কেয়ামতের কঠিন বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে যারা আল্লাহর কাছে সুপারিশ করার অধিকার পাবেন, তাদের অন্যতম পবিত্র কোরআন। কোরআন তার ধারকদের জন্য সুপারিশ করবে। হাদিসে এসেছে, প্রিয়নবী বলেন, রোজা এবং কোরআন কেয়ামতের দিন সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার, কামাচার থেকে বিরত রেখেছিলাম। অতএব, তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। আর কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছিলাম। অতএব, তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। নবীজি বলেন, অতঃপর তাদের সুপারিশ কবুল করা হবে (মুসনাদে আহমাদ:৬৬২৬)। কোরআন মুখস্থ করার জন্য হাফেজেরা হাজারো রাত্রি বিনিদ্র কাটায়। এ পুরস্কার লাভ করা হাফেজদের জন্য খুবই সহজ।
পিতামাতার মাথায় মুকুট : কোরআন শুধু তার ধারককেই সম্মানিত করবে না বরং কোরআনের কারণে কোরআনের হাফেজের পিতামাতাকেও সম্মানিত করা হবে। নবীজি বলেছেন, যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করবে এবং সে অনুযায়ী আমল করবে, কেয়ামতে তার পিতামাতাকে এমন এক-মুকুট পরানো হবে যার আলো সূর্যের আলোর থেকেও উজ্জ্বল হবে (আবু দাউদ : ১৪৫৩)। কোরআনের হাফেজদের মর্যাদা আমাদের ধারণার অতীত।
মর্যাদাসম্পন্ন ফেরেস্তার সঙ্গী : ফেরেস্তারা আল্লাহর বিশেষ সৃষ্টি। যারা কখনো আল্লাহর অবাধ্যতা করেন না। গোনাহে লিপ্ত হয় না। তাই তারা আল্লাহর নিকটে সম্মানিত-মর্যাদাসম্পন্ন এক-জাতি। এই ফেরেস্তাদের মর্যাদা সম্পন্ন সঙ্গী হবেন সেই সকল লোক, যারা কোরআন পাঠে দক্ষ। আর এটা স্বীকৃত বিষয় যে, হাফেজরা কোরআন পাঠে দক্ষ হয়ে থাকেন। নবীজি বলেছেন, কোরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ফেরেস্তাদের সঙ্গী হবে (মুসলিম : ৭৯৮)।
হাফেজের সম্মানের মুকুট : নবীজি বলেছেন, কোরআন কেয়ামতের দিন আল্লাহকে বলবে, হে আল্লাহ! একে (হাফেজকে) অলংকার পরিয়ে দিন। তখন তাকে সম্মানের মুকুট পরানো হবে। কোরআন আবার বলবে, হে আল্লাহ! তার প্রতি আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যান। তাই, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন। অতঃপর তাকে বলা হবে একেক আয়াত পড় এবং ওপরে উঠতে থাক। প্রতি আয়াতের বিনিময় একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে (তিরমিজি : ২৯১৫)। অন্য হাদিসে এসেছে, কোরআনের বাহককে বলা হবে, পাঠ করতে থাক এবং ওপরে আরোহণ করতে থাক। কেন না, যে আয়াতে তোমার পাঠ সমাপ্ত হবে, সেটাই তোমার স্থান (জান্নাতে মর্যাদা লাভের স্তর) (তিরমিজি : ২৯১৪)।
হাফেজদের জন্য বিশেষ সম্মান : উহুদের যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর সত্তরজন লোক শাহাদাত বরণ করেন। যুদ্ধ শেষে তাদের দাফন করতে গেলে সাহাবিরা নবীজিকে জিজ্ঞাসা করেন, একটি কবরে কয়জনকে কবরস্থ করা হবে? তখন নবীজি বলেন, একটি কবরে দুজন অথবা তিনজনকে কবরস্থ কর এবং তাদের মধ্যে যাদের কোরআন বেশি জানা আছে তাদের আগে কবরে রাখ (আবু দাউদ : ৩২১৫)।