চাঁদ দেখে রোজা রাখা
মুফতি উবাইদুল্লাহ তারানগরী
প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
যেদিন আকাশে নতুন চাঁদ উঠবে পর দিনই রোজা কিংবা ঈদ। চাঁদ দেখে রোজা রাখা চাঁদ দেখেই রোজা ভাঙা তথা ঈদ পালন করা। কোরবানি ও হজও নির্ভর করে চাঁদ উঠার ওপরই। এই মূলনীতিটি যেন ভুলেই বসতে শুরু করেছি আমরা। বিশেষভাবে তরুণ প্রজন্ম। অনেকেই ভাবেন অমুক দেশে রোজা বা ঈদ পালন হলে আমাদের দেশেও সেদিন বা পরের দিনই রোজা বা ঈদ পালন করা আবশ্যক। তাই চাঁদ ও মাসের হিসাব না করে ভিনদেশের খবর নিতেই ব্যস্ত থাকে। বিষয়টি এমন নয়। রোজা বা ঈদ পালন হবে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে। কোনো এলাকার সবার দেখার প্রয়োজন নেই নির্ভরযোগ্য একজন মানুষ চাঁদ দেখার দ্বারাই রোজা রাখা আবশ্যক হবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘একজন মরুবাসী ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে (রমজানের) চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিল। রাসুল (সা.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কি এ কথার সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসুল?’ সে বলল, ‘হ্যাঁ।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন সবাইকে রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।’ (মুসতাদরাকে হাকিমণ্ড১/৪২৪)।
চাঁদ দেখা প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন; ‘লোকেরা আপনাকে নতুন মাসের চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি তাদের বলে দিন, এটা মানুষের (বিভিন্ন কাজকর্মের) এবং হজের সময় নির্ধারণ করার জন্য।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৯)।
দুই পদ্ধতিতে রমজান প্রমাণিত : পবিত্র রমজান মাস প্রমাণিত হবে দুই পদ্ধতিতে। ১. চাঁদ দেখার মাধ্যমে। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন; তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে রোজা রাখে। (কোরআনুল কারীম ২/১৮৫)। আর মাস পাওয়া যাবে চাঁদ দেখার মাধ্যমে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা (নতুন চাঁদ) না দেখা পর্যন্ত রোজা রেখো না এবং তা (নতুন চাঁদ) না দেখা পর্যন্ত রোজা ছেড়ে দিয়ো না।’ (মুআত্তা মালিক, হাদিস : ৬৩৫) অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন; তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে ঈদ করো। কিন্তু যদি আকাশে মেঘ থাকে, তাহলে গণনায় ৩০ পূর্ণ করে নাও। (বোখারি, হাদিস : ১৯০৯)।
২. চাঁদ না দেখার মাধ্যমে অর্থাৎ ২৯ শে শাবান যদি চাঁদ দেখা না যায় বা আকাশ মেঘলা থাকে, তাহলে শাবান মাস ৩০ দিনে গণনা করতে হবে। (অবশ্য এর জন্য আবশ্যক হলো শাবান মাসের শুরুর হিসাব ঠিক থাকা।) ৩০ শাবানের পরের দিন থেকেই নিশ্চিতরূপে রমজান। কারণ আরবি কোনো মাস ৩১ দিনে হয় না। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘মাস এরূপ, এরূপ ও এরূপ। অর্থাৎ ৩০ দিন। অতঃপর তিনি বলেন, এরূপ, এরূপ ও এরূপ। অর্থাৎ ঊনত্রিশ দিন। তিনি বলেন, কখনো ৩০ দিন, কখনো ২৯ দিন।’ (বোখারি ও মুসলিম)। তবে মাস ২৯ দিনের হলেও সওয়াব; কিন্তু ৩০ দিনেরই দেওয়া হয়ে থাকে। আবার ২৮ দিনেও মাস হয় না। যদি রমজানের ২৮ দিন পরেই শাওয়ালের চাঁদ উঠে যায়। বুঝতে হবে রমজানের শুরু নির্ণয়ে ভুল হয়েছে। আরো একদিনের রোজা কাজা করে নিতে হবে। রমজানের শুরু ও শেষ নির্ণয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাব গ্রহণযোগ্য নয়। কেন না, এ সংক্রান্ত হাদিসগুলোতে স্পষ্টত ‘চাঁদ দেখা’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অতএব, চোখে দেখার ওপর ভিত্তি করে চান্দ্রমাসের শুরু ও শেষ নির্ধারিত হবে, অন্য কোনোভাবে নয়। (মাজমু ফাতাওয়া ওয়া মাকালাত; শেখ আবদুল আজিজ বিন বায : ১৫/৬৮, ১২১, ১২৭)।
লেখক: শিক্ষক : জামিয়া ইবনে আব্বাস (রা.) সামান্তপুর জয়দেবপুর গাজীপুর সিটি।