সভ্যতা বিনির্মাণে ওয়াকফের গুরুত্ব
মুফতি লুকমান হাসান
প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ইসলামের গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। যাতে শিক্ষা-সভ্যতার উন্নতি ছিল শীর্ষে। সে সময় যেকোনো পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণ করার অধিকার সবার জন্য সমান ছিল। অর্থ-বিত্তাভাব কাউকে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেনি। ওয়াকফ ব্যবস্থার কারণেই এ গৌরবময় ইতিহাস রচিত হয়েছিল। বর্তমান বিশ্বেও শিক্ষার সব পর্যায় সবার জন্য উন্মুক্ত করতে ওয়াকফ ব্যবস্থা প্রধানতম ভূমিকা রাখতে পারে। এরই মধ্যে মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে শিক্ষা খাতে ওয়াকফভিত্তিক অর্থায়নে বেশ ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তা ছাড়া অতীতের ইসলামি শাসনামলে শিক্ষা খাতসহ রাষ্ট্রীয় বাজেট ঘাটতি পূরণেও ওয়াকফের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমানে ওয়াকফ ব্যবস্থা সাধারণ একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের অসম্পূর্ণ ধারণায় সীমাবদ্ধকরণ করা হয়েছে। যা তার বিপুল সম্ভাবনাকে সংকুচিত করেছে। অবশ্য ট্রাস্ট, ফাউন্ডেশন প্রভৃতি কিছুটা ওয়াকফের বিকল্প বলা যায়। তবে এ দুয়ের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক।
ওয়াকফ ও ট্রাস্ট : ট্রাস্ট, ফাউন্ডেশন, এন্ডোমেন্ট ইত্যাদির ধারণাগুলো ওয়াকফ থেকে নেওয়া। ওয়াকফের বিচিত্র খাত ও ব্যবহার এবং জাতীয় উন্নয়নে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণেই তা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে ওয়াকফ অন্যগুলোর চেয়ে বৈশিষ্ট্যে ও তাৎপর্যে সম্পূর্ণ আলাদা।
ওয়াকফের বৈশিষ্ট্য : ১. ওয়াকফ একটি দান। আল্লামা শামি (রহ.) বলেন, ‘ওয়াকফের উপকার দুটি- একটি পার্থিব, অপরটি পরলৌকিক। প্রথমটি প্রিয়দের (মানুষের) প্রতি মানবিক আচরণ করা হয়, দ্বিতীয়টি পরকালে এর সওয়াব লাভ হয়।’ অন্যান্য দানের চেয়ে এতে কিছু পার্থক্য রয়েছে। অন্যান্য দানে শুধু পরকালে সওয়াব লাভ করা যায়। ওই দান থেকে নিজে উপকৃত হওয়ার সুযোগ থাকে না। কিন্তু ওয়াকফের মাধ্যমে ওয়াকফকারী ব্যক্তি ও তার বংশধর এবং সমাজের বিত্তবান শ্রেণিও উপকৃত হওয়ার সুযোগ পায়। এমনকি অমুসলিম ও অন্যান্য প্রাণীদের জন্যও ওয়াকফ করা যায়। তাই ওয়াকফ দানের মাধ্যমে যেমনটা সমাজের বৈধ সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলোতে অর্থায়ন করা যায়, তা অন্য দানের মাধ্যমে হয় না।
২. ওয়াকফ সামাজিক সম্প্রীতি ও পারস্পরিক সহযোগিতার একটি আদর্শ ব্যবস্থা। ইসলামি ভ্রাতৃত্ববোধ, সবার প্রতি মানবতাবোধ এমনকি অন্য প্রাণীর প্রতি দয়া ও অনুকম্পার মানসিকতা থেকে সৃষ্ট চেতনার বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা একে অপরকে কল্যাণ ও তাকওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করো।’ (সুরা মায়িদা : ২)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মোমিনদের পারস্পরিক দয়া ভালোবাসা ও অনুগ্রহের উদাহরণ হলো, তারা একটি দেহের মতো। যার একটি অঙ্গ অসুস্থ হলে সব শরীর তার জন্য রাত জাগে এবং জ্বরের কষ্ট ভোগ করে।’ (বোখারি : ৫৫৫২, মুসলিম : ৪৫৮৬)।
৩. ওয়াকফ একটি টেকসই অর্থায়ন পদ্ধতি। কারণ ওয়াকফের মাধ্যমে প্রপার্টির মালিকানা ব্যক্তি থেকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করা হয়ে যায়। ফলে অভাবীদের জন্য সবসময় তার সহযোগিতা চলমান থাকে।
শিক্ষাব্যবস্থার ক্রমবিকাশে ওয়াকফের সোনালি অতীত : পৃথিবীর বুকে সভ্যতার আলোকবর্তিকার সূচনা হয় কলম দ্বারা। তার পরের ধাপে গ্রন্থ প্রণয়ন, গ্রন্থাগার নির্মাণ এবং বিদ্যালয়, মসজিদণ্ডমাদরাসা, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রভৃতি। কোরআনের প্রথম শব্দ ছিল ‘পড়ো’। আর চতুর্থ আয়াতটি ছিল ‘যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলম দ্বারা।’ (সুরা আলাক : ৪)। এ কারণে দেখা যায়, রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের ১১৮ বছর পর ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা তথা স্পেন হতে আরম্ভ করে ভারতের সিন্ধু পর্যন্ত ইসলামি সভ্যতার বিস্তার ঘটে। (চেপে রাখা ইতিহাস : ২৪)। কারণ শিক্ষার ব্যাপারে মুসলিমদের গুরুত্ব ছিল সবচেয়ে বেশি। অপরদিকে মুসলমানদের শিক্ষাব্যবস্থা বিস্তৃতির পেছনে প্রধান অর্থনৈতিক কারণ ছিল ইসলামের ওয়াকফ ব্যবস্থা।
ইসলামের শিক্ষা সূচনা ও ওয়াকফ সূচনা : শিক্ষার জন্য প্রথম নির্দেশ অবতীর্ণ হয় ৬১০ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝিতে। তখন মক্কায় পরিস্থিতির প্রতিকূলতা ও বাধা-বিপত্তির মধ্যেও অনিয়মতান্ত্রিক কয়েকটি জায়গায় শিক্ষার ধারা অব্যাহত ছিল। যেমন- দারুল আরকাম, ফাতেমা বিনতে খাত্তাবের গৃহ, শিআবে আবি তালিব প্রভৃতি। এগুলো কোনো নিয়মতান্ত্রিক ওয়াকফকৃত শিক্ষালয় ছিল না। (খাইরুল কুরুন কি দরসগাহে : ১১)। মদিনায় হিজরতের পর নিয়মতান্ত্রিক পাঠদান পদ্ধতি ছিল দু’ধরনের- এক. বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গোত্রের প্রতিনিধি হয়ে কিছু মানুষ এসে ১০-২০ দিন মদিনার মসজিদে নববির চত্বরে অবস্থান করত। ইসলামের বিধিবিধান ও নিয়মকানুন শিখে ফের গোত্রের কাছে ফিরে গিয়ে তাদেরকেও এরা ইসলাম শেখাত। (বোখারি : ৬৮০৪)। দুই. দূর-দূরান্ত থেকে আগত অনেক শিক্ষার্থী অবস্থান করে ইলম শিখত। তাদের আবাস ছিল মসজিদে নববির এ চত্বরটি। যাকে বলা হতো ‘সুফফা’। আর এখানে থেকে যারা ইসলামণ্ডইলম শিখত, তাদের বলা হতো ‘আসহাবুস সুফফা’। (বোখারি : ৪৪২)। মসজিদে নববিতে শিক্ষার বিভিন্ন চক্র হতো। আবু বকর (রা.), উবাই ইবনে কাব (রা.), উমর (রা.)-সহ অনেকে সেখানে কোরআন শেখাতেন। এরপর একই নিয়মে ইসলামের প্রথম ওয়াকফ প্রতিষ্ঠান মসজিদে কোবাতেও কোরআন শিক্ষার এ ধারা অব্যাহত ছিল। পরবর্তীতে মসজিদ কেন্দ্রিক শিক্ষার এ ধারা ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে। ফলে প্রায় হিজরি তৃতীয় শতাব্দী পর্যন্ত মসজিদই ছিল শিক্ষাঙ্গন। তাই যেখানেই মুসলমান ছিল, সেখানে কোনো মসজিদও ওয়াকফ করা হতো। যা ইলম ও ইসলামের জন্য কেন্দ্র গণ্য করা হতো।
সাহাবি যুগে ওয়াকফ ও শিক্ষাব্যবস্থা : আবু বকর (রা.)-এর যুগে ধর্মান্তরের ফেতনা মোকাবিলাতেই বেশি মনোযোগ ছিল। ওমর (রা.)-এর যুগে ইসলামি সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি লাভ করলে তিনি শিক্ষক হিসেবে সিরিয়া, কুফা, বসরাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আলেম সাহাবিদের প্রেরণ করেন। তারা সেখানে পৌঁছে মসজিদে মসজিদে পাঠদানের জন্য বসে যেতেন। বাচ্চাদের শিক্ষার জন্য প্রত্যেক অঞ্চলেই মসজিদকেন্দ্রিক মকতবও তিনি চালু করেন। যারা কোরআন হিফজ করত, তাদের বিশেষভাবে তিনি পুরস্কৃত করতেন। (খাইরুল কুরুন কি দরসাগাহে : ১৪)। সাহাবি যুগেই ব্যক্তিগত ও জাতীয় গ্রন্থাগারও গড়ে উঠেছিল প্রচুর। যার ধারাবাহিকতায় পরবর্তী যুগে বিশাল বিশাল পাঠাগার গড়ে উঠেছিল। গোলাম মোর্তজা লিখেছেন, ‘গ্রন্থ বা পুস্তক সংগ্রহ মুসলমানদের জাতীয় স্বভাবে পরিণত হয়েছিল। বন্দরে বন্দরে লোক প্রস্তুত থাকত। কোনো বিদেশী তার কাছে যে বইপত্র আছে, সেগুলো নিয়ে অজানা তথ্যের বইগুলো সঙ্গে সঙ্গে অনুবাদ করে তার কপি তৈরি করে তার বই ফেরৎ দেওয়া হতো। আর তাদের অনিচ্ছা না থাকলে তা কিনে নেওয়া হতো।’ (চেপে রাখা ইতিহাস : ২৫)। মুসলমানরা বিভিন্ন অঞ্চল জয় করে সেখানে থাকা কোনো গ্রন্থ বা বই তারা কখনও বিনষ্ট করতেন না। মি. গীবন বলেন, ‘আরবরা বিধর্মীদের গ্রন্থাদি বিনষ্ট করা পছন্দ করতেন না। তাদের ধর্মীয় নীতি এ কাজ সমর্থন করে না।’ (চেপে রাখা ইতিহাস : ২৫)।
উমাইয়া শাসনামলে শিক্ষাব্যবস্থা ও ওয়াকফ : উমাইয়া আমলে গোটা মুসলিম জাহানে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য মকতব কায়েম করা হয়। বিখ্যাত কবি আল কুমাইত ইবনে আসাদি কুফা শহরে এমনই একটি মকতবে ছোট ছেলে-মেয়েদের শিক্ষক ছিলেন। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে হাওকাল (রহ.) একটি মফস্বল এলাকায় মকতব প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসেব করেছিলেন। যার সংখ্যা ছিল তিনশত। আর মকতবগুলো এত প্রশস্ত হতো, কোনো কোনো মকতবে কয়েকশ’ এবং কয়েক হাজার পর্যন্ত শিক্ষার্থী পড়ার সুযোগ পেত। যেমন- আবুল কাসেম বালখি (রহ.)-এর একটি মকতব ছিল, যেখানে ৩ হাজার ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করত। মকতবের আয়তন এত বিশাল ছিল যে, গাধার পিঠে চড়ে ছাত্রদের তদারকি করতে হতো। (মিন রওয়াই হাযারাতিনা : ২০৫-২০৬)। উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বৃহদায়তন মসজিদগুলোই তখনও মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
জামে উমাবি : উমাইয়া শাসনামলে মসজিদসমূহে পঠন-পাঠনের স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী চক্র কায়েম করা হয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য ভাতা ও বৃত্তি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। (ইসলামি বিশ্বকোষ : ১৭/২৬৯)। দামেশকের জামে উমাবি উমাইয়া শাসনামলের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ওয়াকফ। যা আজও ইসলামি সভ্যতার সুউচ্চ নিদর্শন হয়ে টিকে আছে। এটি নির্মাণ করা হয়েছিল ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালিকের শাসনামলে। সে মসজিদটি নির্মাণে রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছিল। ইসলামি সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সুদক্ষ ১২ হাজার কারিগরকে একত্রিত করা হয়। মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় করা হয় ৪০০ বাক্স স্বর্ণ। প্রতিটি বাক্সে ছিল ২৮ হাজার লাল (খাঁটি সোনার) দিনার। নির্মাণে সময় লেগেছে ২০ বছর। মসজিদের মাঝখানে একটি স্তম্ভে মর্মর পাথর যুক্ত করা হয়। যা ক্রয় করা হয়েছিল ১ হাজার ৫০০ দিনার ব্যয় করে।’ (রওয়াইউল আওকাফ ফিল হাযারাতিল ইসলামিয়্যা : ৯০)।
আব্বাসি শাসনামলে শিক্ষা খাতে ওয়াকফ : আব্বাসি শাসকরা ইসলামি শিক্ষা-সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধির উচ্চ শিখরে পৌঁছিয়েছেন। ফাখরুদ দওলা ইবনে মুত্তালিব (মৃত্যু ৫৭৮ হিজরি) ওয়াকফ করেছিলেন ‘দারুয যাহাব’ নামের প্রসিদ্ধ একটি মাদরাসা। তার জন্য আরও বহু ভূমি-সম্পত্তি ওয়াকফ করেছিলেন। যা থেকে মাদরাসার জন্য বার্ষিক আয় ছিল ১ হাজার ৫০০ দিনার। সেখানে একটি বিশাল জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। এতে তিনি প্রায় ৩০ হাজার দিনার ব্যয় করেছেন। মসজিদের জন্যও সুবিশাল ভূমি ওয়াকফ করেছিলেন। (রওয়াইউল আওকাফ ফিল হাযারাতিল ইসলামিয়্যা : ৯০)। ওই যুগের আলেমগণেরও মাদরাসা ওয়াকফের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ ছিল। কিতাব, সম্পদ, ঘর-বাড়ি ইত্যাদি তারা ওয়াকফ করতেন। খতিবে বাগদাদি (মৃত্যু ৪৬৩ হিজরি) মৃত্যুর আগে তাঁর সব গ্রন্থ মুসলমানদের জন্য ওয়াকফ করে গিয়েছিলেন। (তারিখু মাদিনাতি দিমাশক : ৫/৩৯)।
ইরাকের মুসেল নগরীতে আবুল কাসেম জাফর ইবনে মুহাম্মদ ইবনে হামদান (মৃত্যু ৩২৩ হিজরি) একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যার নাম দিয়েছিলেন ‘দারুল ইলম’। সেখানে তিনি সব শাস্ত্রের গ্রন্থ-ভাণ্ডার জমা করেছিলেন। পাঠাগারটি তিনি শিক্ষার্থী ও বিদ্যানুরাগীদের জন্য ওয়াকফ করেছিলেন। তার পাঠাগার ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত। বিদেশি কোনো শিক্ষার্থী এলে এবং সে অভাবী হলে তাকে ফ্রি কিতাবাদি ও টাকা-পয়সা দেওয়া হতো। (মিন রওয়াঈয়িল আওকাফ : ৯০)। আব্বাসি খেলাফতের রাজধানী বাগদাদ এবং আশপাশের বড় নগরীগুলোর মধ্যেই শিক্ষাকেন্দ্রিক ওয়াকফের প্রবণতা সীমাবদ্ধ ছিল না। যেমন- ৪১৫ হি. সালে কাজবিনের আমির আবু তাহের ইবনে আবু আলী জামে মসজিদের গেট সংলগ্ন একটি পাঠাগার নির্মাণ করেন। সঙ্গে এর জন্য প্রচুর ভূমি ওয়াকফ করেন।
ইবনে হাওকাল (মৃত্যু ৩৬৭ হিজরি) হিরাত নগরীর বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘শহরের ভেতরে রয়েছে জামে মসজিদ। আর মসজিদ এরিয়ার ভেতর রয়েছে হাট-বাজার। কেবলার দিক থেকে মসজিদের পেছনেই রয়েছে জেলখানা। এই জামে মসজিদটি রাতদিন এতটাই আবাদ থাকে যে, মাওয়ারাউন নাহার, সিজিস্তান এবং বলখেও আমি তা দেখিনি। অথচ ওই নগরীগুলোর মসজিদগুলো ফকিহ, আলেম ও শিক্ষার্থীদের ভিড়ে সর্বদা ঠাসা থাকে।’ (আল মাসালিক ওয়াল মামালিক : ৩১৭)। ৩৫৯ হিজরি মোতাবেক ৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ফাতেমি সেনাপতি জাওহার আল কাতিব ওয়াকফ করে জামে আজহারের ভিত্তিস্থাপন করেন। ৩৯৫ হিজরিতে ফাতেমি শাসনকর্তা আল হাকিম বি আমরিল্লাহ কায়রোতে ‘দারুল ইলম’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়াকফ করেন। উক্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহের জন্য ফুসতাত নগরীতে বহু গৃহ ওয়াকফ ছিল। চতুর্থ হিজরী শতকের শেষ দিকে মাদরাসার জন্য স্বতন্ত্র ইমারত নির্মাণ করার প্রথা শুরু হয়। মুসলিম জাহানে সর্বপ্রথম নিশাপুরে মাদরাসার জন্য আলাদা ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। (মিন রওয়াঈয়িল আওকাফ : ৯৯)। সুলতান মাহমুদ গজনবি মথুরা জয় করার পর গজনীতে ফিরে যাওয়ার পর আনুমানিক ৪১০ হিজরিতে নিশাপুরে একটি আলিশান মাদারাসা কায়েম করেন। সঙ্গে একটি লাইব্রেরিও ওয়াকফ করেন।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ, ঢাকা