ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কথা না-বলা ইসলামি সভ্যতা নয়

দীদার মাহদী
কথা না-বলা ইসলামি সভ্যতা নয়

সমাজ জীবনে চলতে গিয়ে কোনো না কোনো সভ্যতাকে আঁকড়ে ধরতে হয়। মুসলমান জাতি তাদের নবী (সা.)-এর দেখানো পথে নিজেদের সভ্যতা গড়ে তোলে। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের দোষ গুণ থাকাটা খুব স্বাভাবিক। দোষ বর্জন করে গুণ গ্রহণ করাই সুস্থ সভ্যতার পরিচায়ক। সুস্থ ও শান্তিময় সমাজ ও সভ্যতার জন্য আমাদের প্রত্যেকের বদগুণগুলো বর্জন করতে হবে। সামাজিক শান্তি নষ্টকারী অভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে হবে। এক্ষেত্রে রাগগোস্বা বেশি বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। রাগের কারণে পারস্পরিক ঘৃণা জন্মে। ঝগড়া-বিবাদ হয়। এসব বদগুণ থাকাটা স্বাভাবিক। তবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যেমন মানুষ বিয়ে করে সুখের সংসার পাতার জন্য। বউকে পিটানো বা বিতর্কের জন্য নয়। তবুও তর্ক লেগে যায়। বিবাদণ্ডবিসম্বাদ হয়। এটা অস্বাভাবিক নয়। এতে কখনো কখনো কথাবার্তা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু এর নিয়ম ও সময়সীমা কী? মানববান্ধব ধর্ম ইসলামে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার বহুবিধ পদ্ধতি বর্ণনা করেছে। যেমন হাদিসে এসেছে, প্রকৃত বীর তো সেই ব্যক্তি, যে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেই অধিক উত্তম, যে মানুষের খারাপ আচরণে ধৈর্য ধারণ করতে পারে এবং তাকে ক্ষমা করে দেয়।

রাগ-গোস্বা সর্বোচ্চ তিন দিন : ইসলাম মনে করে একজন প্রকৃত মুসলিমের বৈশিষ্ট্য হলো, সর্বোচ্চ তিন দিনের মধ্যে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে নিবে। মনোমালিন্য দূর করে ফেলবে। রাগ নিয়ন্ত্রণে তিন দিন যথেষ্ট সময়। এর বেশি সে আপন মুসলিম ভাইয়ের সাথে ঝগড়া জিইয়ে রাখবে না। তাকে পরিত্যাগ করবে না। এ প্রসঙ্গে বিশ্বনবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করো না এবং একে অপরের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করো না, আর হে আল্লাহর বান্দাগণ, তোমরা ভাই ভাই হয়ে থাকো। আর কোনো মুসলিমের জন্য বৈধ নয় তিন দিনের বেশি আপন মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে সালামণ্ডকালাম বন্ধ রাখা’। (বোখারি, ৬০৬৫, মুসলিম, ২৫৫৯)। সুতরাং কারো উপর দুনিয়াবি ছোটোখাটো বিষয়ে রাগ হলে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। তাকে ক্ষমা করার চেষ্টা করতে হবে। তার সাথে সালামণ্ডকালাম বিনিময় করতে হবে। রাগের কারণে তিন দিনের অতিরিক্ত যেন কথা বন্ধ না থাকে। কারণ কোনো মুসলিমের জন্য অন্য কোনো মুসলিম ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি কথা বন্ধ রাখা বৈধ নয়।

রাগ হয়ে বদদোয়া না দেওয়া : কথায় আছে ‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন’। রাগ মানুষের স্বাভাবিক অনুভূতি হলেও তার প্রকাশ অনেক সময়েই অস্বাভাবিক হয়ে যায়। এতে অনেকের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। রাগের বশবর্তী হয়ে কোন মুসলিম ভাইকে গালাগালি করা। তার উপর লানত বা অভিশাপ বর্ষণ ও বদদোয়া করা বৈধ নয়। এক সাহাবি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে অল্প কথায় কিছু নসিহত করুন’। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘রাগ বর্জন করো’। সাহাবি কয়েকবার বললেন, ‘আরও নসিহত করুন’। প্রত্যেকবারই রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘রাগ বর্জন করো’। (বোখারি শরিফ)। তবে অনিয়ন্ত্রিত রাগ মারাত্মক ক্ষতিকারক। জ্ঞানীরা বলেন, রাগ হলো বারুদের গুদামের মতো। আগুনের স্ফূলিঙ্গের ছোঁয়ায় সব কিছু ধ্বংস করে দিতে পারে এই রাগ। এ কারণে রাগ নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই। বস্তুত রাগ মানুষের জীবনকে সহজেই বিষাক্ত করে তুলতে পারে। রাগের মাথায় এমন সব কাজ ঘটে যেতে পারে- যা ব্যক্তি, সমাজ তথা গোটা বিশ্বের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। তাই রাগ প্রশমন করতেই হবে। আবু আইয়ুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মুসলিমের জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি কথাবার্তা বলা বন্ধ রাখে। যখন তারা পরস্পর সাক্ষাৎ করে, তখন একজন এ দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং অন্যজন ওদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর তাদের দুজনের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি সেই হবে, যে সাক্ষাৎকালে প্রথমে সালাম পেশ করবে।’ বোখারি: ৫৭২৭, মুসলিম:২৫৬০)।

লেখক : প্রধান শিক্ষক, দারুলহুদা মডেল মাদরাসা, কোদালপুর

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত