জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত ঢাকার সেগুনবাগিচাস্থ রিপোর্টার্স ইউনিটে গত ১লা ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে ‘বর্তমান শিক্ষাক্রম ও মুসলিম জাতিসত্তার স্বকীয়তা সমুন্নত রাখার অপরিহার্যতা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সেমিনারে বর্তমান শিক্ষাক্রমে ইসলাম ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু বিষয় উপস্থাপন করে সরকারের কাছে এর সংশোধনী প্রত্যাশা করে মূল প্রবন্ধ পাঠ করি। উক্ত প্রবন্ধের নির্বাচিত কিছু অংশ আজকের এ নিবন্ধটি।
ঈমানী আক্বীদা-বিশ্বাস, এবাদত-বন্দেগি, পারিবারিক ও সামাজিক রীতিনীতি, উপার্জন ও উৎপাদনের নিয়মণ্ডকানুন এবং রাষ্ট্র পরিচালনাসহ প্রতিটি অঙ্গনে ইসলামপ্রদত্ত নির্দেশনাসমূহে কোনোরকম অস্পষ্টতা নেই, নেই কোনো প্রকার বৈষম্য ও জটিলতা।
সঙ্গত কারণে আদর্শ সন্তান এবং দক্ষ ও বিশ্বস্ত জনশক্তি তৈরি নিশ্চিত করতে ইসলামী শিক্ষা গোটা পৃথিবীতে এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী শিক্ষা। এ ক্ষেত্রে বলা বাহুল্য যে, মুসলিম শিক্ষার্থীরা যদি ইসলামের মৌলিকত্ব, বোধ-বিশ্বাস ও বিধি-বিধানকে অক্ষুণ্ণ রেখে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চায় তাহলে তা দোষের কিছু নয়, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা প্রয়োজনীয়ও বটে, কিন্তু শিক্ষার আড়ালে যদি মুসলিম শিক্ষার্থীদের ভিনদেশি ভাবধারা ও অনৈসলামিক পথে আকৃষ্ট করার নীলনকশা তৈরি করা হয় তাহলে তা নিঃসন্দেহে মুসলিম জাতিসত্তাকে বিপন্ন করার ষড়যন্ত্র ছাড়া অন্য কিছু নয়।
আমরা যদি তদানিন্তন ব্রিটিশ শাসনামলের দিকে একটু দৃষ্টি দেই তাহলে এমনই এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্র দেখতে পাই। এই উপমহাদেশ থেকে মুসলিম জাতির অস্তিত্ব ধ্বংস নিশ্চিত করতে ব্রিটিশরা স্থির করল যে, প্রথমে মুসলমানদের ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতি ও কৃষ্টি-সভ্যতাকে চিরতরে মুছে ফেলতে হবে, তাই লর্ড ম্যাকলে নামক তাদেরই এক প্রেতাত্মা এমন এক শিক্ষা কারিকুলাম সামনে আনার পদক্ষেপ নেয় যার প্রভাবে মুসলিম শিক্ষার্থীরা আকার-আকৃতিতে ভারতীয় থাকলেও কার্যত তারা যেন হয় ইউরোপীয় ও আমেরিকান মতাদর্শের মানুষ। লর্ড ম্যাকলের এই সর্বনাশী পরিকল্পনা বুঝতে পেরে হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা কাসেম নানূতুবী রহ. কাউন্টার পরিকল্পনাস্বরূপ তাৎক্ষণিক দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা করার এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেন। সেদিন যদি হযরত কাসেম নানূতুবী রহ. শত্রুদের আগ্রাসী প্লান বুঝে যুগান্তকারী এই পদক্ষেপ না নিতেন তাহলে আজ এই উপমহাদেশের মুসলমানদের কী করুণ দশা হতো তা চিন্তা করলে গা শিউরে ওঠাই স্বাভাবিক।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশেও আজ আমরা দুর্ভাগ্যবশত তৎকালীন ইংরেজদের নেওয়া পরিকল্পনার পুনরাবৃত্তি লক্ষ্য করছি। তাই যদি না হয় তাহলে কেন একটি মুসলিম দেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবইয়ে এমন আমূল পরিবর্তন আনা হলো? যেগুলো একদিকে যেমন ঈমানবিরোধী, আরেক দিকে তেমনি ইসলামী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যবিরোধী। ঈমান ও ইসলামী ভাবধারাপরিপন্থি এসব পরিবর্তনকে কোন ভাবেই বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। এর মধ্যে ট্রান্সেজেন্ডার ও বিবর্তবাদ ইস্যু দুটি সবথেকে বেশী জঘন্য। এ ছাড়াও বর্তমান শিক্ষা সিলেবাসের বিভিন্ন পাঠ্যবইয়ে আপত্তিকর এমন কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে যেগুলো আবহমানকাল থেকে চলে আসা আমাদের ধর্মীয় ঐতিহ্য ও রীতিনীতির সাথে পরিপূর্ণ রূপে সাংঘর্ষিক। শিক্ষার নামে স্বার্থান্বেষী ও কুচক্রী একটি মহলের এসব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে দেশ-জাতির ভবিষ্যৎ বিপর্যয়ের কথা চিন্তা করে আমরা এক বছর পূর্বেই দলের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্তসহ একটি সংবাদ সম্মেলন করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবগত করে দ্রুত এর প্রতিকার চেয়েছিলাম। অন্যান্য রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক ফোরাম থেকেও একই আওয়াজ উচ্চারিত হয়েছিল কিন্তু সরকার এ সব প্রতিবাদ আমলে নেয়নি, যার নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এমতাবস্থায় মুসলিম জাতিসত্তার স্বকীয়তা সমুন্নত রাখার বৃহত্তর স্বার্থে আজ আমরা আবারো বর্তমান শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হওয়া ঈমান ও ইসলামী ভাবধারাপরিপন্থি বিষয়সমূহের আংশিক চিত্র তুলে ধরছি।
প্রথমেই ট্রান্সজেন্ডার প্রসঙ্গ : ২০২৩ শিক্ষবর্ষের সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান নামক বইয়ের ‘শরীফার গল্প’ আলোচনাটি নিয়ে ব্যাপক প্রতিবাদ হওয়ার পরেও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড অনৈসলামিক উক্ত গল্পটি ২০২৪ সালেও সপ্তম শ্রেণির নতুন বইয়ে ৩৯ পৃষ্ঠা থেকে ৪৫ পৃষ্ঠা পর্যন্ত অংশে বহাল রেখেছে। এর অর্থ হচ্ছে কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আপত্তি ও প্রতিবাদের কোনো মূল্য নেই। ‘শরীফার গল্প’ নামের এই আলোচনাটি নিঃসন্দেহে পশ্চিমা দুনিয়া থেকে আমদানিকৃত প্রকৃতিবিরুদ্ধ ও সমকামিতার দীক্ষানির্ভর একটি আলোচনা, যার অপর নাম ট্রান্সজেন্ডার। শরীফ আহমেদ থেকে শরীফা আকতার হওয়ার এই গল্প এবং গল্পপরবর্তী আলোচনার বিভিন্ন অংশে আপত্তি করার মতো এমন কিছু আলাপচারিতা রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে একজন মুসলিম কিশোরের মন-মস্তিষ্ক বিকৃত হওয়ার যথেষ্ট উপাদান আছে বলে আমরা মনে করি। যেমন রণি বলল: আমার মা বলেন, ছোটদের কোনো ছেলে-মেয়ে হয় না। বড় হতে হতে তারা ছেলে বা মেয়ে হয়ে ওঠে।
নীলা বলল: আমার মা আমাকে বেগম রোকেয়ার লেখা একটা গল্প পড়ে শুনিয়েছিলেন। গল্পটার নাম ‘সুলতানার স্বপ্ন’। সেখানে এমন একটা জায়গা কল্পনা করা হয়েছে যেখানে ছেলে আর মেয়েদের প্রচলিত ভূমিকা উল্টে গিয়েছে।
মামুন বলল: তাই তো! আমরা শরীফার জীবনের গল্প শুনলাম, যিনি দেখতে ছেলেদের মতো, কিন্তু মনে মনে তিনি একজন মেয়ে। তার কাছে এমন একজনের কথা জানলাম যিনি দেখতে মেয়েদের মতো কিন্তু মনে মনে তিনি ছেলে। ফাতেমা বলল: কিন্তু এখন বুঝতে পারছি- ছেলে-মেয়েদের চেহারা, আচরণ, কাজ বা অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের কোনো শতঃসিদ্ধ নিয়ম নেই। খুশি আপা বলল, ঠিক বলেছ। শিক্ষার ছদ্মাবরণে চরিত্র বিনষ্টকারী এই আলোচনা ও আলোচনা-পরবর্তী আলাপচারিতা পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করার মধ্য দিয়ে কিশোর শিক্ষার্থীদের অবাধ যৌনাচারের দিকে ঠেলে দেওয়ার পাঁয়তারা কোনো বিবেকবান মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সচেতন অভিভাকরাও এ রকম গল্প পড়ানোর পরিণতি এবং নিজ সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের এই গল্পে উল্লেখ করা হয়েছে- আমরা নারী বা পুরুষ নই, আমরা হলাম ট্রান্সজেন্ডার। আর ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের বইয়ে একুট পরিবর্তন করে এখানে বলা হয়েছে- আমরা হলাম তৃতীয় লিঙ্গ (থার্ড জেন্ডার)। কৌশলে এই পরিবর্তনটুকু এনে মূলত ট্রান্সজেন্ডারকে তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া জনগোষ্ঠীর সাথে একাকার করে তালগোল পাকিয়ে চরম আপত্তিকর এই বিষয়টিকে জিইয়ে রাখার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
বিবর্তনবাদ প্রসঙ্গ : ব্যাপক প্রতিবাদের ফলে গত শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ে থাকা ‘খুঁজে দেখি মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস’ আলোচনাটি বাদ দেওয়া হলেও ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের সপ্তম শ্রেণির ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের ৪র্থ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে- যে জীবগুলো সময়ের সঙ্গে বিবর্তিত ও অভিযোজিত হয়ে হয়ে একে অপরের থেকে এতটাই আলাদা হয়ে গেছে যে, সেগুলো আর এক অপরের সঙ্গে প্রজননে অংশ নিতে পারে না, সেগুলোকে আলাদা প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, এটাই হচ্ছে বিবর্তনবাদের মূল কথা। বিবর্তনবাদ ঈমানবিরোধী একটি কুফরী মতবাদ। ন্যায়নিষ্ঠ বিজ্ঞানীরাও এই ভ্রান্ত মতবাদকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। পৃথিবীর অনেক দেশেই এই মতবাদ বাতিল করা হয়েছে, তাই বিজ্ঞানের নামে অবৈজ্ঞানিক ও ঈমানবিরোধী এই মতবাদের মূল কথা একটি মুসলিম দেশের পাঠ্যবইয়ে কিছুতেই থাকতে পারে না।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও বিজ্ঞান শিক্ষার নামে যৌন শিক্ষা : ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ শ্রেণির ৪৭ থেকে ৪৯ পৃষ্ঠায় বয়ঃসন্ধিকালে নারী-পুরুষের শারীরিক পরিবর্তন, নারী-পুরুষের শরীর থেকে কী নির্গত হয়, কোন অঙ্গের আকার কেমন হয় এবং বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কী রকম আকর্ষণ হয়, এসব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা হয়েছে। একই শ্রেণির ‘বিজ্ঞান ও অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের ‘মানব শরীর’ শিরোনামে ১১১ ও ১১২ পৃষ্ঠায় নারী-পুরুষের গোপন অঙ্গগুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা হয়েছে, যা ১২-১৩ বছর বয়সের শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ উদ্বেগজনক। স্পর্শকাতর এই বিষয়গুলো এভাবে প্রকাশ্যে আলোচনার ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লজ্জাহীন ও বিপথগামী হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।
২০২৪ শিক্ষাবর্ষের নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ১১০ পৃষ্ঠায় বহুবিবাহকে অন্ধকার প্রথা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা মনে করি এর মাধ্যমে একদিকে একাধিক বিয়ে ইসলামে বৈধ- এ বিষয়টিকেও অন্ধকার প্রথা বলা হয়েছে, আরেক দিকে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বহু বিবাহকেও অন্ধকার প্রথা বলা হয়েছে, যা ঈমানী আক্বীদা-বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক।
২০২৪ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ বইয়ের ৩৯ পৃষ্ঠায় দেশীয় সংস্কৃতির নামে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও ঢোল-তবলাকে প্রমোট করা হয়েছে।
সপ্তম শ্রেণির স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ে অতুল এবং নিরা, অন্তর এবং ফাহিমা গল্পগুলোতে বলা হয়েছে- অবৈধ সম্পর্কে গেলে কোনো অভিভাবকের শাসন করা উচিত নয়।
ষষ্ঠ শ্রেণির স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ে ছেলে-মেয়ের হাত ধরে চলাফেরা ও ঘোরাফেরাকে নিরাপদ স্পর্শ বলা হয়েছে। ২০২২ শিক্ষাবর্ষের আলিয়া মাদ্রাসার এবতেদায়ী প্রথম শ্রেণির ইংরেজি বই ‘ফর টু ডে, এর দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক কথোপকথনে সালাম বিনিময় থাকলেও ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে এসে উক্ত কথোপকথনে সালাম বাদ দিয়ে তদস্থলে গুড মর্নিং যুক্ত করা হয়েছে এবং ২০২৪ শিক্ষাবর্ষেও তা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। একই বইয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার বই হিসেবে শিক্ষিকার মাথায় হিজাব ও শিক্ষার্থীদের মাথায় টুপি ছিল, এ বছর তাও বাদ দেওয়া হয়েছে। নবম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা বইয়ে জিহাদ তুলে দেওয়া হয়েছে। জিহাদ আর সন্ত্রাস তো কখনোই এক জিনিস নয়। একই শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ভারতবর্ষের স্বাধীনতায় বিভিন্ন সংগঠনের কথা উল্লেখ করা হলেও ঐতিহাসিক সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ও মুসলমানদের অবদান একেবারেই সামনে আনা হয়নি, এটা ইতিহাস বিকৃতির সামিল। আলিয়া মাদ্রাসার বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ের প্রচ্ছদে বিজাতীয় সংস্কৃতিকে প্রমোট করা হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে এমনটা মনে করাই খুব স্বাভাবিক যে, গোটা শিক্ষা কারিকুলামেই যেন শিক্ষার্থীদের হিন্দুয়ানি সংস্কৃতির দিকে আকৃষ্ট করার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। নইলে মাদ্রাসা শিক্ষার একাধিক বইয়ের প্রচ্ছদ এমন হবে কেন?
এ রকম প্রচ্ছদ তো কোনো অবস্থাতেই আমাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে রিপ্রেজেন্ট করে না!
প্রবন্ধটি বড় হয়ে যাবে তাই এমন আরো অসঙ্গতি ও বিচ্যুতিগুলো আর তুলে ধরা যাচ্ছে না। তবে এতটুকু না বললেই নয় যে, একটি মুসলিম দেশের শিক্ষা কারিকুলামে ইসলাম ধর্মশিক্ষাকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার আওতায় চরমভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। অথচ ধর্মশিক্ষার মাধ্যমেই আদর্শ ও নীতি-নৈতিকতাসম্পন্ন প্রজন্ম গড়ে ওঠে। এই বাস্তবতায় যেখানে শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মশিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা ছিল, সেখানে তা না করে উল্টো সঙ্কুচিত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এমনকি মাধ্যমিক স্তরের পাবলিক পরীক্ষা থেকে ধর্মশিক্ষাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এ রকম অশুভ পরিকল্পনা ও দৃষ্টিভঙ্গীর পরিণামস্বরূপ আগামী প্রজন্মের ধর্মহীন হওয়ার সম্ভাবনা যারা অস্বীকার করবে তাদের মানসিক সুস্থতা সন্দেহাতীতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। অতএব আজকের এই সেমিনার থেকে আমরা শিক্ষার্থী সমাজ ও তাদের অভিভাবকগণকে সচেতন হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
পরিশেষে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ চিন্তা থেকে এবং আমাদের মুসলিম জাতিসত্তার স্বকীয়তা সমুন্নত রাখার অপরিহার্যতা উপলব্ধি করে ক্ষমতাসীন সরকারের কাছে কিছু প্রস্তাবনা পেশ করছি।
১. যেহেতু ২০১০ সালের প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতির প্রভাবেই আজকের এই বিতর্কিত শিক্ষা কারিকুলাম, তাই উক্ত শিক্ষানীতি বাতিল করে একটি মুসলিম দেশের ধর্মীয় ভাবধারার আলোকে নতুন রূপে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা।
২.বর্তমান পাঠ্যপুস্তক থেকে বিতর্কিত ও ইসলামবিরোধী সকল বিষয় ও আলোচনা বাদ দেওয়া।
৩. জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে একাধিক বিশেষজ্ঞ আলেম ও ইসলামী স্কলারকে যুক্ত করা।
৪. শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা এবং মাধ্যমিক স্তরে পাবলিক পরীক্ষায় ধর্মশিক্ষাকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা।
৫. পাঠ্যপুস্তকে ভিনদেশি সংস্কৃতিকে প্রমোট করার মানসিকতা পরিপূর্ণরূপে পরিহার করা।
৬. শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ দ্বারা শিক্ষক প্রশিক্ষণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া।
৭. শিশু ও কিশোর শিক্ষার্থীদের চারিত্রিক বিপর্যয় রোধে তাদের অনলাইনমুখী না করে পাঠ্যবইমুখী করা।
৮. সরকারি-বেসরকারি সব স্কুল, কলেজ ও বিশ্বিদ্যালয়ে মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের পর্দার সাথে শিক্ষা গ্রহণে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর দ্বীনের জন্য কবুল করুন, আমিন।