ইসলামে নারীর অধিকার

আতীক জামীল

প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার সৃষ্টির নেজামে মানুষকে পুরুষ ও নারী দুই ভাগে বিভক্ত করে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টিগত স্বভাব ও অধিকার থেকেও দু’টি জাতিকে সম্পূর্ণ আলাদা করে রেখেছেন। নারী-পুরুষের পরস্পরের দৈহিক গঠন যেমন ভিন্ন, কর্মক্ষেত্রও ভিন্ন। স্বভাব যেমন ভিন্ন, অধিকারও তেমন ভিন্ন। আমাদের মুসলিম নারী সমাজের নারীরা আজ আত্মপরিচয় ভুলে আল্লাহর দেয়া বিধি-বিধান অমান্য করে, নিজেদের সীমিত আকলের নির্দেশ মেনে পশ্চিমা নারীদের মতো সমানাধিকার দাবি করছে। বর্তমানে নারী-পুরুষ সমঅধিকারের দাবিদাররা নারী-পুরুষের সৃষ্টিগত বৈষম্য ভুলে এমন ভিত্তিহীন যুক্তিতর্ক ও কার্যকলাপ শুরু করেছে, যা রীতিমতো হাস্যকর। তথাকথিত ওই সব নারীবাদীদের প্রতি আমার জিজ্ঞাসা, যারা কোরআনি বিধান লঙ্ঘন করে নিজেদের মনগড়া আইন দ্বারা সুশীল সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে, তারা কী পেরেছে নারীর পূর্ণ অধিকার প্রদান করতে? নারী নির্যাতন রোধ করতে?

আমি আরো জিজ্ঞাসা করতে চাই, পাশ্চাত্যসহ যে সব দেশে নারীরা সমঅধিকার প্রাপ্ত, সেসব দেশে কেন প্রতি মিনিটে ধর্ষিত হচ্ছে নারীরা? এক জরিপে দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শতকরা ৫০ভাগ নারী ও ব্রিটেনের শতকরা ৫৩ ভাগ নারী যৌন নিপীড়নের শিকার। ওসব দেশে কেন ডাস্টবিনে অহরহ নবজাতক পাওয়া যায়? প্রতিনিয়ত পত্রিকার পাতায় কেন পাওয়া যায় যৌতুকের অভিশাপে ছাত্রী আত্মহত্যার খবর? কেন চলন্ত বাসে ধর্ষিত হয় স্কুল ছাত্রী? এসব অপ্রীতিকর ঘটনা কোনো আইনের ভিত্তিতে ঘটে? এখানে আমরা একটি পরিসংখ্যান দেখব, তাহলেই আমরা বুঝতে পারব সমঅধিকারের নামে অবাধ চলাফেলার কী ফল? আমেরিকার ব্যুরো অব জাস্টিস স্ট্যাটিস্টিক অনুযায়ী আমেরিকায় ধর্ষণের শিকার নারী ৯১ শতাংশ এবং পুরুষ ৮ শতাংশ। ন্যাশনাল ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইম্যানের সার্ভে অনুযায়ী আমেরিকার প্রতি ৬ জন নারীর মধ্যে একজন ধর্ষণের শিকার। এই দেশে ১৪ বছর বয়স থেকেই ধর্ষণের মতো অপরাধের প্রবণতা শুরু হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতি মিনিটে একটি শিশুকে ধর্ষণ করা হয়। ২০০০ সালে দেশটিতে ৬৭ হাজার শিশু ধর্ষণ এবং নিগ্রহের মামলা নথিভুক্ত হয়েছিল। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে প্রতি ১ লাখের ১৩২ জনেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হয়।

ভারতে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো অনুযায়ী ২০১২ সালে ২৪ হাজার ৯২৩টি ধর্ষণের অভিযোগ জমা হয়েছে। দেশটিতে ধর্ষণের শিকার প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৯৮ জনই আত্মহত্যা করেন। প্রতি ২২ মিনিটে ভারতে একটি করে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়। দ্য এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস ২০১৩ সালে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারতে ২০০১ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে শিশু ধর্ষণের অন্তত ৪৮ হাজার মামলা হয়েছে।

সুত্র : (বিজনেস টাইম্স, ওয়াল্ড পপুলেশন রিভিউ, ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো, দ্য এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস)। অথচ ইসলামি সোনালি যুগের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এমন একটি ধর্ষিতা মেয়ের কাহিনিও পাওয়া যাবে না। বর্তমানেও ইসলামি বিধানের অনুগত কোনো মেয়েকে এরূপ নির্যাতিত হতে দেখা যায় না। বরং নারী মুক্তি, নারী অধিকার, নারী স্বাধীনতার স্লোগান নিয়ে যারাই মাঠে নেমেছে, তারাই আজ চরমভাবে নির্যাতিতা, ধর্ষিতা। ইসলামি জীবন ব্যবস্থায় নারী ঘরের রানি।

ইসলাম নারীকে জীবন্ত কবর দেওয়া থেকে তুলে মা, মেয়ে, স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছে। সম্পদে বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে নারীদের বিন্দুমাত্র অধিকার ছিল না। রাসুল (সা.) তাদের পদতলে জান্নাতের কাছে দিয়েছেন। বিবাহের জন্য মোহর বাধ্যতামূলক করেছেন। পিতার চেয়ে মাতার অধিকার তিন গুণ বাড়িয়েছেন। সম্পদে তাদের ভাগ দিয়েছেন। যা জাহেলি যুগে কল্পনাও করা যেত না।

মানুষ যখন জাহেলি যুগের আচরণ গ্রহণ করে মূলত তখনই নারী নির্যাতিত হয়। নারীবিষয়ক গবেষক অধ্যাপক ড. হেনরি ম্যাকাও নারীমুক্তি আন্দোলনের মিথ্যাচার উন্মোচন করেছেন। তিনি এই আন্দোলনকে প্রতারণা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আধুনিক বিশ্ব পরিচালনায় নারীমুক্তি একটি প্রতারণার নাম।

এটি নিষ্ঠুর প্রতারণা, যা মার্কিন নারীদের বিপদগামী করেছে এবং পাশ্চাত্য সভ্যতাকে ধ্বংস করেছে। যেসব নারী মুক্ত, স্বাধীন, আত্মোন্নত এবং আত্মনির্ভরশীল হতে চায়, তাদের আমি বলব, বিপ্লবী হোন। তবে বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে বিপ্লবী হোন। নির্বুদ্ধিতা ও ছলনার শিকার হয়ে নয়। বিপ্লবী হোন আপনার সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণার বিপক্ষে ও আপনার ওপর অর্পিত নবদায়িত্বের বিরুদ্ধে- যা আপনাকে আপনার ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।