পৃথিবীর মর্যাদাপূর্ণ প্রাচীন পাঁচ মসজিদ
ইলিয়াস মশহুদ
প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মসজিদ আল্লাহর ঘর। এটি জান্নাতের বাগান এবং পরকালের বাজার। মসজিদের সঙ্গে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক জরুরি বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের ঈমান-আমল, আখলাক-ইবাদত, শিক্ষা-দীক্ষা,সভ্যতা-সংস্কৃতি সবকিছুই মসজিদকেন্দ্রিক। তাই ইসলামে মসজিদের অবস্থান অন্যসব ধর্মের উপাসনালয়ের মতো নিছক ইবাদত-বন্দেগির জন্য নির্দিষ্ট কোনো ইমারত বা বিল্ডিংয়ের নাম নয়; বরং মসজিদ মুসলিম সমাজের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক, চারিত্রিক উন্নতি ও সমৃদ্ধির মারকাজ বা প্রাণকেন্দ্র।
দুনিয়ার ভ্রষ্টতা ও পাপ-পঙ্কিলতার আঁধার দূরীকরণে ইসলাম হলো হেদায়তের আলোকবর্তিকা। আর মসজিদ হলো ওই দীপ্তপ্রদীপ, যার আলোয় সমাজের সর্বত্র হয়ে ওঠে আলোকময়; যার আলোয় সমগ্র জগৎ হয় জ্যোতির্ময়।
কোনো সমাজ বা এলাকায় মসজিদ থাকা মানে ইসলাম থাকার প্রমাণ বহন করে। কেননা, মসজিদ হলো ইসলামের অন্যতম নিদর্শন বা প্রতীক। মসজিদের সঙ্গে সমাজের ছয় শ্রেণির মানুষ সম্পৃক্ত থাকেন এবং তাদের মাধ্যমেই মসজিদ পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও আবাদ হয়ে থাকে। তারা হলেন- ইমাম, খতিব, মুয়াজ্জিন, খাদিম, মুতাওয়াল্লি বা মসজিদ কমিটি এবং সাধারণ মুসল্লি। মসজিদ মুসলমানদের বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যাবলির প্রাণকেন্দ্র। এখানে প্রার্থনা করা ছাড়াও শিক্ষা প্রদান, তথ্য বিতরণ এবং বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়।
ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন মসজিদ তিনটি : মক্কার মসজিদুল হারাম, মদিনার মসজিদে নববি ও ফিলিস্তিনের আল-আকসা মসজিদ। এরপর হলো মসজিদে কুবা ও মসজিদে কিবলাতাইন। আসুন পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো পাঁচটি মসজিদ সম্পর্কে আমরা জেনে নিই, যেগুলোকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মসজিদের তালিকাতেও প্রথমে রাখা হয়।
ইসলামের প্রথম মসজিদ মসজিদে কুবা : পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো মসজিদের মধ্যে একটি হলো ‘মসজিদে কুবা’। মসজিদটি আনুমানিক ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত হয়। এই মসজিদে রয়েছে ৬ গম্বুজ ও ৪ মিনার। মসজিদে কুবা নামের এই মসজিদটি মদিনাতে অবস্থিত। মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের সময় মুহাম্মদ (সা.) এই মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি এই মসজিদে প্রায় ২০ রাত যাপন করেন। এই মসজিদে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়লে ওমরা হজের সওয়াব পাওয়া যায়।
মসজিদে নববি : বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীর দ্বিতীয় পবিত্রতম স্থান হচ্ছে ‘মসজিদে নববি’। এই মসজিদটি নির্মাণ করতে ৭ মাস সময় লেগেছিল। ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরের পর থেকে ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এই মসজিদের নির্মাণ কাল নির্ধারণ করা হয়।। বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) মসজিদটি নির্মাণের জন্য নাজ্জার গোত্রের সাহল ও সোহাইল নামক দু’জন বালকের কাছে থেকে প্রয়োজনীয় জমি ক্রয় করেন।
এর ক্ষুদ্র একটি অংশে তিনি বাসস্থান নির্মাণ করেন এবং বাকি অংশে মদিনা মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করেন। মদিনা মসজিদের প্রাথমিক আয়তন ছিল ১০০*১০০ হাত বা ৫৬*৫৬ গজ। মসজিদের ভিত্তি ও দেওয়ালের নিম্নভাগ ৩ হাত পর্যন্ত প্রস্তর নির্মিত ছিল। প্রথম দিকে মদিনা মসজিদ রৌদ্র-শুষ্ক ইট দ্বারা নির্মিত হয়। বাকি আল-খাবখাবা উপত্যাকা হতে আনিত কাদা দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল এই রৌদ্র-শুষ্ক ইট। তখন মদিনা মসজিদের দেওয়াল ছিল ৭ হাত উঁচু। ছাদকে শক্তিশালী ও মজবুত রাখার জন্য মদিনা মসজিদের ৩৬টি খেজুর গাছকে স্তম্ভ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। আর মসজিদের ছাদ নির্মিত হয়েছিল খেজুর পাতা দিয়ে। ছাদকে সুন্দর করার জন্য, রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য খেজুর পাতার উপর কাঁদামাটির আস্তরণ লেপে দেওয়া হয়েছিল।
সে সময় মদিনা মসজিদে প্রবেশের জন্য ৩টি দরজা ছিল। প্রধান প্রবেশ পথ যেটা দক্ষিণ দিকে অবস্থিত সেটা দিয়ে মুসল্লিরা মসজিদে প্রবেশ করতেন ও বের হতেন। পশ্চিম দেওয়ালে ছিল মসজিদের দ্বিতীয় প্রবেশ পথদ্বার যা ‘বাবে রহমত’ নামে পরিচিত। তৃতীয় প্রবেশ পথটি ছিল পূর্ব দেওয়ালে, যেদিক দিয়ে দু’জাহানের সর্দার মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রবেশ করতেন। এজন্য এটির নাম হয় ‘বাব উন নবি’। মসজিদের দরজা প্রস্তর নির্মিত ছিল। মদিনা মসজিদেই সর্ব প্রথম মেহরাব, মিম্বার, আজান দেয়ার স্থান বা মিনার ও ওজুর স্থান সংযোজন করা হয়। বর্তমানে মদিনা মসজিদে আগের চেয়ে অনেক সম্প্রসারিত। সম্পূর্ণ নতুন নকশার ভিত্তিতে এটিকে সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং একই সঙ্গে লাখ লাখ মুসল্লির নামাজের সুব্যবস্থা করা হয়েছে। মসজিদে নববি বর্তমানে পৃথিবীর বড় মসজিদের মধ্যে একটি। এই মসজিদ কমপ্লেক্সের মধ্যে প্রিয় নবীজির রওজা মোবারক এবং আবু বকর (রা.) ও উসমান (রা.)-এর রওজা অবস্থিত।
দক্ষিণ পশ্চিম কর্নারে সবুজ রংয়ের গম্বুজটি যেখানে অবস্থিত, সেখানে আম্মাজান আয়েশা (রা.)-এর ঘর ছিল। আয়েশা (রা.)-এর ঘরেই নবীজির রওজা মোবারক অবস্থিত। ইসলামের বিধানানুযায়ী লাখ লাখ মুসলমান জিয়ারত করতে যান মদিনা মসজিদের অভ্যন্তরস্থ নবীজি (সা.)-এর রওজা শরিফ। হজ সম্পাদনের আগে বা পরে হাজীরা মসজিদে নববিতে একনাগাড়ে কমপক্ষে ৮ দিন অবস্থান করে ৪০ রাকাত নামাজ আদায় করেন।
মসজিদে হারাম : মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইবাদত করার জন্য পৃথিবীর প্রথম উপাসনালয় হলো ‘কাবা শরিফ’ যা নির্মাণ করেছিলেন পৃথিবীর প্রথম মানব হজরত আদম (আ.)। এই কাবাঘরকে ঘিরেই গড়ে ওঠেছে মসজিদ আল-হারাম। পরবর্তী সময়ে ধ্বংস এবং বিস্মৃত হয়ে গিয়েছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ২১৩০ অব্দে হজরত ইব্রাহিম (আ.) কর্তৃক কাবাঘর পুনর্নির্মিত হয় বলে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে।
তবে হজরত ইব্রাহিম (আ.) নির্মিত কাবাঘরের অংশ হিসেবে এখন শুধু হজরে আসওয়াদ বা ‘কালো পাথর’-এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। এ পাথরটি বেহেস্ত থেকে একজন ফেরেস্তা নিকটবর্তী আবু কুইবা পাহাড়ে নিয়ে আসেন। নবীজি (সা.) মক্কা বিজয়ের পর কাবাগৃহ পুনর্নির্মাণে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রতিদিন ২০ লাখ মুসল্লির নামাজ আদায় ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত মসজিদ আল-হারামকে ২০১০ সালের মুসলমানের ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়।
বর্তমানে প্রতিদিন ৯ লাখ মুসলমান এখানে নামাজ আদায় করতে পারেন। পবিত্র হজ পালনকালে মসজিদ আল-হারাম এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৪০ লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদ আল-হারামের মধ্যস্থলে রয়েছে কাবাঘর। এ পবিত্র ঘরটি কালো গ্রানাইড পাথর দিয়ে নির্মিত।
পৃথিবীর সব মানুষ এই কাবাঘরের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করে। ৬০৫ সালে রাসুল (সা.) এই কাবাঘরের কোণায় হজরে আসওয়াদ স্থাপন করেন। এক সময় কিছুটা দূরে থাকলেও বর্তমানে মকাম-ই-ইব্রাহিম, জমজম কূপ এবং সাফা-মারওয়া মসজিদ আল-হারাম চত্বরেই অংশ হয়ে রয়েছে। আয়তন, জনসমাবেশ ব্যবস্থাপনা, স্থাপত্য নিদর্শন সর্বোপরি ধর্মীয় বিবেচনায় মসজিদ আল-হারাম পৃথিবীতে মহান আল্লাহতায়ালার কুদরতি নিদর্শন।
মসজিদে কিবলাতাইন : মসজিদে কিবলাতাইন ইতিহাসের এক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। প্রথমে এই মসজিদের নাম ছিল মসজিদে বনু সালামা। এখানেই নামাজ আদায়ের সময় কিবলা পরিবর্তনের নির্দেশ আসে এবং নামাজরত অবস্থায় নবীজি (সা.) মসজিদে আকসা থেকে মুখ ঘুরিয়ে মক্কামুখী হয়ে বাকি নামাজসম্পন্ন করেন। এজন্য এই মসজিদের নাম কিবলাতাঈন বা দুই কিবলার মসজিদ।বর্তমানে মসজিদের ভেতরের মূল অংশ অক্ষত রেখে চারদিকে দালান করে মসজিদটি বাড়ানো হয়েছে। স্মৃতিস্বরূপ বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকের কিবলার জায়গাটি দু’তলা বরাবর রেখে দেওয়া হয়েছে।
পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে হজরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত নবি-রাসুলদের কিবলা ছিল বায়তুল মাকদিস। কিন্তু নবি করিম (সা.) ও সাহাবাদের একাংশ বায়তুল মাকদিস এবং কাবার দিকে ফিরে নামাজ আদায়ের বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেন। ইসলামের সূচনালগ্ন থেকে মদিনায় হিজরতের প্রায় ১৬ মাস পর্যন্ত বায়তুল মাকদিসের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। তবে মুসলমানদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠিত ও বিকশিত করার লক্ষ্যে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কাবার দিকে ফিরে নামাজ আদায়ের আকাঙ্ক্ষা লালন করতেন।
হিজরি দ্বিতীয় সনের শাবান মাসে মতান্তরে রজব মাসের মাঝামাঝি সময়ে বনু সালামায় পৌঁছে জোহর অথবা আসরের নামাজের দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাকাতের মাঝামাঝি সময়ে অহির মাধ্যমে কিবলা পরিবর্তনের এই নির্দেশ আসে।
দ্বিতীয় হিজরিতে এই মসজিদ নির্মিত হয়। পরে ১০০ হিজরিতে উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) এটি পুনর্নির্মাণ করেন। এরপর ৮৯৩ হিজরিতে শুজায়ি শাহিন আল জামালি ছাদসহ এবং ৯৫০ হিজরিতে তুরস্কের উসমানি খলিফা সুলায়মান কানুনি আরো বৃহদাকারে মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করেন।
মসজিদে কিবলাতাইন অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, যা অন্য কোনো মসজিদে নেই। ঐতিহ্যবাহী আরবীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এ মসজিদে ২ হাজারের মতো মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটিতে সুদৃশ্য দু’টি গম্বুজ ও দুটি মিনার রয়েছে। মিনারগুলো দূর থেকে দৃশ্যমান। হজ ও ওমরা পালনকারীরা মসজিদটি দেখতে ভিড় করেন।
মসজিদুল আকসা : মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মাকদিস ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ। যেটি জেরুজালেমের পুরোনো শহরে অবস্থিত। এটা মুসলমানদের কাছে ‘বায়তুল মাকদিস বা ‘আল আকসা’ মসজিদ নামে পরিচিত। ইসলামি স্থাপনার প্রাচীন এই নমুনাটি মুসলমান, খ্রিষ্টান ও ইহুদি তিন ধর্মাবলম্বীদের কাছে সমানভাবে পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ। ঈসা (আ.) এবং মরিয়ম (আ.)-এর সঙ্গে প্রাচীনতম ইবাদত গৃহ বায়তুল মুকাদ্দাস বা মসজিদে আকসার সম্পর্ক সুনিবিড়ভাবে জড়িত।
মহানবি (সা.)-কে আল্লাহতায়ালা মিরাজের রাতে প্রথমে মসজিদুল আকসায় নিয়ে যান। এরপর ঊর্ধ্ব আকাশ ভ্রমণ করান। মসজিদুল আকসা ও এর আশপাশের এলাকাটি অনেক নবী-রাসুলের স্মৃতিবিজড়িত স্থান। এখানে রয়েছে অসংখ্য নবী-রাসুলের সমাধি। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘জেরুজালেমে এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে কোনো নবী সালাত আদায় করেননি বা কোনো ফেরেশতা দাঁড়াননি।’ (তিরমিজি)।
মসজিদুল আকসার মোট সাতটি নাম রয়েছে। মসজিদুল আকসা, বায়তুল মাকদিস, আল-কুদস, মসজিদে ইলিয়া, সালাম, উরুশলেম ও ইয়াবুস। মসজিদুল আকসার নির্মাণ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। একদল ইতিহাসবিদ মনে করেন, মসজিদুল আকসা মূলত হজরত আদম (আ.)-এর হাতে তৈরি হয়, যা পরবর্তী নবীরা পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করেন। আবার অনেকে মনে করেন, হজরত সুলায়মান (আ.) এই মসজিদ নির্মাণ করেন। তবে সঠিক তথ্য হলো, হজরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক কাবাঘর নির্মাণের ৪০ বছর পর তার দৌহিত্র হজরত ইয়াকুব (আ.) মসজিদুল আকসা নির্মাণ করেন।
খ্রিষ্টপূর্ব ১০০৪ অব্দে হজরত সুলায়মান (আ.) আল-আকসা মসজিদের পুনর্নির্মাণ করেন। পরবর্তী বিভিন্ন শাসকের সময় মসজিদে অতিরিক্ত অংশ যোগ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে গম্বুজ, আঙিনা, মিম্বার, মিহরাব, অভ্যন্তরীণ কাঠামো ইত্যাদি। ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.)-এর খিলাফতকালে সাহাবি আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা.)-এর নেতৃত্বে পুরো বায়তুল মাকদিস এলাকা মুসলমানদের দখলে আসে। এরপর মুসলিম শাসকেরা কয়েকবার এ মসজিদের সংস্কার করেন। তবে ১০৯৯ সালের ১৫ জুলাই খ্রিষ্টান করুসেডাররা ফিলিস্তিন দখলে নেওয়ার পর মসজিদটিতে ব্যাপক পরিবর্তন করে গির্জায় পরিণত করে। মসজিদের গম্বুজের ওপরে তারা ক্রশ স্থাপন করে মসজিদের এক অংশকে আস্তাবল বানায় এবং অন্য অংশে নিজেদের থাকার ব্যবস্থা করে।এভাবে জেরুজালেমে ৪৬২ বছরের মুসলিম শাসনের পতন ঘটে। এরপর দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে ১১৮৭ সালে সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবি জেরুজালেম শহর মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে আসেন এবং আগের নকশা অনুযায়ী আল-আকসা মসজিদের পুনর্নির্মাণ করা হয়।
এরপর খ্রিষ্টশক্তি পিছু হটলেও ইহুদি চক্র বায়তুল মাকদিসের দিকে লোলুপ দৃষ্টি রাখে। ১৯৪৮ সালের ১৫ মে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে ইসরায়েল নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ১৯৬৭ সালের জুনে পূর্ব আল কুদস, পশ্চিম তীর, গাজা ও গোলান মালভূমি দখল করে নেয়। বর্তমানে দখলদার ইসরায়েল ঐতিহাসিক আল-আকসা মসজিদ দখল করে রেখেছে। ১৯৬৯ সালে তারা একবার আল-আকসা মসজিদে অগ্নিসংযোগও করেছিল।
বর্তমানে এ মসজিদে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। ইসরাইলের মুসলিম বাসিন্দা এবং পূর্ব জেরুজালেমে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা মসজিদুল আকসায় প্রবেশ ও নামাজ আদায় করতে পারেন। আবার অনেক সময় বাধাও দেওয়া হয়। গাজার অধিবাসীদের জন্য বিধিনিষেধ অনেক বেশি কঠোর। বর্তমানে ইসরাইল ফিলিস্তিনের গাজায় ব্যাপক হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। মুসলিমদের কাছে আল আকসা মসজিদ নামে পরিচিত স্থাপনাটি ইহুদিদের কাছে ‘টেম্পল মাউন্ট’ নামে পরিচিত। আল আকসা হচ্ছে ইসলামের প্রথম কিবলা এবং মক্কা ও মদিনার পর তৃতীয় পবিত্র স্থান। মসজিদুল আকসায় এক রাকাত নামাজ আদায় করলে ২৫০ অন্য বর্ণনায় ৫০০ রাকাতের সাওয়াব পাওয়া যায়। শেষ জামানার ঘটনাবলির কারণেও এ এলাকাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলেই দাজ্জাল ও ঈসা (আ.) এর আগমন ঘটবে।
লেখক : গবেষক আলেম