পোশাক পরিচ্ছদ মানব সভ্যতার একটি অংশ। এটার মাধ্যমে সতর আবৃত করা হয়। মানুষের ব্যক্তিত্ব ও রুচি-বৈচিত্র্যের প্রকাশ ঘটে। ইসলাম পোশাকের ব্যবহারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। নারী পুরুষের আলাদা পোশাকের বিধান দিয়েছে। এখানে মুসলিম নারীর পোশাক নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।
নারীর ঘরের পোশাক : পোশাক আল্লাহপাক অন্যতম একটি নেয়ামত। পোশাক ব্যবহারের গুরুত্ব প্রসঙ্গে কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, হে আদম সন্তানরা ! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকবার ও বেশভুষার জন্য আমি তোমাদের পোশাক-পরিচ্ছদ দিয়েছি এবং তাকওয়ার (আত্মরক্ষার) পরিচ্ছদ সর্বোৎকৃষ্ট। তা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম। যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। (সুরা আরাফ :২৬) ইসলামি শরীয়তে পুরুষের নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত স্থান গুপ্তাঙ্গের অন্তর্ভুক্ত। শরীরের এই অংশটুকু স্ত্রী ছাড়া অন্য মানুষের দৃষ্টি থেকে আবৃত করে রাখা ফরজ। আর একজন মুসলিম মহিলার পুরো শরীর সতর। তবে স্বামীর সামনে স্ত্রীর কোনো পর্দা নেই । কিন্তু মাহরাম আত্মীয়দের থেকে মুসলিম নারীকে নিজের শরীর আবৃত করে রাখতে হয়। তাদের সম্মুখে শুধু মুখ, মাথা, হাত ও পা অনাবৃত রাখা যায়। পরপুরুষের সামনে নারীর দেহ সম্পূর্ণ সতর। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, নারী জাতি হলো আপাদমস্তক সতর। যখন সে বের হয়, তখন শয়তান তাকে চমৎকৃত করে তোলে। (তিরমিজি : ১১৭৩, সহিহ ইবনে খুজাইমা : ১৬৮৫)।
নারীর পোশাকের সীমা : প্রত্যেক সমাজে নারী পুরুষের আলাদা পোশাক আছে। নারী দেহের সঙ্গে সামঞ্জস্য পোশাক পরাই শরিয়তের নির্দেশ। নারীর জন্য পুরুষের সাদৃশ্য পোশাক পরা নিষেধ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) মহিলার পোশাক পরিধানকারী পুরুষকে এবং পুরুষের পোশাক পরিধানকারী নারীকে লানত করেছেন। (আবু দাউদ : ৪০৯৮) ফ্যাশনের নামে আজকাল যে পোশাক বাজারে আসে তার অধিকাংশ অমুসলিমদের অনুকরণে কিংবা কথিত নায়ক-নায়িকাদের অনুসরণে।
এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো কওমের (সম্প্রদায়ের) অনুসরণ অনুকরণ করবে, সে তাদের দলভুক্ত হবে। (আবু দাউদ : ৩৯৮৯) নারীদের শরীরের উঁচু-নিচু বোঝা যায়, এমন পাতলা ও টাইট পোশাক পরিধান করা গুনাহের কাজ। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, দুই প্রকারের লোক জাহান্নামী। অবশ্য আমি তাদের দেখতে পাব না। তাদের এক শ্রেণি এমন হবে, যাদের হাতের মধ্যে থাকবে গরুর লেজের দোররা। তার দ্বারা তারা মানুষদের মারধর করতে থাকবে।
আর দ্বিতীয় শ্রেণি হবে, এমন সব নারী যারা কাপড় পরিধান করেও উলঙ্গ থাকে। অপরকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করে এবং নিজেও অপরের দিকে আকৃষ্ট হয়। তাদের মাথার চুল হবে বুখতি উটের হেলে পড়া ককুদের মতো। তারা কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। যদিও তার ঘ্রাণ অনেক দূর থেকে পাওয়া যায়। (মুসলিম : ৫৩৯৭, মিশকাত : ৩৫২৪)।
নারীর নামাজের পোশাক : সাধারণত ঘরে ব্যবহৃত পোশাকের চেয়ে উত্তম পোশাক পরিধান করে নামাজ আদায় করতে হয়। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, হে আদম সন্তান! প্রত্যেক নামাজের সময় সাজসজ্জা (সুন্দর পোশাক পরিচ্ছদ) গ্রহণ করো। (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩১) সুরা মুদ্দাসসিরের ৪ নাম্বার আয়াতে নামাজের সময় পবিত্র পোশাক পরিধান করার কথা বলা হয়েছে। নামাজে মহিলাদের পুরো শরীর আবৃত করা ফরজ। শুধু মুখমন্ডল ও কবজি পর্যন্ত দুই হাত খোলা রাখতে হয়। শরীর আবৃত করার জন্য চারটি কাপড় পরিধান করতে হয় ইজার, জামা, ওড়না ও জিলবাব (বড় চাদর)। বিশেষ করে নামাজের আগে ওড়না বা হিজাব দ্বারা মাথার চুল, কাঁধ ও গলার নিম্নাংশ পরিপূর্ণ আবৃত করতে হয়।?
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী কারিম (সা.) বলেন, প্রাপ্ত বয়সি মহিলারা ওড়না ছাড়া নামাজ আদায় করলে তা আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। (আবু দাউদ : ৬৪১) উল্লিখিত চারটি পোশাক ব্যবহার সুনিশ্চিত হলে নামাজে ওঠা বসার ক্ষেত্রে কোনো অঙ্গ অনাবৃত হওয়ার ভয় থাকে না। নামাজের সময় পুরো শরীর আবৃত করাই মূলবিষয়। কম কাপড়ে আবৃত হলেও নামাজ আদায় করা যায়। উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করেন যে, মহিলারা পাজামা পরিধান ব্যতীত শুধু চাদর পরিধান করে নামাজ পড়তে পারে কি? তিনি বলেন, যখন চাদর বা জামা এতটা লম্বা হবে যাতে পায়ের পাতা ঢেকে যায়, এমন কাপড় পরিধান করে নামাজ পড়তে পারবে। (আবু দাউদ : ৬৪০)।
ঘরের বাইরের পোশাক : একজন মুসলিম নারীর জন্য মাহরাম আত্মীয়-স্বজন ছাড়া সব আত্মীয় ও অনাত্মীয় পুরুষদের সামনে শরীর পুরোপুরি আবৃত করে রাখতে হয়। বাইরে বেরুবার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। চেহারা ঢেকে চলাচল করতে হয়। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, হে নবী আপনার স্ত্রীদের, কন্যাদের এবং মোমেন মহিলাদের বলে দিন, তারা যেন তাদের চাদরের একাংশ তাদের উপর ঝুলিয়ে দেয়। এটা সর্বাধিক সঠিক নিয়ম। যাতে তাদের চেনা যায় এবং তাদের কষ্ট দেয়া না হয়। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মেহেরবান (সুরা আহজাব : ৫৯)। এ আয়াত প্রসঙ্গে উম্মে সালামা (রা.) বলেন, যখন নাজিল হয়, মহিলারা যেন তাদের দেহকে চাদর দিয়ে আবৃত করে। তখন মহিলারা কালো কাপড়ে শরীর আবৃত করে এমনভাবে বের হতো যে, মনে হত তাদের মাথার উপর কাক বসে আছে। (আবু দাউদ : ৪০৫৭)। একান্ত প্রয়োজনে মুসলিম নারীকে বাড়ির বাইরে যেতে হলে শালীন পোশাকে যেতে হয়। যেন সমাজে ফেতনা না ছড়ায়। পুরুষদের আকর্ষণ না করে। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, আর মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদের প্রদর্শন করবে না। (সুরা আহজাব : ৩৩) সাজসজ্জা আর পারফিউম ব্যবহার করে নারীদের বাইরে যাওয়া বড় গোনাহ। আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী কারিম (সা.) বলেছেন, প্রতিটি চোখ ব্যভিচারী। কোনো মহিলা যদি আতর লাগিয়ে কোনো মজলিসের পাশ দিয়ে যায়, তবে সে হলো এমন অর্থাৎ ব্যভিচারিণী। (তিরমিজি : ২৭৮৬)।
লেখক : কবি ও আলেম