ইসলাম শালীনতা, নির্মলতা, পরিচ্ছন্নতা ও পূত-পবিত্রতার ধর্ম। এই ধর্মে অবাধ যৌনতা, নগ্নতা, অশ্লীলতা, জঘন্যতা, বেহায়াপনা ও বেলেল্লাপনার কোনো স্থান নেই। ইসলাম কুৎসিত, কুরুচিপূর্ণ, অশালীন ও জঘন্য সব অপকর্ম ও কুকর্মকে হারাম ঘোষণা করেছে। দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সর্বপ্রকার নির্লজ্জতা, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনাকে নিষেধ করে দিয়েছে। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আপনি বলে দিন, আমার পালনকর্তা কেবল অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছেন যা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য।’ (সুরা আরাফ : ৩৩)। অন্য এক আয়াতে সর্বপ্রকার অশ্লীলতাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্মীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ ও অবাধ্যতা করতে বারণ করেন।’ (সুরা নাহল : ৯০)।
অশ্লীলতার কাছেও না যাওয়া : নিজে অশালীন হওয়া আভিজাত্যের প্রতীক নয়। নোংরামি সভ্যতা নয়। গুনাহের কাজ কখনো সুস্থ সভ্যতা হতে পারে না। সভ্য হতে হলে গুনাহের কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও অবাধ যৌনতা সুস্থ সভ্যতা নয়। কেননা, যদি কোনো ব্যক্তি আগুনের কাছে যায়, তাহলে তার আগুনের তাপে দগ্ধ হওয়ার ভয় থাকে। অনুরূপভাবে কোনো ব্যক্তি যদি কুয়ার কিনারায় দাঁড়ায়, তাহলে তার কুয়ার অভ্যন্তরে পতিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ঠিক তেমনিভাবে কোনো ব্যক্তি যদি অশ্লীলতার উপায় উপকরণের কাছে যায়, তাহলে তার অশ্লীলতায় লিপ্ত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। তাই মানুষ যেন অশ্লীলতা থেকে সহজে বাঁচতে পারে সেজন্য মহান আল্লাহ অশ্লীলতার উপায় উপকরণকেও বর্জন করার নির্দেশ দিয়েছেন। অশ্লীলতা, নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা ও বেলেল্লাপনা তো দূরের কথা অশ্লীলতার নিকটে যেতেও মহামহিম আল্লাহ তার বান্দাদের বারণ করে অশ্লীলতার পথ রুদ্ধ করার প্রয়াস চালিয়েছেন। অশালীনতার নিকটবর্তী না হওয়ার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘অশ্লীলতার কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য।’ (সুরা আনআম : ১৫১)।
ব্যভিচার না করা : জিনা ব্যভিচার ও ধর্ষণের বিপক্ষে ইসলামের অবস্থান। সুস্থ বিবেক ও সমাজের এটাই কামনা। স্বাভাবিক কথা, আগুনের সংস্পর্শে গেলে মোম যেমন গলে যায় ঠিক তেমনিভাবে প্রাপ্তবয়স্ক নর যদি পরনারীর কাছে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নারী যদি পর পুরুষের কাছে যায়, তা হলে তারও গলে যাওয়ার তথা আকৃষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পরনারীর প্রতি দুর্বল হওয়া এবং প্রাপ্তবয়স্ক নারী পর পুরুষের প্রতি দুর্বল হওয়া স্বাভাবিক। এজন্য তারা যদি একে অপরের কাছে অবাধে ও পর্দাহীনভাবে গমনাগমন করে, তাহলে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য মহান আল্লাহ ব্যভিচারের পথ রুদ্ধ করার নিমিত্তে পরনারীর কাছে পরপুরুষ এবং পরপুরুষের কাছে পরনারী গমন করতে নিষেধ করে দিয়েছেন। ব্যভিচার তো দূরের কথা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হতেও বারণ করেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’ (সুরা বনি ইসরাঈল : ৩২) পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করা ব্যভিচারের পথকে উন্মুক্ত করে। ব্যভিচারের ছিদ্রপথ বন্ধ করার লক্ষ্যে প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। যেসব নারী পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করে তারা বেহেশতের ঘ্রাণও পাবে না মর্মে হাদিস শরিফে হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, কাপড় পরিহিতা উলঙ্গিনী এবং পুরুষদের নিজের প্রতি আকৃষ্টকারিনী স্ত্রীলোকেরা বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না, বরং তারা বেহেশতের সুগন্ধও পাবে না। অথচ ওই সুগন্ধ পাঁচশত বছরের দূরত্ব হতেও অনুভূত হয়।’ (মুয়াত্তা ইমাম মালিক : ১৬৩৬)। জিনা ও ব্যভিচার ঈমানের শক্তিকে দুর্বল করে দেয়। পূর্ণাঙ্গ ঈমানের অধিকারী ব্যক্তি কখনো ব্যভিচারের মতো কুকর্মে লিপ্ত হতে পারে না। যখন কোনো ব্যক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তখন তার ঈমান নিতান্ত দুর্বল হয়ে যায়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যভিচারী মুমিন অবস্থায় ব্যভিচার করে না।’ (বুখারি : ২৪৭৫)। ব্যভিচারের দিকে নিয়ে যায় এমন ছোট ছোট পদক্ষেপগুলোও ব্যভিচার বলে গণ্য। ব্যভিচার করার পূর্বে ব্যভিচারকারী পুরুষ ও ব্যভিচারকারী নারী একজন আরেকজনের দিকে তাকায়। একজন অপরজনের কথা শুনে। একজন আরেকজনের সঙ্গে প্রেমালাপ করে। একজন আরেকজনকে স্পর্শ করে। একজন অপরজনের দিকে এগিয়ে যায়। একজন আরেকজনকে নিয়ে জল্পনা কল্পনা করে। এভাবে ব্যভিচারের পূর্বে ব্যভিচারের জন্য সহায়ক যে কাজগুলো করা হয় সেগুলোর সবই ব্যভিচার বলে গণ্য। হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, আদম সন্তানের উপর ব্যভিচারের যে অংশ লিখিত রয়েছে তা অবশ্যই সে প্রাপ্ত হবে। নিঃসন্দেহে দু’চোখের ব্যভিচার হলো তাকানো, দু’কানের ব্যভিচার হলো শোনা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো কথোপকথন করা, হাতের ব্যভিচার হলো শক্ত করে ধরা, পায়ের ব্যভিচার হলো হেঁটে যাওয়া, হৃদয়ের ব্যভিচার হচ্ছে কামনা-বাসনা করা। আর লজ্জাস্থান তা সত্যায়িত করে বা মিথ্যা সাব্যস্ত করে।
লেখক: শিক্ষক, জামেয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, চকবাজার ঢাকা।