারহাবা শোনার প্রত্যাশী আধা মৌলভি, কমেডিয়ান বক্তা, বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর কাছে হঠাৎ শায়খ বনে যাওয়া বক্তা, কণ্ঠে ও জনপ্রিয়তায় শীর্ষে থাকা কিছু বক্তাও এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। যাদের এ ময়দানে কাজ করার মূল উদ্দেশ্যই হলো টাকা। যারা একদিনে কয়েকটি প্রোগ্রাম করে। এমন সব চুক্তিধারী বক্তাদের কারণে আজকাল ওয়াজ-মাহফিল থেকে ওয়াজের মূল আবেদন আল্লাহর ভয় হৃদয়ে জাগ্রত হওয়া ও দ্বীন ইসলামের ওপর অবিচল থাকার প্রভাব বিস্তারক সবক পাওয়া প্রায় শূন্যের কোঠায় এসে ঠেকেছে।
তিন. রাজনৈতিক সংঘাত ও ক্ষমতাসীনদের অনৈতিক হস্তক্ষেপ : বিগত বিশ-পচিশ বছরে দেশে রাজনৈতিক সংঘাত বেড়েছে। বিরোধীদল বা ভিন্নমত পোষণকারীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হ্রাস পেয়েছে। তাই অনেক সময় দেখা যায়, ময়দানে বা অডিটোরিয়ামে মত প্রকাশের স্বাধীনতা না পেয়ে বক্তারা ওয়াজের ফাঁকে ফাঁকে বাক স্বাধীনতার কথা বলে কিংবা চলমান সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় কোনো অসংগতি জনসম্মুখে তুলে ধরে। এতে প্রশাসনিক বাধা আসে। মাহফিল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে সরকার ও জনতার মাঝে চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়। এ পরিস্থিতিতে কিছু বক্তা ইস্যুভিত্তিক প্রতিবাদী ও উদ্দীপ্ত বক্তব্য রাখে। যা মূলত ওয়াজ-মাহফিলের বিষয় নয়। কিন্তু কালের প্রেক্ষাপটে এমন কিছু বিষয় ওয়াজে প্রবেশ করায় ওয়াজ-মাহফিল তার মূল আবেদন থেকে সরে যাচ্ছে। এছাড়া ওয়াজ-মাহফিলে ক্ষমতাসীন লোক সভাপতি হলে বা কোনো রাজনৈতিক দলীয় আদলে মাহফিল পরিচালনার চেষ্টা করা হলে ওয়াজ-মাহফিলের আর স্বাভাবিক আবেদন থাকে না।
চার. বুজুর্গ ও ইলমি ব্যক্তিকে দাওয়াত না করা : ওয়াজ-নসিহত করার প্রকৃত হকদার ও যোগ্য ব্যক্তি হলেন গভীর জ্ঞানের অধিকারী আলেম ও বুজুর্গ ব্যক্তিবর্গ। যারা সুর মূর্ছনায় শ্রোতাকে মাতিয়ে রাখে না। প্রভাব বিস্তারক জ্ঞানগর্ভ আলোচনার মাধ্যমে আল্লাহ ও তার রাসুলের ইশকের শরাব পান করিয়ে প্রকৃত মানুষ হওয়ার সবক শেখান। এ জাতীয় বুজুর্গ আলেমদের ওয়াজ মাহফিলে আমন্ত্রিত না করে সার্বিক বিবেচনায় যার কথায় আমলি প্রভাব নেই এমন লোককে বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত করার প্রবণতা বাড়ায় ওয়াজ-মাহফিল ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছে তার আবেদন।
পাঁচ. ওয়াজের বিষয়বস্তু পূর্ব-নির্ধারিত না থাকা : বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করে আলোচনার সারমর্ম শ্রোতার সামনে সহজভাবে উপস্থাপন করা যোগ্য ও বিজ্ঞ বক্তার গুণ। প্রায় মাহফিলের আয়োজকগণকে বক্তারা বয়ান বাবদ চুক্তি ও গাড়ি ভাড়ার টাকা পুরো বা আংশিক অগ্রীম পরিশোধ করার শর্ত আরোপ করলেও আয়োজকগণ বক্তাদের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে দেন না। এতে বক্তারা নিজেদের মনমতো এলোমেলো কথা বলেন। বিষয়বস্তু ও সময় পূর্ব-নির্ধারিত থাকলে ওয়াজের মান কিছুটা হলেও রক্ষিত হবে। অন্যথায় কালের দুর্বিপাকে ইখলাসহীন অযোগ্য বক্তাদের কবলে পড়ে জনগণের দ্বীন শেখার এ সর্বজনীন মাধ্যমটিও ক্রমশ আরো দুর্বল হয়ে পড়বে।
লেখক: মুহাদ্দিস, গবেষক ও সম্পাদক।