টিকটক যেভাবে ধ্বংস ডেকে আনে
শামসুল আরেফীন
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রাতারাতি সেলিব্রিটি বনে যাওয়া যায়; এমন একটি অ্যাপসের নামই হচ্ছে টিকটক। বাড়ন্ত বয়সের ছেলে-মেয়েরা এই নেশায় এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে। অথচ এই টিকটক বানাতে গিয়ে কত প্রাণ যে ঝরে গেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সংবাদপত্রের তথ্যমতে গত ১২ জুলাই কুমিল্লায় চলন্ত ট্রেনের ছাদে টিকটক করতে গিয়ে পা পিছলে ১৫ বছরের কিশোর মেহেদী হাসানের মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে টিকটক ভিডিও আপলোডকে কেন্দ্র করে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আরাফাত খুন হয়। গত ২ মার্চ রাজবাড়ী জেলার কালোখালী উপজেলায় টিকটক করতে গিয়ে হোসেন নামে ১৬ বছরের কিশোর রেল ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে টিকটক বানাতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে রেলের নিচে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়। ৮ মে নড়াইলের কালিয়ায় টিকটক করতে বাধা দেওয়ায় মায়ের সঙ্গে অভিমান করে কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করে সুমি আক্তার (১৯)। ১৬ মে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার শহরের লাল ব্রিজের অদূরে হৃদয় (১৫) নামে এক কিশোর খুলনাগামী নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস ট্রেনের সামনে টিকটক বানাতে গিয়ে কাটা পড়ে মারা যায়। ২২ মে নীলফামারীর সৈয়দপুরে টিকটক করতে গিয়ে নদীতে ডুবে মৃত্যু হয় মুস্তাকিম ইসলাম (১৬) নামে এক কিশোরের। গত ২০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জে টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে নির্মাণাধীন তিন তলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে অনিল (১৪) নামে এক কিশোরের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এমন হুমকির মধ্যদিয়ে যখন তরুণ সমাজ তখন এই অ্যাপকে একটা নিয়ন্ত্রণে আনা অধিক প্রয়োজন তা না হলে যে যুবক সমাজ একদিন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।
বলা বাহুল্য বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়, বিশ্বের প্রায় ৭৫টি ভাষায় এই টিকটক অ্যাপটি বানানো হয়েছে।
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, গোটা পৃথিবীতে এই অ্যাপটি প্রায় ৮০০ মিলিয়নবার ডাউনলোড হয়েছে। সুতরাং আমাদের সমাজের তরুণ তরুণীদের এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে কোরআন এবং হাদিসের নীতিমালা অনুসরণ করা কাম্য। প্রিয় নবীর অনুসরণ ও অনুকরণ ছাড়া ধরাধামে কেউ উত্তম চরিত্রের অধিকারী হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ’ (সুরা আজহাব, আয়াত: ২১)। হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) এরশাদ করেন ‘আমি উত্তম চরিত্রের পরিপূর্ণতা সাধনের জন্যই প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত)। আমাদের সমাজের এক শ্রেণির মানুষ আছে যারা মানুষকে গুনাহের দিকে আহ্বান করে, নিজেরাও ধ্বংসে নিপতিত হচ্ছে সাথে অন্য মানুষকে ধ্বংসের গহ্বরে তলিয়ে দিচ্ছে যা একটা সমাজ ও জাতির জন্য বিরাট হুমকিস্বরূপ।
আর অশ্লীলতা, ঠাট্টা-বিদ্রুপে পরিপূর্ণ এসব ভিডিও তৈরি করা অত্যন্ত জঘন্য পাপ। দুনিয়া ও আখিরাতে যার জন্য ভয়াবহ শাস্তির ঘোষণা এসেছে। যতজন এই ভিডিওগুলো দেখবে সবার পাপের একটা অংশ ভিডিওনির্মাতা পেতে থাকবে। এমনকি মৃত্যুর পরও এই গুনাহ জারিয়াহ বা চলমান হিসেবে আমলনামায় যোগ হতে থাকে। এ ব্যাপারে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে নেক কাজের দাওয়াত দেবে সে ওই লোকদের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে; যারা তার দাওয়াত পেয়ে নেক কাজ করবে অথচ তাদের সওয়াবের সামান্যও হ্রাস পাবে না। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি মানুষকে গুনাহের কাজে আহ্বান করবে সে ওই লোকদের সমপরিমাণ গুনাহ পাবে, যারা তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে গুনাহের কাজ করবে। অথচ তাদের গুনাহ হ্রাস পাবে না।’ (মুসলিম : ৬৯৮০)।
এ কারণে অশ্লীলতা, ঠাট্টা-বিদ্রুপে পরিপূর্ণ এসব ভিডিও তৈরি করা অত্যন্ত জঘন্য পাপ। দুনিয়া ও আখিরাতে যার জন্য ভয়াবহ শাস্তির ঘোষণা এসেছে। যতজন এই ভিডিওগুলো দেখবে সবার পাপের একটা অংশ ভিডিওনির্মাতা পেতে থাকবে।
এমনকি মৃত্যুর পরও এই গুনাহ জারিয়াহ বা চলমান হিসেবে আমলনামায় যোগ হতে থাকবে। টিকটকসহ গুনাহে জড়িত হতে হয় এমন সব অ্যাপস ব্যবহার বর্জন করা উচিত। যাতে নিজের অজান্তেই আবেগের বশে কেউ গুনাহগার না হয়।
লেখক: শিক্ষক